অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

হেয়ার ক্যাপ কারখানায় কাজ করে ৩ শতাধিক গ্রামীণ নারী স্বচ্ছলতায়

সোহেল রানা, হিলি, দিনাজপুর

প্রকাশিত: ১১:৪৫ এএম, ৬ মার্চ ২০২১ শনিবার   আপডেট: ১১:৫৩ এএম, ৬ মার্চ ২০২১ শনিবার

হিলির হেয়ারক্যাপ কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকরা

হিলির হেয়ারক্যাপ কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকরা

সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় তেমন মিল-কারখানা নেই হিলিসহ পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে। আর কাজের তেমন সুনির্দিষ্ট সুযোগ না থাকায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করে কোনো মতে সংসার চালাতেন পরিবারের পুরুষরা। আর বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাতো গ্রামীণ নারীদের। কিন্তু এখন আর তেমনটা নেই। দারিদ্র কাটিয়ে সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে এখন নারীরাও কাজ করছেন।

সীমান্ত ঘেষাঁ হিলি-হাকিমপুর উপজেলা থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্ব দিকে মতিহারা গ্রামে গড়ে ওঠা কাজের সুযোগটি বেশ ভিন্নরকম। এখানে গড়ে উঠেছে হেয়ার ক্যাপের কারখানা। আজীবন ঘরের কাজে নিয়োজিত সীমান্তের গ্রামীণ নারীরা এখন রোজগার করছেন হেয়ার ক্যাপের কারখানায় শ্রম দিয়ে। আধুনিক নারীদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদার এই হেয়ারক্যাপ বানিয়ে চলেছেন গ্রামীণ সাধারণ নারীরা।

চুল দিয়ে মাথার ভিন্নধর্মী ক্যাপ বানিয়ে শিল্প সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছেন তারা। তা বিদেশে রপ্তানি হয়ে আসছে বৈদিশিক মুদ্রাও। এরই মধ্যে অন্তত ৩০০ নারী এই কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। এতে করে পরিবার গুলোর যেমন স্বচ্ছলতা ফিরেছে, তেমনি রপ্তানির সুযোগ গড়ে উঠছে নতুন এই শিল্পের।

"আমাদের এলাকাতে নারীদের জন্য কাজ করে উপার্জন করার কোন সুযোগ ছিলো না। সম্প্রতি বাড়ির পাশে একটি হেয়ার ক্যাপের কারখানা হয়েছে। সেখানে আমরা কাজ করতেছি। সংসারের কাজের পাশাপাশি এরকম কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমরা খুশি।বাড়িও কাজ হচ্ছে আবার টাকা পাচ্ছি," বলছিলেন কারখানার এক শ্রমিক আনেছা বেগম।

অপর শ্রমিক রেজিনার কথায়, স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে কষ্টে সংসার চলতো তার।কারন সংসারের একমাত্র উপার্জন করতেন তার স্বামী। এখন রোজিনা নিজেই হেয়ার ক্যাপ কারখানায় কাজ করেন, টাকা উপার্জন করেন। দুজনের আয়ে তাদের সংসার এখন ভালো চলছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাও ভালোভাবে করাতে পারছেন রোজিনা।

হেয়ার ক্যাপের কারখানায় কাজ করেন সুমাইয়া নামের এক স্কুল ছাত্রীও। তিনি বলেন, করোনায় স্কুল কলেজ বন্ধ ছিলো। বাড়িতে বসে সময় কাটানো ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। পাশের বাড়ি আন্টি থেকে এই হেয়ার ক্যাপের কারখানার কথা শুনে আমি এসে কাজ শুরু করি। প্রথমের দিকে একটু খারাপ লাগতো এখন এই কাজটা করতে আমাকে বেশ ভালো লাগছে। কারন কাজ করে এখান থেকে যে টাকা পাচ্ছি সেখান থেকে বাড়িতে কিছু টাকা দিয়ে বাবা-মাকে সহযোগিতা করতে পারছি, নিজের চাহিদা মিটানো পাশাপাশি আমার সময়টাও কাটাতে পারছি।

কথা হয় কারখানাটিতে কর্মরত আরো কয়েকজন নারীকর্মীর সাথে। তারা বলেন, বাড়িতে সকালে সংসারের কাজ শেষ করে কারখানায় গিয়ে কাজে যোগ দিতে পারছেন। কাজের পরিবেশ ভালো, একসাথে অনেকেই কাজ করছেন, প্রায় সকলেই নারী। কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে এই নারীরা প্রতিমাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় করছেন। প্রথমদিকে মজুরী কিছুটা কম হলেও সামনে মাসে বাড়ানো আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ, জানালেন নারী শ্রমিকরা।

কারখানার সুপারভাইজার মলিহা জানালেন, কারখানায় তারা পাঁচজন নারী সুপারভাইজার রয়েছেন। কারখানাতে প্রথমদিকে যারা এসে যোগ দেন তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে কাজ শেখানোর দায়িত্বও তাদের। কাজ শেখানোর পাশাপাশি তাদের কাজ দেখাশোনা এবং কাজ শেষ হলে তাদের থেকে কাজ বুঝে নেয়াও সুপারভাইজারদের দায়িত্ব।

কারখানার মালিক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার হেয়ার ক্যাপ কারখানায় তিন শতাধিক নারী শ্রমিক মনোরম পরিবেশে কাজ করছে। বহি-বিশ্বের এই ক্যাপের চাহিদা অনেক। তাই আমি আরো কয়েকটি কারখানা চালুর জন্য কাজ করছি সেগুলো চালূ হলে তিন হাজার নারী শ্রমিকের কাজ করা সুযোগ হবে। এই কারখানাতে উৎপাদিত হেয়ার ক্যাপ গুলো চীনে রপ্তানি করছেন বলে জানান তরিকুল।

দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, অবহেলিত এই এলাকাকে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের স্বালম্বী করে তুলতে বিভিন্ন প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় হিলি স্থলবন্দর, হিলি আরনু জুট মিলে বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। আমাদের এলাকায় একজন উদ্দ্যেক্ততা হেয়ার ক্যাপের কারখানা করেছে সেখানে অনেক নারীর কর্মসংস্থানে সুযোগ হয়েছে। যারা আমার এলাকায় এধরনের কারখানা করতে চান এমন উদ্যোক্তাদের সবধরণের সহযোগিতা দেওয়া হবে।