অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

চলচ্চিত্রে ছোট নির্মাতাদের বড় আয়োজন

কাইসার রহমানী

প্রকাশিত: ০৫:১৫ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২১ রোববার   আপডেট: ১০:২৪ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২১ রোববার

অহন আর শায়ন্তন খেলা করছে শাহবাগের কেন্দ্রিয় পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে। অহনের বয়স ১০ আর শায়ন্তনের ৫। একজন ক্লাস ফোর আর আরেকজন কেজি টুর ছাত্র। তাদের দেখে মনে হবে, মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছে। কিন্তু মূলতঃ তাদের মা-বাবাই ঘুরতে এসেছেন তাদের সঙ্গে । কারন, শাহবাগ কেন্দ্রিয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আয়োজিত ১৪তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে অহনের নির্মিত সিনেমা 'দ্য ক্রেজি বার্ড' দেখানো হবে। যাতে অভিনয় করেছে শায়ন্তন।

কথা হলো অহনের সঙ্গে। করোনার সময়টা খুব খারাপ কেটেছিল অহনের। স্কুল বন্ধ। বাইরে ঘোরাফেরা বন্ধ। দিনের পর দিন বাসায় থেকে বিরক্ত হয়ে উঠেছিল সে। পরে বাসার ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে তার মানসিক অবস্থা গুলো ক্যামেরায় ধারণ করতে চেষ্টা করলো। পাঁচ বছরের ছোট ভাই শায়ন্তন হলো তার একমাত্র অভিনেতা। পরে অহন নিজেই ইন্টারনেট থেকে একটা এডিটিং সফটওয়্যার ডাউনলোড করে, নিজে নিজেই এডিট করে বাবা-মাকে দেখালো। খুব খুশি মা-বাবা ছেলের কাজে। পরে অনলাইনে চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিলেন ছেলের চলচ্চিত্র। ক্রেজি বার্ড সিলেক্টও হয়ে গেল। নির্মাতা অহন তাই তার চলচ্চিত্র দেখানোর জন্য বাবা-মা আর অভিনেতা ছোট ভাইকে নিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এসেছে। 

অহন আর শায়ন্তনের মতো অসংখ্য ছোট-ছোট নির্মাতার উপস্থিতিতে শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে উৎসবমূখর পরিবেশে রূপ নিয়েছে। ক্ষুদে নির্মাতাদের গলায় ক্যামেরা। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে, মন মতো কিছু পেলে সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরায় ক্লিক কিংবা ভিডিও করছে। ক্ষুদে নির্মাতা শশী জানালো তার খুব ইচ্ছা বড় হয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা হবে। করোনার সময় বাবার মোবাইল হাতে নিয়ে ভিডিওতে সে হাত পাঁকিয়েছে। পরে বাবা একটা ছোট ক্যামেরা কিনে দিয়েছেন। চারপাশের ছোট ছোট ঘটনাগুলো সে দৃশ্যায়ন করে। এভাবেই বানিয়ে ফেলেছে সে ছোট্ট চলচ্চিত্র।  

শাওনেরও কাঁধে ক্যামেরা। ক্লাস ফাইভের ছাত্র। সে উৎসবে এসেছে মিরপুর থেকে। জানালো সে চলচ্চিত্র বানিয়ে উৎসবে জমা দিয়েছিল। কিন্তু তার ছবি নির্বাচিত হয়নি। তবে এতে তার মন খারাপ হয়নি। উৎসবে সে এসেছে অন্য বন্ধুদের কাজগুলো দেখে  আরো কিছু শিখবে। সবার সঙ্গে পরিচিত হবার জন্যই মাকে সঙ্গে নিয়ে  উৎসবে এসেছে শাওন। 

মিলনায়তনে ঘন্টাখানেক পরপর চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব চলচ্চিত্র বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিশুরা নির্মাণ করেছে, কোনটা পাঁচ মিনিটের, কোনটা আবার আধাঘন্টার। তাদের চলচ্চিত্র নেই কোন পরিচিত তারকা, নেই লাইট-ট্রলি-লেন্সের ক্যারিকেচার। হাতের কাছে যে যেমন ক্যামেরা পেয়েছে, তাই নিয়ে তাদের চিন্তাকে প্রতিফলিত করেছে। তাদের নির্মিত ছবিগুলো দেখলে, ভিতরে যে বোধ কাজ করে, সেখানে তারকার উপস্থিতির প্রয়োজন পড়েনা। বাহারি আলো, বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল দৃশ্যায়ন কোন কিছুই আর লাগেনা। ওরা যা করেছে, মনযোগ আর চিন্তা দিয়ে করেছে। যার কারণে চলচ্চিত্রগুলো দেখলে ভাল লাগছে।  কেন্দ্রিয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আগামীর নির্মাতাদের ছুটোছুটি স্বপ্ন দেখায় আমাদের চলচ্চিত্রের সুন্দর একটা সময়ের । 

ঘুরে আসতে পারেন শাহবাগ কেন্দ্রিয় লাইব্রেরি মিলনায়তন থেকে । ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন” স্লোগানে চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ এর আয়োজনে ৩০ জানুয়ারি শনিবার থেকে শুরু হয়েছে  ১৪তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব।  চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। উৎসবে সিনেমা দেখার জন্য কোনো ধরনের প্রবেশমূল্য না থাকলেও এ বছর করোনা ভাইরাস এর কারণে মাস্ক পরিধানকে চলচ্চিত্র উৎসবের টিকেট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত , ইরান, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, চিলি, ও ফিলিপাইনের শিশু নির্মাতাদের চলচ্চিত্র দেখানো হবে।