অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বাংলাদেশের ভাসমান বাগান জাতিসংঘের কৃষি ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০৯ এএম, ২ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার  

একটি ভাসমান বাগান

একটি ভাসমান বাগান

বাংলাদেশের ভাসমান বাগান ধারণাটি এখন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)'র কাছে স্বীকৃত। এবং বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। তারা বলছে, এমন ধরনের বাগান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা কমিয়ে আনতে দারুণভাবে সহায়ক। বিশেষ করে বন্যাপ্রবন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই ধরনের বাগান থেকে বড় সুবিধা পায়।

একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই ধরনের কৃষি ব্যবস্থা বন্যাপ্রবন এলাকায় গ্রামীণ ঘর-গৃহস্থলীর জন্য আয়ের উৎস হিসেবেও কাজ করে। বিশ্বের কাছে বিষয়টি নতুন হয়ে ধরা দিলেও, বাংলাদেশে এই বিশেষ কৃষি ব্যবস্থা চলে আসছে শত শত বছর ধরে। জাতিসংঘের এফএও এই ব্যবস্থাকে বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ঐতিহ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

এই ভাসমান বাগান স্থানীয় সেইসব গাছপালা-লতাপাতায় তৈরি যা সাধারণত পানিতে ভেসে থাকে। বিশেষ করে কচুরিপানা। যা পানি বাড়া কমার সঙে বাড়ে কমে। এর অন্যতম দিকটি হচ্ছে বর্ষা কালেও এখান থেকে কোনো না কোনো খাদ্য উৎপাদন হয়। বিশেষ করে বন্যার সময়গুলোতে এ ধরনের বাগান মানুষের কাছে আশীর্বাদ হয়ে ধরা দেয়। 

একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দলের করা এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি কৃষি, খাদ্য ও পরিবেশ বিষয়ক একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এমন ভাসমান বাগান কতটা টেকসই ব্যবস্থা হিসেবে বন্যা ও খড়া উভয় ক্ষেত্রেই সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও গবেষকরা এমন বাগানগুলো ব্যক্তি-পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা দিতে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে তাও বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। 

বাংলাদেশ একটি বন্যাপ্রবন দেশ। এবং বস্তুত, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা দিন দিন আরো বাড়ছে স্রেফ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে। ২০২০ সালের ভয়াবহ বন্যায় দেশের এক-তৃতীয়াংই তলিয়ে গিয়েছিলো বন্যার পানিতে। 

"জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখানে পানি যেমন অনেক বেড়ে যায়, একইভাবে পানি অনেক কমে গিয়ে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে খড়ায়ও পরিণত হয়। এ অবস্থায় গ্রামীণ চাষীদের জন্য ভাসমান বাগান একটি বিশেষ ব্যবস্থা, যা তাদের অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ায় খাদ্য সরবরাহ করে যেতে পারে," বলেছেন গবেষণা প্রতিবেদনের লেখকরা। 

এই গবেষণায় তারা বাংলাদেশের অন্তত নয়টি কৃষি পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন, যাদের এমন ভাসমান বাগান রয়েছে। গবেষণায় তারা দেখেছেন, এমন ভাসমান বাগানে খাদ্য উৎপাদনে উৎপাদন খরচও কম পড়ে। যাতে তাদের কীটনাশক, সার ইত্যাদির ব্যবহার কম পড়ে। 

একজন কৃষক গবেষকদের বলেছেন, একই পরিমান জমিতে ধানের আবাদ করলে যা আয় হতো, এমন ভাসমান খামার থেকে তারা তার চেয়ে অন্তত চারগুন বেশি অর্থ আয় করতে পারেন। 

তবে এই ধরনের কৃষিতে এখনো কোনো বিশেষ সহায়তা সরকার থেকে দেওয়া হয়না, এমনটাই দাবি কৃষকদের। এমন ভাসমান বাগান তৈরিতে যে খরচ, তাতে সরকার কিংবা বেসরকারি সংস্থা থেকে যদি সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া যায় তাতে এমন চাষ আরও উৎসাহিত হতে পারে, মত গবেষকদের।