অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কাতারে ১০ বছরে ১০১৮ বাংলাদেশির মৃত্যু, দ. এশিয়ার ৬৫০০

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৬:০৩ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার   আপডেট: ০৬:১৯ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার

কাতারে নতুন নগরী গড়ে তুলছে অভিবাসী শ্রমিক

কাতারে নতুন নগরী গড়ে তুলছে অভিবাসী শ্রমিক

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রিলংকার ৬,৫০০ প্রবাসী শ্রমিক গত ১০ বছরে মৃত্যুবররণ করেছে কাতারে। ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর‌্যন্ত প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেবছরই কাতার কিনে নেয় ২০২২ এর ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের ডিল। দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে এই সময়ে স্রেফ বিশ্বকাপ ফুটবলের স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজে নিয়োজিত অভিবাসী শ্রমিকই মারা গেছে ৩৭ জন।
 
খবরে বলা হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রিলংকা থেকে পাওয়া তথ্যমতে ২০১১-২০২০ পর‌্যন্ত এই চার দেশের মোট ৫,৯২৭ জনের মৃত্যু হয়। আর পাকিস্তান থেকে পাওয়া অপর তথ্যে ২০১০ থেকে ২০২০ পর‌্যন্ত সময়ে এই দেশ থেকে কাতারে যাওয়ার শ্রমিকদের মধ্যে ৮২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশি- ১,০১৮ জন
ভারতীয়- ২৭১১ জন
নেপালী- ১৬৪১ জন
পাকিস্তানি- ৮২৪ জন
শ্রিলংকান- ৫৫৭ জন

সব মিলিয়ে কাতারে অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। কারণ এই হিসাবে দেশেটিতে সবচেয়ে বড় অভিাসনকারী দেশ ফিলিপাইন ও কেনিয়ার হিসাব ধরা হয়নি। আর মোট হিসাবে ২০২০ সালের শেষের দিকের কয়েকটি মাসের পরিসংখ্যানও এতে বাদ পড়েছে।

২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে কাতারে ব্যাপক নির্মাণযজ্ঞ চলছে। সাতটি নতুন স্টেডিয়ামের পাশাপাশি কয়েক ডজন বড় বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি নতুন বিমানবন্দর, সড়ক, গণপরিবহন ব্যবস্থা, হোটেল ও সম্পূর্ণ নতুন একটি নগরী। যেখানে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২ এর ফাইনাল খেলা।

দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, কাতার কর্তৃপক্ষ মূলত তাদের দেশে যাওয়া ২০ লাখ অভিবাসী শ্রমিককে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ।

গবেষণা দেখছে, মৃত্দের অধিকাংশই যুবশ্রেণির। তবে একেকটি মৃত্যু মানেই যে স্রেফ একজনের প্রাণহানি তা নয়, বরং তাদের দেশে ফেলে যাওয়া একেকটি পরিবারের কান্না। পথে বসে যাওয়া। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারগুলো তাদের প্রধান আয়ের উৎসকেই হারিয়ে ফেলে।  

মৃত্যুর কারণগুলো খুঁজতে গিয়ে কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ মিলেছে। উঁচু থেকে পড়ে যাওয়া, গলায় ফাঁস লেগে যাওয়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনা এসবতো রয়েছেই। আবার কিছু কিছু মৃত্যুর কারণ উদঘাটন সম্ভব হয়নি স্রেফ লাশ পচে-গলে যাওয়ার কারণে।

তথাকথিত ’প্রাকৃতিক মৃত্যুর’ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে তার পেছনে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদিই বেশি। যেগুলোর পেছনে কোনও না কোনও কারণে কর্মপরিবেশই দায়ী। পরিসংখ্যান মতে ভারতীয় বাংলাদেশি ও নেপালীদের মৃত্যুর মধ্যে ৬৯ শতাংশেরই স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। তবে এসব মৃত্যুতে যেহেতু ময়নাতদন্ত হয় না, সেহেতু মৃত্যুর প্রকৃত ব্যাখ্যাও মেলে না।  

২০১৯ সালে কাতারে প্রচণ্ড গরমে অনেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার বরাতে খবরে বলা হয়েছে, এই সময়ে বাইরে কাজ করতে গিয়ে গরমে কাবু হয়ে পড়ে অনেক শ্রমিক। ২০১৪ সালে কাতার সরকার অবশ্য হঠাৎ মৃত্যুতে ময়নাতদন্তের সুযোগ রেখে আইন সংশোধন করে। তবে এ পর‌্যন্ত একটি্ও এমন ময়নাতদন্ত হয়নি বলেই খবরে বলা হয়েছে। 

দ্য গার্ডিয়ানের জন্য রিপোর্টটি তৈরিতে যৌথভাবে কাজ করেন পেটে প্যাটিসন, নিয়াম ম্যাকইন্টর, ইসলামাবাদ থেকে ইমরান মুখতার, বেঙ্গালুরু থেকে নিখিল ইয়াপেন, ঢাকা থেকে ওয়াসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, কাঠমান্ডু থেকে উদোয়াব ভট্টরাই এবং কলম্বো থেকে অন্য পিয়ারি।