অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ঢাকায় বসবে ২৫৮কি.মি. পাতাল রেল, কোথা থেকে কোথায়?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৮:০৮ এএম, ২৯ মার্চ ২০২১ সোমবার   আপডেট: ০৮:০৯ এএম, ২৯ মার্চ ২০২১ সোমবার

বিশ্বের বড় বড় শহরে পাতাল রেল একটি সাধারণ ব্যবস্থা। ঢাকায় সে ব্যবস্থা নেই। তবে এবার হবে। কেবল ঢাকাকে ঘিরে ২৫৮ কিলোমিটার পাতাল রেলের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। যানজটে নাজেহাল নগরবাসীর জন্য যা অনেক বড় স্বস্তির খবর। এরই মধ্য মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। তার কাজ এগিয়ে যেতে যেতে সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে সাবওয়ে নির্মাণের। রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলো মিলিয়ে মোট ১১টি সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপের একটি খসড়া এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। 

পরিকল্পনাটি দীর্ঘমেয়াদী। ৫০ বছরের এই পরিকল্পনা তিন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে চারটি প্রধানরুটে এই পাতাল রেল বিস্তৃত হবে। যার মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ১০২ কিলোমিটার। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৮৫ কিলোমিটার এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৭১ কিলোমিটার সাবওয়ে তৈরি করা হবে।   

ইংরেজি ও আকৃতির ২৯.৩৫ কিলোমিটার রুটটি কেরাণিগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প এলাকা থেকে টঙ্গি পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। যেটির কাজ সবার আগে শেষ করা হবে। এতে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে আনুমানিক ৮ বিলিয়ন ডলার। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ শুরু করে বিবিএ। স্প্যানিশ ফার্ম টিপসা (টিওয়াইপিএসএ) নামের একটি কনসর্টিয়াম এই সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ পায়। এরাই প্রাথমিক ভাবে ৯০ কিলোমিটার সাবওয়ের নকশা দেয়। পরবর্তীতে প্রকল্পটি পুনর্মূল্যায়ন করে একই ফার্ম ২৩৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নেটওয়ার্কের সম্ভাব্যতা জরিপ করে এবং ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের প্রারম্ভিক নকশা দেয়। ৩৫-মাসের একটি প্রকল্পের অধীনে ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই জরিপ সম্পন্ন হয়। 

সম্ভাব্যতা জরিপের খসড়া গত ১৫ মার্চ দাখিল করা হয়। এতেই ১১টি রুটে মোট ২৫৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা দেওয়া হয়। সাবওয়েগুলো মাটির উপরিতল থেকে ৩০ মিটার গভীরে স্থাপন করা হবে। টানেল বোরিং মেশিন ব্যবহার করে কাট অ্যান্ড কভার মেথডে এর নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, একবার নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলে রাজধানীর ৮০ লাখ বাসিন্দা প্রতিদিন এই সাবওয়ে ব্যবহার করে তাদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। এতে সড়কের ওপর চাপ কমবে। 

সরকার এরই মধ্যে বাস্তবায়নাধীন রেখেছে রাজধানী ঢাকায় মাটির নিচ ও উপর দিয়ে মোট ১২৮ কিলোমিটারের মেট্রোরেল প্রকল্প। যা ২০৩০ সাল নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখেই নির্মিত হবে সাবওয়েগুলো। অনেক স্থানেই মেট্রোরেলের লাইনের সমান্তরালে এই পাতাল রেললাইন এগিয়ে নেওয়া হবে। 

২৯.৩৫ কিলোমিটারের যে প্রথম রুটটি তৈরি হবে সেটি কেরাণিগঞ্জের ঝিলমিল থেকে তেঘরিয়াবাজার হয়ে সদরঘাট-গুলিস্তান-কাকরাইল-বিজিপ্রেস-রজনীগন্ধা বাজার-কালসি-উত্তরা সেক্টর ১৭-উত্তরা সেক্টর ১৪ হয়ে টঙ্গি যাবে।

প্রথম পর্যায়ের অন্য তিনটি রুট হচ্ছে:

- গাবতলি থেকে বেলাবো পর্যন্ত ২০.১৮ কিলোমিটার
- কেরাণিগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ১৯.৩১ কিলোমিটার
- জাহাঙ্গীরনগর উত্তরা সেক্টর-১৩ থেকে বসুন্ধরা দক্ষিণ ও ফতুল্লা স্টেশন হয়ে নারায়ণগঞ্জ ৩৪.৯৮ কিলোমিটার।  

সম্ভাব্যতা জরিপের ৬৫ শতাংশ কাজ এরকই মধ্যে শেষ হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী অক্টোবরের মধ্যে হাতে পাবে বলে ধারণা করছে বিবিএ কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে এই প্রকল্পের অর্থ যোগানের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আর বিবিএ বলছে, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এই প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।