অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কি আছে টিএসসি`র ভাগ্যে

কাইসার রহমানী, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:১৫ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার   আপডেট: ০৪:০০ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ শনিবার

ছাত্র, শিক্ষক থেকে শুরু করে সচেতন মানুষ, সবার কাছেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্র (টিএসসি) জ্ঞাণের তীর্থস্থান, সৃষ্টিশীলতার প্রেরণা, বোধের প্রতীক। পড়াশোনা, ইতিহাস, আন্দোলন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সবকিছুর কারণে অতীতে থেকেই এই টিএসসি থেকেছে আলোচনায়। টিএসসির দৃষ্টিনন্দন নকশারও সুনাম রয়েছে।   

ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্র- টিএসসি তার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই বিভিন্ন কারণে আলোচনায় থেকে আসছে। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে জোরেসোরে আলোচনায় এসেছে কিছুটা ভিন্ন কারণে। এবারের আলোচনা তার পরিবর্তনের সংবাদে। টিএসসিকে নতুন করে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। একথার সূত্র ধরে আলোচনা-সমালোচনারও শুরু। পুরনো টিএসসি’র সংস্কার হবে নাকি বহুতল ভবন করে পুরোই বদলে ফেলা হবে টিএসসি; তা নিয়ে দ্বিধায় সাধারনেরা।

গত ২ সেপ্টেম্বর, আওয়ামী লীগের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, টিএসসিকে নতুন করে গড়ে তুলতে চান তিনি। সম্পূর্ণ আধুনিকভাবে টিএসসি প্রতিষ্ঠা করবেন যাতে করে ছাত্র-শিক্ষকের এই মিলনকেন্দ্র আরো সুন্দর হয় এবং এ বিষয়ে তিনি কিছু নির্দেশনাও দিয়ে দিয়েছেন।

মূলত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর টিএসসির নতুন নির্মাণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে টিএসসি সংস্কারের পক্ষে বিপক্ষে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের এখনো কোন কর্মকাণ্ড চোখে না পড়লেও গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। 

টিএসসিকে নতুনভাবে তৈরি নাকি সংস্কার আসলে যে কি হতে যাচ্ছে বিষয়টা এখনো পরিস্কার না। তবে কি করা যায়, তা নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরাজেয় বাংলার সঙ্গে টিএসসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ আলী আকবরের কথা হয় বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) তার অফিস কক্ষে। তিনি জানান, আসলে কি হতে যাচ্ছে তার কাছে কোন তথ্য নেই। তবে গত আগস্ট মাসে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তিনটি প্রতিনিধি দল টিএসসি সার্ভে করে গেছেন। তাদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরাও ছিলেন। তিনি বলেন, এর নকশা করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রধানমন্ত্রী পুরো বিষয়টা দেখভাল করছেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ কবে থেকে শুরু হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এ বিষয়েও কিছু জানেন না তিনি। কোন চিঠি তার কাছে আসেনি। 

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও, দিনভর ব্যস্ততার কারণে, এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তিনি সময় দিতে পারেননি। 

টিএসসি শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সুকুমারবৃত্তি চর্চার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। দেশের সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় টিএসসির গুরুত্ব অপরিসীম। এখনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলো টিএসসি থেকে পরিচালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংকন ও চিত্রণ বিভাগের ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী রাজীব কান্তি রায় বলেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী বাড়ছে তাই টিএসসির সংস্কার দরকার। তবে টিএসসি অনেক ঐতিহাসিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এর অনেক ইতিহাস আছে। তাই মূল ভবন অপরিবর্তিত রেখে এর সঙ্গে নতুন স্থাপনা করা যেতে পারে। বিশ্বিবদ্যালয়ের বেশ কিছু জমি দখল করেছে অন্যরা, তিনি দখল জমি মুক্ত করে টিএসসি সম্প্রসারণের কথা বলেন। 

ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র, বর্তমানে তেঁজগাঁও কলেজের শিক্ষক সৈয়দ মুহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে অনেক বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো মূলত কোন ঐতিহ্য বহন করেনা। এই বিশ্ববিদ্যালয় ৫২র ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব প্রেক্ষাপটেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অবদান আছে। তাই সংস্কার হলেও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যগুলো ধারণ করে  নকশা করেই সংস্কার করা উচিত। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়ন বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন আমরা সবাই চাই। টিএসসির যে আর্কিটেক্টচালার ভ্যালু আছে, সেই ডিজাইন রেখে সংস্কার হলে, ঐতিহ্য ধরে রাখা যাবে। 

জানা গেছে, ঢাকার গণপূর্ত অধিদপ্তরের টিএসসির উন্নয়নের যে প্রকল্প রয়েছে সেটি পরিকল্পনা নিয়ে একটি টিম কাজ করছেন। তাদের পরিকল্পনায় কী রয়েছে সে বিষয়ে  ১০ ডিসেম্বর একটি উপস্থাপনা হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেটি হয়নি। নকশা চূড়ান্ত হলেই জানা যাবে, টিএসসি ভেঙ্গে বহুতল ভবন নাকি সংস্কার করা হবে। 

ষাটের দশকের শুরুতে গ্রিক স্থপতি কনস্ট্যান্টিন ডক্সিয়াডেস টিএসসির নকশা করেছিলেন। টিএসসির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয় মূলত ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে।

দেখুন ভিডিও স্টোরি: