অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ক্যাচ মিসের মহড়ায় ম্যাচ হারার আক্ষেপ

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০২:৪৪ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার   আপডেট: ০৬:০৬ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ওয়ানডে দেখে যে কারও মাথাতেই আসবে ক্রিকেটের সেই অতি ব্যবহৃত বুলি ‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’। ২৭১ রান করে নিজেদের কাজটুকু সেরে রেখেছিলেন ব্যাটসম্যানরা। বোলাররাও ভালই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুই ক্যাচ মিস করে ম্যাচ হারার আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে টাইগারদের। 

৫৩ রানে তিন উইকেট নেয়ার পর মাঠ আঁকড়ে পড়ে থাকেন টম লাথাম ও ডেভন কনওয়ে। দু’জনের ১১৩ রানের জুটিতে ম্যাচ অনেকটাই চলে যায় কিউইদের দখলে। কিন্তু দারুণ এক থ্রোতে কনওয়েকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেন তামিম ইকবাল। 

তাসকিনের করা ৩৬ তম ওভারে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন মাত্রই ব্যাটিংয়ে নামা জিমি নিশাম। কিন্তু সহজ ক্যাচ মুঠোবন্দি করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। এমন ক্যাচ মিস করে ২০১৯ বিশ্বকাপ ম্যাচের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এই উইকেটরক্ষক। সেদিন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি সহজ রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করেন মুশফিক। সেটি আউট হলে হয়তো পাল্টে যেতো ম্যাচের ফল, বাংলাদেশেও জোর দাবি জানাতে পারতো সেমিফাইনাল খেলার।

মুশফিক ক্যাচ মিস করার পরের ওভারেই বল হাওয়ায় ভাসান টম লাথাম। নিজের করা বলে সে ক্যাচটি ধরতে পারেননি শেখ মেহেদি। সেই সাথে হাতছাড়া হয় ম্যাচও। 

শুধু ক্যাচই নয়, শেষ ১৫ ওভারে ফিল্ডিং মিস থেকেই অন্তত ১৫ রান পেয়েছে ব্লাক ক্যাপসরা। টানটান মুহুর্তে এমন বাজে ফিল্ডিংয়েই খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। প্রথমবারের মতো নিউজ্যালেন্ডের মাাটিতে জয়ের আশা জাগিয়েও ৫ উইকেটে হেরেছে ম্যাচ। সে সাথে নিশ্চিত হয়েছে সিরিজ পরাজয়ও। 

২৭২ রানের লক্ষ তাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা খায় কিউইরা। ২৮ রানেই মোস্তাফিজের বলে সাজঘরে ফেরেন গত ম্যাচে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়া মার্টিন গাপটিল। পরে নিজের প্রথম দুই ওভারেই জোড়া উইকেট তুলে নেন শেখ মেহেদি। হ্যানরি নিকোলস ও উইল ইয়ং দুজনই ফেরেন বোল্ড হয়ে। গাপটিলের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান ও নিকোলসের সংগ্রহ ১৩।  

৫৩ রানে তিন উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন কনওয়ে ও লাথাম। দুই উইকেটরক্ষক মিলে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে আনে স্বাগতিকরা। ৭২ রান করে কনওয়ে ফিরে গেলে প্রথমে জিমি নিশাম ও পরে ড্যারেল মিচেলকে নিয়ে দলকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন টম লাথাম। কেন উইলিয়ামসনের বদল নেতৃত্ব পাওয়া লাথাম অপরাজিত ছিলেন ১১০ রান করে। তার ১০৮ বলে করা ইনিংসে বাউন্ডারি ১০টি। শেষ দিকে নিশামকে মোস্তাফিজ ফেরালেও ম্যাচের ফলাফলে তা কোন পরিবর্তন আনেনি। 

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই হারায় লিটন দাসের উইকেট। ম্যাট হেনরির বলে শর্ট ফাইন লেগে উইল ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দেন এই ওপেনার। দলীয় ৪ রানে ফেরেন লিটন। 

