অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বিদেশি সিইও নয়, ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা পাবেন নিজ দেশে কাজের সুযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:২৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার   আপডেট: ০৯:০১ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার

বাংলাদেশের বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ পদে বিদেশি নাগরিকদের নয়, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদেশে বসবাসরত মেধাবী বাংলাদেশীদের জন্য সুযোগ সৃষ্ট করে করবে বাংলাদেশ। লন্ডনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে'র ভার্চুয়াল আলোচনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এমন আশ্বাস দিয়েছেন। 

বর্তমানে বাংলাদেশের ফরেন রির্জাভের ৪০ বিলিয়ন ডলারের একটা বড় অংশ প্রবাসীদের রেমিটেন্স। কিন্তু ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যশনালের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে, অন্যদিকে বাংলাদেশে কাজ করা আড়াই লাখ বিদেশিদের কর ফাঁকি দেয়ার কারণে বাংলাদেশে ক্ষতি হচ্ছে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশকে বিদেশি সিইও নির্ভরতা কমিয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশি মেধাবী তরুণদের অগ্রাধিকার  সুযোগ দিলে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হওয়ার ঝুঁকি কমবে বলে ওয়েবিনারে মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের পরিচালনা পরিষদের সদস্য তানভীর আহমেদ। 

এ প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, "যারা বাইরে বসবাস করেন, তাদের জন্য বাংলাদেশে কাজ করার সম্ভাবনা আছে। আপনার ও আপনার পরের প্রজন্মের জন্য, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রত্যেকটি  ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ তৈরির জন্য অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। আপনাকে বাংলাদেশে বসে থেকে কাজ করার দরকার নাই, যেভাবে বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা আউটসোর্সিং করে তেমনি করে বিদেশে অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশি ডিজটাইজেশনের যুগে বিদেশে বসেই বাংলাদেশে কাজ করার সুযোগ পাবেন।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা ও আবাসিক হলে ফ্রি-ওয়াইফাই সুবিধা চালুর ব্যাপারে মন্ত্রীর দৃষ্ট আকর্ষণ করলে, মোস্তাফা জব্বার  বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলগুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। 

মন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৯ মার্চ থেকে সচিবালয়ের অফিসে গিয়ে উঁকিও দেই নাই, কিন্তু একটা ফাইল পেন্ডিং নাই। প্রযুক্তির কল্যাণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।’

বাংলাদেশে ১৭ কোটি মোবাইল কানেকশন থাকলেও  ১৭ কোটি ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। মাত্র ৩৫ শতাংশ ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। তাই ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশি স্মার্ট ফোন তৈরিতে জোর দেওয়া হবে, জানান টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন, ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন আর বন্যা, খড়া ও দূযোর্গের দেশ নেই। বাংলাদেশ দূযোর্গের সংকট কাটিয়ে মানবিক রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন রোহিঙ্গাদের ভরন-পোষণ করানো বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখর আহ্বান জানান তিনি।

'বার্থ অফ অ্যা নেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়' শির্ষক এই ওয়েবিনারে অংশ নেন টেন মিনিট স্কুলের ইংলিশ ট্রেইনী ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শেভিনিং স্কলার মুনজারিন শহিদ। মুনজারিন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে প্রথম বর্ষেই তাদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য তুলে দেওয়া হলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে তাদের ধারনা পরিস্কার হবে কেননা,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি গলিতে রয়েছে ইতিহাস। সেই সাথে মেধা পাচার রোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্ব দেন মুনজারিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে পরিচালন পরিষদের সদস্য, থার্ড সেক্টর কনসালটেন্ট বিধান গোস্বামী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবেগের জায়গা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম মাত্র খরচে পড়াশোনা করার জন্যই আজ আমাদের সামনে অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মচিত হয়েছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের মাধ্যেম আমরা আমাদের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করতে চাই।

মহান বিজয় দিবসের আলোচনায় একটি জাতির জন্মের পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মৃতি চারণ করেন সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় ক্লাব ইউকের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার চৌধুরী হাফিজুর রহমান, ডক্টর আশরাফ উদ্দীন, লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার ড. মাহফুজুর রহমান, সোনালী ব্যাংক ইউকের সাবেক প্রধান নির্বাহী আমীরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার অজয় রায় রতন, অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান তালুকদার, শায়লা শিমলা, পলি জাহান,  ফাতেমা লিলি, ঝুমুর দত্ত, রেহানা ফেরদৌস মনি ও ইমা সুলতানা চারুসহ অন্যরা। 

৪৯তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার ফল ঘোষণা করেন প্রতিযোগিতার বিচারক এইচ এস বিসি গ্লোবালের ওয়েব কন্টেন্ট ম্যানেজার মাসুদ মিজান‌। 

অনুষ্ঠানে মুক্তি যুদ্ধের গান পরিবেশন করেন সঙ্গীত শিল্পী সারোয়ারী আলাম, সংবাদ পাঠিকা ও আবৃত্তি শিল্পী তানজীনা নূর ই সিদ্দিকী, সঙ্গীত শিল্পী রাশিদা খান বানু ও সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার হিমিকা আযাদ। 

বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শিশু-কিশোরা বার্থ অফ অ্যা নেশন অ্যান্ড ঢাকা ইউনিভার্সিটি শির্ষক চিত্রাঙ্কন ও রচনা লিখন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।