অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

স্ত্রীর প্রেমিকের হারানো ফোনে স্বামী খুনের রহস্য উদঘাটন  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বরগুনা

প্রকাশিত: ০৪:০৬ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার  

বরগুনায় এক শিক্ষককে হত্যা করে হৃদরোগে মারা গেছেন বলে চালিয়ে দিয়েছেন স্ত্রী। তবে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে হৃদরোগ নয়, খুন করা হয়েছে তাকে।

ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ২৩ মে রাতে। খুন করা হয় বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের গয়েজ উদ্দিনের ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন। তার স্ত্রী ফাতেমা মিতুর কাছ থেকে নাসিরের হৃদরােগে মারা যাওয়ার খবর পান স্বজনরা। পরে স্বাভাবিকভাবেই তার মরদেহ দাফন করা হয়। 

এর প্রায় ৯ মাস পর মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজু মিয়ার হারিয়ে যাওয়া মােবাইল ফোনে নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথােপকথনের রেকর্ডিং পান নাসিরের স্বজনরা। পরে থানায় অভিযােগ করলে পুলিশ নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু (২৪) এবং তার প্রেমিক রাজু মিয়াকে (২০) গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার হওয়া মিতু বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার মােঃ মাহতাব হােসেনের মেয়ে এবং রাজু ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া এলাকার বারেক মিয়ার ছেলে। আদালতে হাজির করে বৃহস্পতিবার তাদের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার আট মাস ১৯ দিন পর স্বজনরা জানতে পারেন নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও মিতুর প্রেমিক রাজু নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কম্বল চেপে শ্বাসরােধ করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় নাসিরের বড় ভাই মােঃ জলিল হাওলাদার বরগুনা সদর থানায় অভিযােগ করলে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে তদন্তকালে ঘটনার প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফাতেমা মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজু তার ব্যবহৃত মােবাইল ফোনটি বরগুনার একটি দোকানে চার্জে দেন। সেখান থেকে মােবাইলটি হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া ফোনে নাসিরকে হত্যার পরিকল্পনা এবং পরবর্তী বিষয়ে রাজু ও মিতুর কথােপকথনের রেকর্ড জমা ছিল। ফোনের কথােপকথনের রেকর্ড পান নাসিরের স্বজনরা। এর প্রেক্ষিতে থানায় অভিযােগ করেন নাসিরের বড় ভাই জলিল হাওলাদার। এ অভিযােগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ভােররাতে অভিযান চালিয়ে রাজু ও মিতুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে নাসিরের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাে. জলিল হাওলাদার বলেন, মিতুর কাছ থেকে আমার ভাইয়ের হৃদরােগে মৃত্যুর খবর পাই আমরা। তখন আমাদের কোনাে সন্দেহ হয়নি। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা নাসিরকে দাফন করি। এ ঘটনার ৯ মাসেরও বেশি সময় পর মিতু ও তার প্রেমিক রাজুর মােবাইল ফোনে কথােপকথনের বেশ কয়েকটি রেকর্ড পাই আমরা। সে রেকর্ডে নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। তখন আমরা নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হই। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসির এবং মিতুর সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। মেয়ে বড় এবং ছেলে ছােট। আট বছর বয়সী মেয়ের নাম নুসরাত জাহান এবং পাঁচ বছর বয়সী ছেলের নাম নাঈম।