অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৪:০৫ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার   আপডেট: ০৪:১০ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার

দেশে ভ্যাকসিনেশন বা টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যুক্ত হন তিনি। করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ৩২৭ দিন পর, নতুন বছরের ২৭তম দিনেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন মহাযজ্ঞ শুরু করতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ। এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ‘সুরক্ষা অ্যাপের’মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রমও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। 

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৬ মাসের মধ্যে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। এর বাইরে প্রয়োজন অনুযায়ী আরো টিকা কেনার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান। 

**টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু

সেরামের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পাশাপাশি বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের আওতায় বিশ্বের ৯২টি দেশের মত বাংলাদেশও মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য টিকা পাবে। তাতে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসতে পারে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্স সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তাকে দেওয়ার মাধ্যমে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের উদ্বোধ হবে। তারপরে ভ্যাকসিন নিবেন আরও দুজন সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নী খাতুন ও রিনা সরকার। চিকিৎসক হিসেবে প্রথম ভ্যাকসিন নেবেন মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মবিন। এছাড়া এই তালিকায় আছেন আরো দুই চিকিৎসক । আর ভ্যাকসিন দিবেন সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা আক্তার ও দীপালি ইয়াসমিন। এই হাসপাতালে মোট ২৫ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকদের মধ্যে থেকে তাদের বাছাই করা হয়েছে। 

এরপর বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে,সে প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সেরে ফেলা হয়েছে।

ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ লাখ ভ্যাকসিন পৌঁছে গেছে ঢাকায়। ওষুধ প্রশাসনের অধিদপ্তরের পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হয়েছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। প্রস্তুত হাসপাতাল ও প্রশিক্ষিত টিকাদানকারীরাও। 

ভ্যাকসিন নিতে নিবন্ধন-
প্রধানমন্ত্রীর টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন অনুষ্ঠানেই চালু হলো টিকাদান ব্যবস্থাপনার ‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্মের মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম। যারা টিকা নিতে চান,তাদের সবাইকেই অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে।

প্রস্তুত কুর্মিটোলাসহ পাঁচ হাসপাতাল-
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে টিকা দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় বুথ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া টিকা প্রয়োগের পরবর্তী পর্যবেক্ষণ ও কারো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে হাসপাতালগুলো।

এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে টিকাদান শুরুর কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান। এক দিন এগিয়ে সারা দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে ৭ ফেব্রুয়ারি। পরিবর্তিত এই তারিখের কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

প্রাথমিক পর্যায়ে ৩ কোটি টিকা আনতে গত নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশি ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চুক্তিতে বলা হয়, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট ৫০ লাখ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বেক্সিমকোর মাধ্যমে। এরপর প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন দেবে। এভাবে মোট তিন কোটি ভ্যাকসিন কেনা হবে সেরাম থেকে।

চুক্তি অনুযায়ী, সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে ভারত থেকে কেনা ৫০ লাখ করোনার ভ্যাকসিন এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে  শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে নয়টি ফ্রিজার ভ্যানে করে ভ্যাকসিন টঙ্গীতে বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে, আগে ২১ জানুয়ারি ভারতের উপহার হিসেবে ২০ লাখ ভ্যাকসিন পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী চার থেকে পাঁচদিনের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলায় ভ্যাকসিন পৌঁছে যাওয়ার কথা রয়েছে।