অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

করোনায় এনবিআর’র ভালো-মন্দের বছর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৭ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার   আপডেট: ০৬:৪৮ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার

২০২০ সালটি একই সাথে ভাল ও মন্দের কেটেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। করোনা মহামারি অন্যান্য দেশের মতো এলোমেলো করেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিও। বছরান্তে দেশ ইউএনডিপির উন্নয়ন সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছে সত্য, কিন্তু অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলোতে ভিন্ন দৃশ্যপট সামনে এনেছে বছরটি। যার অন্যতম ছিলো রাজস্ব আহরণে বড় ধাক্কা, যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এনবিআর।

তবে করোনার মধ্যেও আশার খবর হচ্ছে, ভ্যাট ফাঁকি রোধে প্রাথমিকভাবে বসানো হয়েছে ইলেক্ট্রোনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি মেশিন)। ধারনা করা হচ্ছে ভ্যাটে স্বচ্ছতা আনবে এই ইএফডি মেশিন। যারা ইএফডিতে ভ্যাট দেবেন তাদের জন্য থাকছে পুরস্কারও। 
নাগরিকদের ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা থাকায় যার প্রয়োজনও ছিল খুব। কেননা প্রায়শঃই খবর মিলেছে ভ্যাট গোয়েন্দারা বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে বড় বড় অংকের ভ্যাট ফাঁকির তথ্য সামনে আনছে। তবে উল্টো চিত্রও দেখা গেছে। নিয়মিত ও সর্বাধিক অংকের ভ্যাট দেওয়ায় এবছর ১৪০ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। এছাড়াও ভ্যাটের স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল করতে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে আরও ছয় মাস।

রাজস্ব আহরণের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর’র রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় মূল্য সংযোজন কর থেকে। যার মোট অংক ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এছাড়া আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। 

অথচ প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৩ হাজার ৭১৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৮৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। মোট ঘাটতি ১৩ হাজার ৭২৪ কোটি ৬ লাখ টাকা।

যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে ঘাটতি ছিল প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের হিসাবে ওই অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ৪৮ হাজার ১৭ কোটি টাকা।

করোনার কারণে এবার বৃহদাকারে আয়কর মেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে আয়কর আদায় প্রক্রিয়া অব্যহত আছে। একই সাথে হয়নি ভ্যাট মেলাও। তবুও আয়কর দাখিল বেড়েছে। অন্যদিকে রাজস্বে ভ্যাটের পরিমাণও বাড়ছে। করোনার কারণে শেষদিনে রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

অপরদিকে ভুয়া অডিট রিপোর্ট দাখিলসহ নানা উপায়ে কর ফাঁকি দেয়া এক লাখ ৬০ হাজার কোম্পানিকে শনাক্ত করে এনবিআর। একই সাথে আগামী বছর থেকে মিলবে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ।

সবকিছু ছাপিয়ে সারা বছরই ছিলো ভ্যাট ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোডের্র ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযান। বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি সামনে এসেছে। যার অন্যতম ছিলো মি.বেকারের ৮০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি, চট্টগ্রামের ২৫৩ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা, ফেসবুকের এজেন্ট এইচটিটিপুল বাংলাদেশ বিরুদ্ধে ভ্যাট গোয়েন্দাদের মামলা, ডাবর কোম্পনির ২১ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি। এছাড়া আপন জুয়েলার্সের ১৯০ কোটি টাকার অর্থ পাচারের তথ্য পায় শুল্ক গোয়েন্দা। অপরদিকে হোটেল লেকশোর ১০ মাস ভ্যাট দেয়নি আর অভিযানে লেকশোর থেকে মদ উদ্বার করেন ভ্যাট গোয়েন্দারা। মিরাজ রেস্টুরেন্টেরও বড় অংকের ভ্যাট ফাঁকি ধরে ফেলেন তারা।

অপরদিকে করোনা সংক্রান্ত মেডিকেল সামগ্রীর দুর্নীতির বিষয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ এবং জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এছাড়া পিপিই ও সার্জিক্যাল মাস্কে কর অব্যাহতি দেয় এনবিআর। আর সোনা চোরাকারবারী গোল্ডেন মনিরসহ চার জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে এনবিআর।  

অস্তিত্ব নেই এমন ১২৫ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনার মধেও ছিলো অব্যাহত ছিল স্বর্নের চালান আটক। দুবাই ফেরত যাত্রীর কাছ থেকে ১৫ কেজি সোনা জব্দ ছিলো বছরে সবচেয়ে বড় সোনার চালান আটক। এছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেটেও ছিলো সোনা আটকের ঘটনা। তবে পাশাপাশি কাস্টমস কর্মকর্তাদের নজরদারি বাড়ায় সোনা চোরাচালান কমেছে। যার ফলে শুধু নভেম্বর মাসেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে বৈধভাবে এসেছে ১ টনের বেশি সোনা।

করোনার মধ্যেও সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যবরণ করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বেশ কিছু কর্মকর্তা- কর্মচারী। আর করোনা আক্রান্তর সংখ্যাও অনেক। সব মিলিয়ে সত্যিই ভালো-মন্দে কেটেছে এনবিআর'র ২০২০।