অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

হেলেন-প্যারিসের ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য’ প্রেমকাহিনী

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫:৩১ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বুধবার   আপডেট: ০৫:৪৭ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বুধবার

পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছে হেলেন-প্যারিস প্রেমকাহিনী। শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন গেঁথে আছেন এ প্রেমিক যুগল। যাদের নিয়ে যুগের পর যুগ শত শত ছন্দ, গীত রচনা করেছেন কবিরা। হাজার বছর ধরে সাহিত্য লিখেছেন সাহিত্যিকরা। সেগুলোর বেশিরভাগেই ফুটে উঠেছে তাদের বিরহ-বেদনা। 

একইভাবে সময়ে সময়ে এ জুটির বন্দনা গেয়েছেন তরুণ-তরুণীরা। তারা বারবার বোঝাতে চেয়েছেন, ঘর-সংসারের মায়াজালে একসময় হারিয়ে যায় প্রেমের ঐশ্বর্য। আগুনে পুড়ে সোনা হওয়ার মতো দুঃখ-কষ্টে প্রজ্বলিত হয় ভালোবাসার প্রকৃত রূপ।

হেলেন-প্যারিসের সেই প্রেম নিয়ে কালে কালে রচিত হয়েছে অসংখ্য পুরাণ, মহাকাব্য, লোকগাঁথা ও নাটক। অপরাজেয় বাংলার পাঠকদের জন্য তাদের চিরায়ত রোমান্সের আখ্যান পেশ করা হলো- 

গ্রিক পুরাণ অনুসারে, হেলেন ছিলেন দেবতা জিউস এবং রাণি লেডার কন্যা। যৌবনে সেসময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী ছিলেন তিনি। স্বয়ং দেবী আফ্রোদিতি সেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। ঘটনাক্রমে তার রূপে-গুণে-সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন স্পার্টার রাজা মেনিলাস। তাকে কাছে পেতে পাগলপ্রায় হয়ে যান তিনি। একপর্যায়ে এ অধিপতির মনের বাসনাও পূর্ণ হয়। 

সবার সম্মতিক্রমে হেলেনকে বিয়ে করেন মেনিলাস। কিন্তু বেশিদিন সুখ ভোগ করতে পারেননি তিনি। তাদের দাম্পত্য জীবন শুরুর কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসায়িক উদ্দেশে স্পার্টায় পাড়ি জমান ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস। ঝটিকা সফরকালে হেলেনকে দেখে ফেলেন তিনি। প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়ে যান সুদর্শন এ তরুণ।

প্যারিস মনে মনে সংকল্প  করেন, যে করেই হোক হেলেনকে পেতেই হবে তার। অর্থ-প্রাচুর্যের মধ্যেও সংসার জীবনে সুখী ছিলেন না মেনিলাসের প্রিয়তমা এ স্ত্রী। সিদ্ধহস্তে একে কাজে লাগান ট্রয়ের যুবরাজ। নিজের মেধা-গুণে রাজবধূকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন তিনি।

স্পার্টার রাজপ্রাসাদের অতিথি ছিলেন প্যারিস। তাকে আপ্যায়ন করতেন হেলেন। এ সুযোগে একদিন তাকে প্রপোজ করেন ট্রয়ের যুবরাজ। তবে প্রথমদিকে সাড়া দেননি তিনি।

তবে কম যান না প্যারিস। তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর সুপুরুষ ও সুঠাম দেহের অধিকারী। দারুণ কথাও বলতে পারতেন। ফলে আস্তে আস্তে প্যারিসের দিকে ঝুঁকতে থাকেন হেলেন। 

প্যারিসের মোহনীয় চেহারা, আকর্ষণীয় গায়ের গড়ন, শরীরী কাঠামো হেলেনকে আকর্ষণ করতে শুরু করে। অল্প সময়েই ট্রয় যুবরাজের প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি।  

স্বভাবতই একদিন রাজার অনুপস্থিতিতে হেলেনকে নিয়ে ট্রয়ে পালিয়ে আসেন প্যারিস। এখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন তারা। পূর্ণ যৌবনের সুধা লাভ করেন। 

এরই মধ্যে সেই খবর স্পার্টায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অপমানের জ্বালা মেটাতে ট্রয়ের উদ্দেশে রওনা দেন গ্রিকরা। সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে ওঠে পরবর্তী এক যুগের ট্রোজান যুদ্ধের আগুন। যাতে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায় ট্রয়। 

গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী, হেলেন ছিলেন অর্ধেক মানবী এবং অর্ধেক দেবী। তার মা রাণি লেডাকে বশীভূত করতে রাজহংসে রূপান্তরিত হয়েছিলেন দেবতা জিউস।

হেলেনকে উদ্ধারে হাজার হাজার জাহাজ ও সৈন্য নিয়ে ট্রয়ে এসেছিলেন গ্রিকরা। নানাভাবে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলেন ট্রয়বাসী। কিন্তু ১২ বছরের বেলায় আর পেরে উঠেননি।

যুদ্ধে সহজে জয়লাভ না করতে পেরে একপর্যায়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন গ্রিকরা। বিশালাকৃতির ঘোড়া তৈরি করেন তারা। যার নাম দেন ট্রোজেন হর্স। এর মধ্যে লুকিয়ে থাকেন শত শত সৈন্য। 

এ ঘোড়া উপহার হিসেবে ট্রয় রাজার কাছে পাঠান মেনিলাসের সমর্থকরা। আর এর মধ্যে লুকিয়ে থাকেন তারা। তবে কোনো কিছুই টের পাননি ট্রয়বাসী। উৎসব-আমেজে তা সাদরে গ্রহণ করেন তারা।

গভীররাতে ঘোড়া থেকে বের হয়ে নগরবাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালান গ্রিক সৈন্যরা। ট্রয়ে আগুন ধরিয়ে দেন তারা। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে নগরী। আগুনে পুড়ে মারা যান ট্রয়ের হাজার হাজার সৈন্য ও নিরীহ মানুষ। নিমিষে সব স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।

তবে যে হেলেনের জন্য এত কিছু, শেষ পর্যন্ত তাকে মেনিলাস পেয়েছিলেন কি না, তা জানা যায়নি। এমনকি বাস্তবে হেলেন বলে কেউ ছিলেন কিনা সেটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তবে পৃথিবীর অন্যতম সেরা মহাকাব্যে তার উপস্থিতি অবিস্মরণীয়।