অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

পূর্ণাঙ্গতায়ই স্বাধীনতা… আজ আমরা পূর্ণ পঞ্চাশে

মাহমুদ মেনন, সম্পাদক, অপরাজেয় বাংলা

প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ২৬ মার্চ ২০২১ শুক্রবার  

প্রষ্ফুটিত সূর্যমুখী

প্রষ্ফুটিত সূর্যমুখী

যে ফুলটি আজ ফুটলো সকালে, সৌরভ ছড়ালো। সূর্যালোকে তা যখন ঝলমলে হয়ে উঠলো। বিলিয়ে দিলো অপার সৌন্দর্য্য… ফুলটির এই পূর্ণাঙ্গতাই আমার স্বাধীনতা। আমাদের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে এমন অনেক কিছুই আজ তার পূর্ণ রূপ পেয়েছে। আর তাতেই পূর্ণ হয়ে উঠছে দেশ।  

এই যে পদ্মাসেতু। যা সেতুবন্ধন রচনা করেছে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাথে। যা তার পূর্ণ কাঠামোয় দেদীপ্যমান। সেটাই স্বাধীনতার পূর্ণতা।  

এই যে রাজধানীর বুক জুড়ে উড়ালসেতুর পর হচ্ছে মেট্রোরেল, এভিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এগুলোও বলে দেয়ে আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছে। আমরা যখন টানেলের যুগে প্রবেশ করি, আমাদের যখন পরমানু বিদ্যুতের প্রকল্প চলমান হয়, আমরা যখন দেখি দেশের মহাসড়কগুলো প্রশস্ত প্রস্থে নির্মাণাধীন, তখনই মনে হয় আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণ।

আমরা দেখি জাতিসংঘের সহস্রাব্দ লক্ষমাত্রার অর্জনে আমরা শ্রেষ্ঠদেরে তালিকায়। আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনের পথে অন্যদের চেয়ে আগুয়ান, তখন আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণাঙ্গতা পায়।

আমাদের মাঠজুড়ে কৃষকের ফলানো সবুজ সব্জি, সোনালী ধান, আমাদের পুকুরে পুকুরে রূপোলি মাছের লাফালাফি আমাদের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতার পথে এগিয়ে যাওয়া এসবই স্বাধীনতার পূর্ণতা। 

এক দশক আগেও যে বাংলাদেশকে যেখানে দারিদ্র্য আর অনুন্নয়নের উদাহরণ হিসেবে দেখানো হতো, আজ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা সেই বাংলাদেশকেই দারিদ্র্য-জয় এবং উন্নয়নের আদর্শ মডেল হিসেবে তুলে ধরছেন। এটাই আমাদের স্বাধীনতার পূর্ণতা লাভ।

আজ আমদের মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার, দারিদ্র্যের হার কমে ২০.৫ শতাংশে, আমাদের জিডিপি’র আকার ২৮ লাখ কোটি টাকা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। এও আমাদের স্বাধীনতারই অর্জন বলা চলে। তবে আমাদের যেতে হবে আরও বহুদুর।  

আমাদের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৬ বছরে দাঁড়িয়েছে। শিশু মৃত্যুহার হার হাজারে ২৮ এবং মাতৃমৃত্যু লাখে ১৬৫ জন। অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থারই উন্নতি নির্দেশ করে এই পরিসংখ্যান। 

সরকার চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পেরেছে সামাজিক নিরাপত্তায়। দানাদার শস্যের উৎপাদন ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। এইসব পূর্ণতায় আমাদের স্বাধীনতা নিহিত। 

এসব অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে এসে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছি জাতিসংঘের কাছ থেকে। সে আমাদের এক বিপুল অর্জন। 

আমরা মনে করি এসব অর্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের সেই অর্থনৈতিক মুক্তিই ঘটেছে, যার কথা জাতির জনক বলেছিলেন, দেশ মুক্ত হয়েছে, এখন প্রয়োজন অর্থনৈতিক মুক্তি। যার পথে বাংলাদেশ হাঁটছে। পথ হারায়নি বাংলাদেশ। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণ সেই মুক্তির পথই রচনা করে। 

তবে শত অর্জনের পরেও থেকে গেছে কিছু বিষয়। যার থেকে মুক্তি প্রয়োজন। থেকে গেছে বলার চেয়েও বলতে হবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে, এবং বেড়েই চলেছে। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গড়তে চেয়েছিলেন, যেখানে আমরা যেতে পারিনি। ধর্মের নামে এখানে মোল্লাদের দৌরাত্ম কমেনি। এদের থামাতে হবে। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টানের দেশ এই বাংলাদেশ। মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠ হলেও স্বাধীন দেশে অন্য ধর্মের মানুষেরও রয়েছে সমান অধিকার তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে স্বাধীনতা পূর্ণতা পাবেনা। ঘুষ-দূর্নীতি, সংঘাত-সহিংসতা একদম ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে নতুন করে শপথ নেওয়ার কথা বলছেন। একটি পূর্ণ পুণ্যতায় ভরা বাংলাদেশের জন্য সেটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।