অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ইরানের হামলার ভয়ে ইসরাইলে নিরাপত্তা জোরদার

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২০ পিএম, ৫ এপ্রিল ২০২৪ শুক্রবার  

ইসরাইলের কনস্যুলেট হামলার প্রতিশোধ নেবে ইরান। এ নিয়ে ইসরাইলকে এবার কড়া হুঁশিয়ারি দিল তেহরান। ইরানের এই হামলার আশঙ্কায় রীতিমতো ভয়ে আছে ইসরাইল। ইতোমধ্যেই কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে গেছে তেল আবিব। জোরদার করা হয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার থেকে বাতিল করা হয়েছে সেনাবাহিনীর ছুটি। বন্ধ করা হয়েছে দেশটির জিপিএস সেবা। যুদ্ধের শঙ্কায় পূর্বের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। শুক্রবার দ্যা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ খবর। 

১ এপ্রিল ইসরাইলের হামলায় নিহত হয়েছিল ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি। শুক্রবার ছিল শীর্ষ এই নেতার জানাজা। সেখানেই ইসরাইলকে লক্ষ্য করে হুমকির বার্তা দেন ইরানের কমান্ডার-ইন-চিফ মেজর জেনারেল হোসেন সালামি। ইসরাইলকে আর ছাড় দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সালামি বলেন, ‘পবিত্র ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে শত্রুদের কোনো কাজে আর চুপ থাকা হবে না। আমাদের সাহসীরা ইহুদিবাদী শাসকদের শাস্তি দেবে।’ 

এ ঘটনার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, কূটনৈতিক মিশনে প্রকাশ্যে এ হামলার জন্য ইসরাইলকে ‘অনুশোচনা’ করিয়ে ছাড়বে তেহরান। তার মতে, ইসরাইলের আগ্রাসন সব কূটনীতিক নিয়মনীতি ও আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ও তার ইহুদিবাদী লক্ষ্য হাসিলে ব্যর্থ হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। এদিকে সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেন আকবরি বলেন, ইসরাইলের ওই হামলায় ইরানের জবাব হবে ‘একই মাত্রার ও একই রকম কঠোরতার’। এরপর ইসরাইলের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার পর সাবেক গার্ড কমান্ডার মোহসেন রেজাই বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে।’ জ্যেষ্ঠ নেতার এই জানাজার কার্যক্রমে অংশ নেয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। ‘ইসরাইলের মৃত্যু’ এবং ‘আমেরিকার মৃত্যু হোক’ স্লোগান সম্বলিত ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে বের হয় তারা। এমন হুমকির পরই এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সব যুদ্ধ ইউনিটের ছুটি সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ আরও বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে আইডিএফ যুদ্ধে রয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রমাগত মূল্যায়নের মাধ্যমে সৈন্য মোতায়েন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ এর আগে, বুধবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদার করার জন্য রিজার্ভ সৈন্যদের খসড়া তালিকা তৈরি করেছে আইডিএফ।

বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিনিধি ও তেল আবিবের বাসিন্দারা বলেছেন, সেখানে জিপিএস পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। মূলত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য এই জিপিএস ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। এমনকি এ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বরাত দিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলের বেলফার সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো ইয়াদলিন বলেন, ‘ইরান আগামীকাল হামলা চালালে আমি অবাক হব না। আতঙ্কিত হবেন না। আশ্রয়কেন্দ্রে দৌড়াবেন না। আগামীকালের জন্য প্রস্তুত হন। তারপর হামলার পরিণতির ওপর এটি বাড়বে কিনা তা নির্ভর করবে।’ তবে এতকিছুর পরও ইরানের হুমকিতে পাল্টা জবাব দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পালটা হুমকি ছুড়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে নেতানিয়াহু বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই ইরান আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে সরাসরি এবং মিত্রদের দিয়ে, দুভাবেই। ইসরাইলও তাই ইরান এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা ও আক্রমণাত্মক পন্থা অনুসরণ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি কিভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয়। আমরা তাই সহজ নীতিতে কাজ করব, আর সেটা হচ্ছে যারা আমাদের ক্ষতি করবে বা ক্ষতি করার পরিকল্পনা করবে আমরাও তাদের ক্ষতি করব।’ 

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এ সময় ইরানের হুমকি নিয়েও আলোচনা হয়। ওয়াশিংটন বলেছে, বাইডেন এ ব্যাপারে স্পষ্ট করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের হুমকির ব্যাপারে ইসরাইলকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। 

এদিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইরানের হাতে বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। তারা সিরিয়া ও ইরাকে সশস্ত্র মিত্র গোষ্ঠীগুলো দিয়ে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা করতে পারে। হিজবুল্লাহর মাধ্যমে লেবানন সীমান্তে আঘাত হানতে পারে ইসরাইলি বাহিনীর ওপর। আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিকেও জোরদার করতে পারে ইরান। এতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের মধ্যে তেহরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির সম্ভাবনা সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।