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সৌম্য সরকারকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যান তামিম ইকবাল। পাওয়ার প্লে দেখেশুনে খেলে আনেন ২৬ রান। তারমাঝে নবম ওভারে জিমি নিশামের বলেই আসে ১২।

পাওয়ার প্লে শেষ হতেই হাত খুলে ব্যাট চালাতে থাকেন সৌম্য ও তামিম। পরের ১০ ওভারেই আসে ৫৮ রান। দলীয় স্কোর যখন ৮৪, মিচেল সান্টেনারের পাতা ফাঁদে ধরা দেন সৌম্য। ২১ তম ওভারের প্রথম বলেই সামনে এসে ডিফেন্স করতে গেলেও সান্টেনার বলটি করেন লেগ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে। বল নিয়েই টম লাথাম উইকেট ভেঙে দেয়ায় সাজঘরের পথ ধরেন এই বাঁহাতি। সৌম্যের ব্যাট থেকে আসে ৪৭ বলে ৩২ রান। 

দ্বিতীয় উইকেট জুটির সঙ্গী হারালেও থেমে থাকেননি তামিম। ব্যাটে-বলে মিলতে থাকায় রান যোগ করতে থাকেন স্কোরবোর্ডে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে তুলে নেন পঞ্চাশ তম ফিফটি। ৪৮ ফিফটি নিয়ে যে তালিকায় ঢুকার অপেক্ষায় আছেন সাকিব আল হাসান। তৃতীয় স্থানে থাকা মুশফিক আছেন খানিকটা দূরে। এই উইকেটকিপারের অর্ধশতক সংখ্যা ৩৯টি। 

মাঠে নেমে মুশফিক যখন খাপ খাওয়াতে সময় নিচ্ছেন তখন দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন তামিম। ট্রেন্ট বোল্টের বাউন্সে মিড উইকেট দিয়ে তার বাউন্ডারি দেখে মুগ্ধ হয়নি এমন দর্শক কমই আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ভর করায় ইনিংস বেশি লম্বা করতে পারেননি কাপ্তান। জিমি নিশামের বল ডিফেন্স করেই দৌড় দেন মুশফিক। কিন্তু তামিম পৌঁছানোর আগেই ফুটবলের স্কিল দেখিয়ে স্ট্যাম্প ভাঙেন বোলার। ফলে ৭৮ রানেই তামিমের ইনিংস। ১০৮ বলে গড়া তার ইনিংসে ছিল ১১টি বাউন্ডারি। 

চতুর্থ উইকেটে মিঠুনকে নিয়ে স্কোরবোর্ড এগিয়ে নিয়ে যান মুশফিক। তামিম ফিরলেও পরের ১০ ওভারে এ দুজন যোগ করেন ৫১ রান। শেষ দিকে যখন ঝড় তুলবেন তখনই ফিরে যান মুশফিক। সান্টেনারের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই হ্যানরি নিকোলসের হাতে ক্যাচ দেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তার ব্যাট থেকে আসে ৫৯ বলে ৩৪ রান। 

মুশফিক ফিরলেও শেষ ১০ ওভারে কাঙ্খিত রান এনে দেন মো. মিঠুন। এসময় টাইগাররা নেন ৮৮ রান। দলকে ২৭১ রানে সংগ্রহ এনে দেয়ার পাশাপাশি নিজের ওয়ানডের সর্বোচ্চ রান তুলে নেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ৫৭ বলে ৭৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে। 

স্কোরকার্ড:
বাংলাদেশ ২৭১-৬: তামিম ৭৮, মিঠুন ৭৩*, মুশফিক ৩৪, সৌম্য ৩২, মিচেল সান্টেনার ৫১-২। 

নিউজিল্যান্ড ২৭৫-৫: লাথাম ১১০*, কনওয়ে ৭২, নিশাম ৩০, শেখ মেহেদি ৪২-২, মোস্তাফিজ ৬২-২।