অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

টিকা নেওয়ার পর অপরাজেয় বাংলাকে ডা. লুৎফুল মুবীন

ভয়ের কিছুই নেই, যার যখন পালা আসবে টিকা নিন

বিশেষ সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ০৯:০৯ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার   আপডেট: ০৯:১৩ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার

ডা. আহমেদ লুৎফুল মুবীন

ডা. আহমেদ লুৎফুল মুবীন

"একজন চিকিৎসক হিসেবে বলছি, যার যখন পালা আসে করোনার টিকা নিয়ে নিন। আমি নিজে টিকা নিয়েছি। এবং এটি সাধারণ অন্য যে কোনো টিকার মতোই। এতে ভয়ের কিছু নেই।" 

কথাগুলো বলছিলেন ডা. আহমেদ লুৎফুল মুবীন। তিনি দেশের প্রথম চিকিৎসক হিসেবে নিয়েছেন কোভিড-১৯ এর টিকা। যা তার শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে। লুৎফুল মুবীন ভালো আছেন। রাত ৮টার দিকে টেলিফোনে তিনি কথা বলছিলেন অপরাজেয় বাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে। এবং জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে নিয়মিত কাজে যোগ দিতে হাসপাতালে যাবেন তিনি। 

করোনা ভাইরাসের মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দেশে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখ সারির যোদ্ধা তিনি। কর্মরত রয়েছেন কোভিড-১৯ এ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর একটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। এই হাসপাতালেই বুধবার বিকেলে প্রথম পাঁচজন টিকা গ্রহণকারীর একজন হয়ে টিকা নেন ডা. মুবীন। 

অপরাজেয়বাংলাকে তিনি বলেন, শারীরিক কোনও অসুবিধা বোধ করছেন না। এবং ভালো আছেন। সাধারণত টিকা নিলে যতটুকু প্রতিক্রিয়া হয় এক্ষেত্রে তেমনটাই হচ্ছে। আর এ প্রতিক্রিয় ব্যক্তিভেদে কম বেশি হয়। তার নিজের ক্ষেত্রে তেমন কোনও সমস্যাই হচ্ছে না। 

ডা. লুৎফুল মুবীন বলেন, বাংলাদেশ টিকা দানে দীর্ঘ সাফল্য দেখিয়ে আসছে। অনেক রোগ টিকা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশ থেকে বিদায় করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা যখন এসে গেছে, সাফল্যের সঙ্গে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে এই ঘাতক ব্যাধিটি থেকেও দেশকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। 

মানব শরীরে বিভিন্ন টিকা ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রয়োগ করা হয়। কোনোটি চামড়ার ঠিক নিচে দিতে হয়, কোনোটি খাইয়ে দেওয়া হয়, কোনোটি মাংসপেশিতে প্রয়োগযোগ্য। কোভিড-১৯ এর এই টিকাটি দেওয়া হচ্ছে মাংসপেশীতে। সুতরাং মাংসপেশিতে অন্য টিকা দেওয়ার বোধ যেমন, এই টিকার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই বোধ করছি। 

দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষের টিটেনাসের টিকা দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে, কোভিড-১৯ এর টিকাটিও ঠিক সেরকম। মাংসপেশিতে দেওয়ার কারণে সামান্য ব্যাথা বোধ হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে সামান্য জ্বর অনুভব হতে পারে। তবে তা বেশীক্ষণ স্থায়ী থাকে না, বলেন তিনি। 

কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকেই এর চিকিৎসায় ফ্রন্টলাইন যোদ্ধার ভূমিকায় ছিলেন ব্যক্তিগতভাবে হেপাটোলজির এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। 

তিনি বলেন, আগামীকাল চারটি হাসপাতালে আরও ১০০ জন করে ৪০০ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এই টিকা নেবেন। আমরা স্বাস্থ্যকর্মীরা আগে আগে টিকা নিয়ে নিচ্ছি এই কারণেই নয় যে, আমরা এই রোগের চিকিৎসায় সম্পৃক্ত। বরং এই কারণেও যে, সাধারণ মানুষ যাতে আস্থায় নিতে পারে, চিকিৎসকরা নিজেরা টিকাটি নিয়ে তবেই তাদের নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। 

বিষয়টি সাধারণের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই বিশ্বাস করেন ডা. মুবীন। 

আমি আহ্বান জানাবো, যার যখন পালা আসবে তখনই যেনো টিকাটি নিয়ে নেন। এতে দেশকে করোনা ভাইরাস মুক্ত করা সহজতর হবে, বলেন তিনি। 

কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাথমিক লড়াই হিসেবে আমরা সবাই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে, মাস্ক পরতে এবং সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছি। পরে যখন চিকিৎসার কিছু বিষয় এলো আমরা সে মোডালিটি মেনে চিকিৎসা দিয়েছি। এখন ভ্যাকসিন এসেছে, আমরা ভ্যাকসিন প্রয়োগেও বিশ্বমান মেনে এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি দেশের প্রতিটি মানুষ এই ভ্যাকসিনের আওতায় আসবে এবং করোনামুক্ত থাকবে। 

আমাদের সবাইকে মিলে টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে হবে, বলেন ডা. লুৎফুল মুবীন। 

সাধারণের মধ্যে ইনজেকশন, টিকা গ্রহণ এগুলোতে ভয় পাওযার প্রবণতা রয়েছে, যা যে কোনো ইনজেকশনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই টিকা নিতে ভয় পেলে চলবে না, ভয়কে জয় করে টিকা নিয়ে নিতে হবে। কারণ এই ভাইরাস এরই মধ্যে বিশ্ব তথা দেশকে অনেক ক্ষতির মুখে ফেলেছে। আমরা হারিয়েছি অনেক প্রিয় মানুষকে। আমাদের যাতে আর হারাতে না হয়। আর ভুগতে না হয় সে লক্ষে সকলকে সচেতন হতে হবে। 

একই সঙ্গে টিকা নিলেও কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে দেওয়া অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান ডা. আহমেদ লুৎফুল মুবীন।