অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ক্যাম্পস`র একুশে মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা পেলো সহাস্রাধিক রোগী

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৬ এএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সোমবার  

এক হাজারের বেশি চিকিৎসাবঞ্চিত রোগীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ঔষধ সরবরাহ করেছে স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যসেবা দানকারী সংস্থা কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ মেডিকেল ক্যাম্প ফেলে দেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাজধানীর বড় বড় চিকিৎসকদের নিয়ে এই চিকিৎসাসেবা দেওয়ব হয়েছে। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যতিক্রমী আয়োজনটি গত ১৬ বছর ধরে নিয়মিত করে আসছে ক্যাম্পস। 

সংস্থাটির সহায়তায় এবছর টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতিবান্ধা গ্রামের তালিমঘর প্রাঙ্গণে 'ফ্রি মেডিকেলক্যাম্প' ফেলা হয়। যার মাধ্যমে অসহায় রোগীদের দিনভর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। 

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, এই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে থেকে টাঙ্গাইল ও এর পাশ্ববর্তী অঞ্চলের দরিদ্র গ্রামবাসীকে সেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিলো- রোগনির্ণয়ের জন্য রক্ত, প্রস্রাবসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া। 

২১শে ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা আন্দোলনের দিন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে  বিশেষজ্ঞসহ ২০ জন চিকিৎসক দিনব্যাপী রোগী দেখেন ও ব্যবস্থাপত্র দেন। ক্যাম্পস থেকে তাদের বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ দেওয়া হয়। 

এছাড়াও দিনব্যাপী অন্যান্য কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, 'কিডনি সুস্থ রাখার উপায়' শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

আলোচনা সভায় কিডনি বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ।

এবছরের বিশ্ব কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্যের আলোকে ডা. সামাদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকশই করতে হলে, চিকিৎসা ব্যয় কমানো যায় সচেনতার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করে। আর সেই লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সফল হতে হলে, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কিডনি রোগের প্রাদূর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সরকারি, বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহকে সমন্বিত উদ্যোগ ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে এবং সরকারি তত্ত্বাবধানে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। 

"বর্তমান যুগের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হলো ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ। এ দুটি রোগ নিরবে দেহের মধ্যে বাসা বেধে বিভিন্ন মরণঘাতী অসংক্রামক ব্যাধির জন্ম দেয়। আর এই ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্ত চাপ এবং আরো কিছু কারণে মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ৭০% নষ্ট হওয়ার আগে, কিডনি রোগের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। অপরদিকে এ রোগে আক্রান্ত ৯০ ভাগ মানুষ বিনা চিকিৎসায় অকালে প্রাণ হারান, ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে।"

আমাদের অসচেতনতা ও সুস্থ জীবনধারা মেনে না চলার জন্য দিন দিন এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে, বলেন ডা. সামাদ। দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে জাতীয়ভাবে সমন্বিত সচেতনতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। 

অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ আরো উল্লেখ করেন,ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্থেই ক্যাম্পস গত ১৬ বছর ধরে গ্রামের হত-দরিদ্রদের মাঝে এই স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার আয়োজন করে আসছে। 

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারীর কথা মাথায় রেখে, সামাজিক দূরত্ব মেনে এবার শুধুমাত্র সেবাপ্রত্যাশীদের নিয়েই ক্যাম্পটি করা হয়, তবে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও উক্ত এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। সমাজের প্রত্যেকে ক্যাম্পস এর মতো মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সাধ্যমতো অবদান রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সমাজকর্মীরা বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে আয়োজিত এসব স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক কর্মকাণ্ডে সরকারি ও বিত্তবান শ্রেণির মানুষদের সহযোগিতা খুব জরুরি। 

ক্যাম্পস-এর প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি বিশিষ্ট লেখিকা নাসরিন বেগম, স্বাস্থ্য সচেতনতা, সুষম খাবার ও সুস্থ জীবনধারা চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ক্যাম্পস'র নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন, ক্যাম্পস-এর মানবিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার নিমিত্তে, আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল নিবেদিতপ্রাণ, চিকিৎসকদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কিডনি বিকল রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে, মানবিক কাজে নিজেদের কর্মকাণ্ড নিরলসভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হালিম, প্রিন্সিপাল, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডা. এ কে এম ফজলুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ, আমিন শরীফ সুপন, উপ-সচিব, এল.জি.আর.ডি মন্ত্রণালয়, আওলাদ হোসেন, আমদানী-রপ্তানী নিয়ন্ত্রক প্রমুখ। উপস্থিত সকলেই ক্যাম্পস আয়োজিত এই মানবিক কর্মকান্ডের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে সামাজিক সকল কাজে তাঁদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।