অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আসাদ আলম সিয়াম- এর তিনটি কবিতা

আসাদ আলম সিয়াম

প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, ৫ এপ্রিল ২০২১ সোমবার   আপডেট: ০৮:৩৫ এএম, ৬ এপ্রিল ২০২১ মঙ্গলবার

অবগাহন

মধ্যদুপুরে শ্রাবণের ফুটন্ত পুকুরে
সরীসৃপ কিশোরী সাবলীল -
বৃষ্টি কিংবা ভেজা চুল তার
কী ভীষণ চমৎকার।

দ্যাখো, কইমাছের মতো নতুন
বৃষ্টির গানে তার কিশোরী শরীর
কেমন মাতাল হয় অনাগত মিলনের ঘ্রানে,
জলে খুঁজে ফেরে বাৎসায়নের বীজ।

যতটা সে চেনে শ্রাবণ
তারও চেয়ে বেশী চেনে
দীঘির আপামর লাজুক শালুক,
তবু তারা যেন হতভাগা ট্যান্টালাস,
আকন্ঠ বানে, শরীরে তাদের কেন জাগেনা স্পন্দন -
নাভীমূল থেকে উঠে আসা কোন সে বোধ
কেন শুধু বালিকাকে দেয় নারীর প্রস্তুতি।

কবি, তুমি তাকে বলো জলপরী,
আমি কেটে লিখি রাজহাঁস,
ঠিক অতটা কাব্যিক না বলে
তুমি ফের লেখো – মারমেইড।

অথচ দ্যাখো,
আমাদের কবিতার সব উপমা ছাড়িয়ে
তার সারাটা জীবন কেমন ঠিক ভিজে যাবে এ বর্ষণে -
দূরাগত রাতে রতিক্লান্ত সে পাশ ফিরে শুলে
কপোলের স্বেদে স্মৃতি হয়ে ফিরে যাবে আজকের জলকনা সব;
ফের মনে হবে, আবারো নামুক তেমন বৃষ্টি উথাল,
আবার আসুক সে শ্রাবণ দুপুর,
যখন গাভীন জলে থাকেনা তফাত, কিশোরী ও কইমাছে।


পর্যটন

বলতে পারো এও এক ধরণের পর্যটনই,
ধরো, সমুদ্রের সাথে আমরাও বেড়াতে গেছি সৈকতে –

কিছু ফটো তোলা হবে,
রোদ ছাতার দাম নিয়ে খানিকটা দরদাম হবে,
হয়তো কেনা হবে কিছু ঝিনুকের মালা,
হয়তো কেউ বলেও বসবে এ মালা তোমারই জন্য,
তুমিও হয়তো অবাক হয়ে তাকাবে তার চোখে,
কিংবা তার আগেই কোথায় বড় রূপচাঁদা পাওয়া যায়
সে আলোচনায় কারোই কিছু হবেনা বলা,
হয়তো আঙুল ছড়িয়ে কেউ কেউ বালির বুকে
নিজেদের নাম লিখে অপেক্ষা করবে কখন এসে ধুঁয়ে নিয়ে যাবে ক্লান্ত সব ঢেউ,
কিংবা ধরো, এতসব ঘটে ওঠবার আগেই আমরা ঠিক পেয়ে যাবো
কবিতার কিছু লাইন এবং উপমা।
অথবা ভ্রমণ এবং পর্যটন, কোনটার ব্যবহার যুতসই হয়
ভাবতে ভাবতে হেলে যাবে বেলা,
সূর্যের সাথে অস্ত যাবে লাইনে দাঁড়ানো বাকি সব কবিতার লাইন,
অস্ত যাবে অন্য সব ভ্রমণ কিংবা পর্যটন,
ঝিনুকের মালা, রোদেদের বুকে ছাতাদের চুম্বন,
ঝলসানো হয়ে মেন্যুতে ওঠার আগে পুরো এক জীবন সাঁতারের স্মৃতি।

কিংবা যতক্ষণ ফের জোয়ার না আসে
ততক্ষণ ঢেউদের ঠোঁট অভিমানে দূরে সরে রবে,
অথবা বালির বদলে আমরাই বুকে লিখে নেবো আমাদের প্রিয় সব নাম,
প্রিয় ঢেউ, ঝিনুকের মালা, কিংবা রূপচাঁদা। হয়তো অনাগত কবিতার
জন্য আমাদের অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে আরো দীর্ঘতর হবে,
বাসী হয়ে যাবে আমাদের জমানো বিরহ সব।

অথবা ধরো, প্রত্যহের জীবনে ফিরে এসে আমাদের জিন্সের ভাঁজে খুঁজে পাবো
কিছু সামুদ্রিক বালি, বোতামের সমান ঝিনুক, লবনাক্ত স্মৃতি,
কে জানে, হয়তো তাদেরই মনে হবে পুরো না-লেখা কবিতা এক,
হয়তো মনে হবে সেও ছিলো এক ধরণের পর্যটন।


অমিতাভ

বৃত্তের বাইরে যেতে নেই
সেখানে ওৎ পেতে রয় বিপদ,
রাবনের মতো ছলে বলে প্রলোভনে
সেও নিতে চায় দখল।

তবু কিছু নাগরিক বনসাই
বনবাসে গিয়ে বনকেই ভালোবেসে ফেলে,
নগরের নিরাপদ ওম ভুলে গিয়ে
বনস্পতি জীবনের লোভে
সেখানেই গড়ে তোলে
কবিতার মোহময় কুটিরশিল্প সব।

প্রাণে যে এখনো আরণ্যক
তাকে শ্বাপদের ভয় দেখিওনা।
মহুয়া-মাদল যদি ডাকে আবার
সব ছেড়ে একদিন ঠিক,
ফের ফেরারী হতে পারি,
ভুলে যেতে পারি যতো অভিশাপ,
ফিরে যেতে পারি নৈসর্গিক নির্বাসনে।

গার্হস্থ্যের সাধারণ নিয়মেই জেনো
বাস করে যুথচারী নির্বাণের সব উপকরণ,
প্রাকার, প্রাসাদে যে মাধুকরী নেই -
কাজলরেখা, সে কথা জানতে সিদ্ধার্থ হতে হয়না।