অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বিস্ফোরক খুঁজে বের করা বিস্ময়কর ইঁদুর

মুনতাসির সিয়াম

প্রকাশিত: ১০:৪৬ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার   আপডেট: ১১:০২ এএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২১ রোববার

বানরের গলায় মুক্তোর মালা কথাটা তো শুনেছি আমরা সবাই। সে দিক থেকে আজকের লেখাটি নিয়ে না বললেই নয়- ইঁদুরের গলায় সোনার মালা। আর সোনার মালা বিজয়ী সে ইঁদুরটির নাম মাগাওয়া, জন্ম আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায়; মাটি (ভূমি) থেকে ল্যান্ডমাইন এবং অপ্রাপ্ত বিষ্ফোরক খুঁজে বের করার কাজে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মী সে।  

মাগাওয়ার বয়স সাত বছরের কিছু বেশি। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে ওঠা তানজানিয়াতেই। ওজনের দিক থেকে ১.২ কেজি, আর দৈর্ঘ্যে ৭০ সেন্টিমিটারের মত। বয়স এবং ওজনের হিসাবে অন্য অনেক প্রজাতির ইঁদুরের চাইতেই মাগাওয়া বেশ বড়, এরপরও সে যখন বিষ্ফোরকগুলোর ওপর দিয়ে হেঁটে যায়, তখন সেগুলো ট্রিগার করে না এতটাই পোক্ত সে; যদিও তাকে অবসরে পাঠানো এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ক্যারিয়ারে সবমিলিয়ে মোট ৩৯টি ল্যান্ডমাইন এবং ২৮টি অপ্রাপ্ত বিষ্ফোরক খুঁজে বের করে গোটা বিশ্বে এক কথায় তাক লাগিয়ে দিয়েছে মাগাওয়া, তারই পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে এক মর্যাদাপূর্ণ স্বর্ণপদক।

মাগাওয়ার প্রশিক্ষণ হয়েছে তানজানিয়ায় অবস্থিত ও নিবন্ধভুক্ত সংস্থা- আপোপো (এপিওপিও)- তে, ইঁদুর’দের প্রশিক্ষণ দেয়ার মধ্য দিয়ে ভূমি থেকে ল্যান্ডমাইন ও অপ্রাপ্ত বিষ্ফোরক খুঁজে বের করার জন্য দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলাই যাদের কাজ। ১৯৯৭ সালে এ অলাভজনক সংস্থাটি গড়ে ওঠে, সেই নব্বয়ের দশক থেকে আজ অবদি একইভাবে কাজটি করে আসছে তারা। প্রশিক্ষণ শেষে নায়কোচিত কাজের জন্য প্রস্তুত প্রতিটি ইঁদুর এখান থেকে আবার হিরো র‍্যাট উপাধিও পায়। এক বছরের প্রশিক্ষণে হিরো র‍্যাটদের মিশ্রিত বিষ্ফোরকের মধ্য থেকে একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক যৌগ খুঁজে বের করতে শেখানো হয়। আরো সহজ করে বলতে চাইলে আসলে তাদের শেখানো হয়- খাড়াই (স্ক্র্যাপ) জাতীয় ধাতুগুলো এড়িয়ে চলে যতটা দ্রুত সম্ভব ভূমি থেকে ল্যান্ডমাইন খুঁজে বের করা এবং যখন কোন বিষ্ফোরকের খোঁজ মেলে, তখন আঁচড় কেটে সে জায়গাটি চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে মানব সহকর্মীদের বিপদের কথা জানিয়ে দেয়া। 

মাগাওয়ার কাজের সময় সকালের দিকটায়, মোটে আধ ঘন্টা কাজ করে সে। অবাক হওয়ার মত বিষয় হচ্ছে, একটা টেনিস কোর্টের সমান জায়গা পুরোপুরি নিজের নখদর্পনে নিতে তার সময় লাগে খুব বেশি হলেও বিশ মিনিট। বিষ্ফোরিত এলাকাগুলো-তে বসবাসরত নারী, পুরুষ, শিশু এক কথায় সরাসরি মানুষের জীবন বাঁচাতে মাগাওয়ার কাজ সত্যিই তুলনার বাইরে; তার এক একটি বিষ্ফোরক খুঁজে বের করা মানেই স্থানীয় মানুষের ক্ষয়- ক্ষতি এবং মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস। সবমিলিয়েই মাগাওয়ার গুণে ভীষণ মুগ্ধ পিপলস ডিসপেনসারি ফর সিক এনিমেলস (পিডিএসএ)- এর মহা পরিচালক জ্যান ম্যাকলফলিন। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তাই বেশ জোর দিয়েই তিনি বলেছেন, মাগাওয়ার কাজ সত্যিই অবিশ্বাস্য ও অতুলনীয়। 

পিপলস ডিসপেনসারি ফর সিক এনিমেলস (পিডিএসএ) হলো- যুক্তরাজ্যের একটি সহায়ক দাতব্য সংস্থা; আহত ও অসুস্থ প্রাণীদের সেবা করাই যাদের কাজ। ১৯১৭ সালে মারিয়া ডিকিনের হাত ধরে এর পথ চলা শুরু। সংস্থাটি থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে জানা যায়- ৬ মিলিয়নের (৬০ লাখ) মত বিষ্ফোরক আছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায়। আর সে দেশেই প্রাণ নাশক বিষ্ফোরক খুঁজে বের করা এবং সেগুলো অপসারণে নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করার সুবাদে জীবন রক্ষাকারী খেতাবে ভূষিত করে পুরস্কার হিসেবে মাগাওয়া-কে দেয়া হয়েছে স্বর্ণপদকটি। সাধারণত সাহসী ও কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য প্রাণীদের মাঝে এ পুরস্কারটি দিয়ে থাকে পিডিএসএ কর্তৃপক্ষ। মজার বিষয় হচ্ছে, এখন পর্যন্ত পুরস্কার পাওয়া মোট ৩০টি প্রাণীর মধ্যে মাগাওয়া’ই কিনা একমাত্র ইঁদুর। মাগাওয়ার পক্ষ থেকে পুরস্কারটি নেয়ার পর আপোপো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টোফ কক্স সংবাদ সংস্থাগুলো-তে বলেন, পদকটি পাওয়া আমাদের জন্য সত্যিই খুব সম্মানের; পাশাপাশি কম্বোডিয়া সহ বিশ্বের সব বিষ্ফোরক এলাকার ভুক্তভোগী মানুষের জন্যও অনেক বড় একটি অর্জন এটি।