অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

পরিবেশ দুষণকারী কয়লা প্রকল্পে থাকছে না বাংলাদেশ

বিশেষ সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১০:৫৯ এএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার  

কয়লা-বিদ্যুত প্রকল্প বাতিল বাংলাদেশের

কয়লা-বিদ্যুত প্রকল্প বাতিল বাংলাদেশের

নয়টি নতুন কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প নেওয়ার প্রস্তাব বাতিল করেছে সরকার। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় পরিবেশ দূষণকারী এমন প্রকল্প আর হাতে নিতে চায়না সরকার। 

এছাড়া আমদানিকৃত কয়লার দাম বেড়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা পরিবেশ দূষণকারী জিবাস্মজ্বালানিতে বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমানের বরাতে খবরে বলা হয়েছে, নয়টি কয়লা-চালিত বিদ্যুত প্রকল্প তারা বাতিল করেছেন। এগুলো থেকে মোট ৭ হাজার ৪৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারতো। 

বিশ্লেষকদের বরাতে খবরগুলোতে বলা হয়েছে কয়েকটি বিষয় এই সিদ্ধান্তের পিছনে ভূমিকা রেখেছে। আমদানিকৃত কয়লার উচ্চমূল্য থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনীহা রয়েছে এসব কারণের মধ্যে। এই গ্রীস্মে সরকার দেশের বিদ্যুৎখাতের মাস্টার প্ল্যান প্রকাশ করতে যাচ্ছে- তাতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে। 

তবে বাংলাদেশ এরই মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম, সে কারণে পরিবেশ দূষণকারী পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা এখন আর ভাবছে না। 

একটি তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ তার বিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট সক্ষমতার মাত্র ৪০ শতাংশ ব্যবহার করেছে। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিলো ৪৩ শতাংশ। 

বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোকে নিয়মিত ভর্তুকি দিয়ে যেতে হয় সরকারের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে। এ অবস্থায় এলএনজি ও কয়লা আমদানি যতই বাড়বে বিদ্যুত উৎপাদনের খরচও তত বাড়তে থাকবে, এবং তাতে সাধারণ গ্রাহকের উপর চাপ তৈরি হবে, এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। 

বাংলাদেশ কয়লা প্রকল্প বাতিলের পেছনে আরও একটি কারণ দেশের উন্নয়নে অর্থ যোগানদাতাদের শর্ত। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা কয়লা খাতে অর্থায়ন করবে না।  আন্তর্জাতিক চাপে, এতদাঞ্চলে প্রধানতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপান ও কোরিয়াও তাদের কয়লা প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করেছে। 

দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তারা বহির্বিশ্বে কয়লা প্রকল্পে আর কোনো বিনিয়োগ করবে না। জাপানো বলেছে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কয়লা প্রকল্পে আর বিনিয়োগ নয়। পরিবেশবাদীদের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে এই দুটি দেশের উপরই।

বিশ্বের ৪৮ দেশ নিয়ে গঠিত ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি দেশ বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্ত ওই ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  

বাংলাদেশ তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে, উন্নয়নশীল বিশ্বে কয়লা-চালিত বিদ্যুতের অবসানে বড় ভূমিকা রাখা হবে এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদরা। আর এক সঙ্গে নয়টি প্রকল্প বাতিল করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদাহরণও সৃষ্টি করলো বাংলাদেশ।