অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

২১ ট্রাস্টি একচ্ছত্র মালিক বনে গেছেন বিইউএফটির!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৮ পিএম, ৯ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার  

বিইউএফটি

বিইউএফটি

দেশের তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের টাকায় প্রতিষ্ঠিত বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন টেকনোলজি (বিইউএফটি) পরিচালনা তার প্রতিষ্ঠাকালীন সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের থাকার কথা থাকলেও তাদের অর্থে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি এখন একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দখলে! 

এরা সকলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রভাবশালী সদস্য। সূত্র জানিয়েছে, এরা সংখ্যায় ২১ জন এবং পদে ট্রাস্টি। যারা এখন এর একচ্ছত্র মালিকে পরিণত হয়েছে। অথচ সাধারণ সদস্যরা জানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা বিজিএমইএর হাতে রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্পদের পরিমাণ কয়েক শ কোটি টাকা দাঁড়ালে স্বার্থান্বেষী দলটি ট্রাস্টি হিসাবে মালিকানা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে একটি মহৎ উদ্দেশ্য, যা এখন ব্যহত হচ্ছে বলেও দাবি অনেকের। 

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাতের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এ খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে তার তাগিদ থেকেই ১৯৯৯ সালে  বিজিএমইএর তৎকালীন সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা এ খাতের জন্য একটি ইনস্টিটিউট গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। সে বছর উত্তরাতে একটি ভবনের ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ইনস্টিটিউটটি চালু করা হয়। প্রথম দিকে বিভিন্ন কারাখানা মালিক এ প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের মেশিনপত্র সরবরাহ করেন। পোশাক খাতের বড় উদ্যোক্তা হারুন অর রশিদকে এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। স্টকল্যান্ডের একজন ফ্যাশন ডিজাইনার এ প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিইউএফটি প্রতিষ্ঠার সময় বলা হয়েছিল—বিজিএমইএতে যখন যারা নেতৃত্বে আসবেন তারাই এ প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী মহলটি এ সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে নিজেরাই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হয়ে যান। 

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাওয়া তথ্য মতে, ২০১১ সালে বিজিএমইএকে না জানিয়ে নয় জন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হন। এরা হচ্ছেন—মুজাফফর উদ্দিন সিদ্দিক (চেয়ারম্যান), আব্দুস সালম মুর্শেদী, টিপু মুন্সি, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), ফারুক হাসান, সিদ্দিকুর রহমান, এস এম মান্নান (কচি) ও রিয়াজ-বিন -মাহমুদ। পরবর্তীকালে ট্রাস্টি বোর্ডে আরো ১২ জনকে যুক্ত করা হয়। এরা হলেন- সালাহউদ্দিন আহমেদ, মো. আতিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাসির, কুতুবুদ্দিন আহমেদ, আরশাদ জামাল (দিপু), খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, মশিউল আযম (সজল), রফিকুল ইসলাম, মো. মহিদুল ইসলাম খান, মো. সাজ্জাদুর রহমান মৃধা, মো. জাকির হোসেন ও আবদুল্লাহ হিল রাকিব। বিইউএফটি পরিচালনায় এদের সমন্বয়ে যে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে তা সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট-১৮৬০ অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করে নেওয়া হয়। যা প্রতিষ্ঠাকালীন সিদ্ধান্তের পরিপন্থি।

বিজিএমইএর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে যখন যারা আসবেন তারা ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হবেন। অথচ বাস্তবে উল্লিখিত ২১ জন ট্রাস্টি নিজেরাই বিশ্ববিদ্যালয়টির একচ্ছত্র মালিক বনে গেছেন। যার ফলে বিইউএফটিতে এখন সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএর মালিকানার কোনো অস্তিত্ব নেই। মালিক হয়ে গেছেন এর ২১ জন প্রভাবশালী সদস্য। 

সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্টরা বিইউএফটির আয়-ব্যয় কিংবা অন্যান্য বিষয়াদির বিষয়ে বিজিএমইএ-কে অবহিতও করছে না।

এ বিষয়ে ২০১৯ সালে বিজিএমইএর তৎকালীন সেক্রেটারি এ কে এম ফজলুর রহমান বিইউএফটির রেজিস্ট্রারের কাছে একটি চিঠি দেন। এতে তিনি বিইউএফটির মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন, ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে বিইউএফটির চুক্তির কপি এবং বিইউএফটি ট্রাস্ট্রের সদস্যদের নামের তালিকা জানতে চান। 

অভিযোগ রয়েছে, সে তথ্য দেওয়া হয়নি। এমনকি ট্রাস্ট্রি বোর্ডের একজন সদস্য বিজিএমইএ কর্মকর্তাদের দেখে নেওযার হুমকি দেন।

সাধারণ সদস্যদের চাঁদার টাকা দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছিল। এত দিন সদস্যরা নিজেদের এ প্রতিষ্ঠানের মালিকই ভাবতেন। কিন্তু এখন তাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে এর মালিক স্রেফ ২১ জন। 

ট্রাস্ট্রি বোর্ডের অনেক সদস্য এ ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে তাদের নিজেদের অবস্থার উন্নতি করেছেন। কিন্তু সাধারণ সদস্যদের কথা একবারও ভাবেননি, এমনটাই অভিযোগ সাধারণ সদস্যদের। 

একটি হিসাবে দেখানো হয়েছে, বর্তমানে সারাদেশে বিজিএমইএর সদস্য সংখ্যা ২ হাজার ৩১৪ জন। কারখানার মান অনুসারে প্রতি কারখানা বিজএমইএকে বছরে পাঁচ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেয়। মূলত এ চাঁদার টাকা দিয়েই বিইউএফটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে বিইউএফটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মুজাফফর উদ্দিন সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য এস এম মান্নান (কচি) একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, ‘ইউজিসির নিয়মনীতি অনুযায়ী বিইউএফটি পরিচালিত হয়। এটি কারো কোন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান নয়।’ 

বিইউএফটি দখল করা হয়েছে, এটি অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়, মত এসএম মান্নান কচির।

বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদের একজন কর্মকর্তা স্পষ্ট করেই বলেছে বিইউএফটি'র মালিকানা এখন বিজিএমইএর হাতে নেই। এমনকি এ প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকাণ্ড তাদের সঙ্গে শেয়ার করা হয় না।

তুরাগের নিশাতনগরে নিজস্ব ভবনে পরিচালিত হচ্ছে বিইউএফটির কার্যক্রম। এখানে ফ্যাশন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিবিএ, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স-এর ওপর ব্যাচেলর ডিগ্রি দেওয়া হয়। এছাড়া ছয় মাস, চার মাস এবং তিন মাসের বিভিন্ন শর্ট কোর্সের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।