অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

`আজ আমি নিজের গাড়ি নিজেই চালিয়ে এসেছি`

বিশেষ সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১১:৫০ পিএম, ১ আগস্ট ২০২৩ মঙ্গলবার   আপডেট: ০৭:০৯ এএম, ১০ আগস্ট ২০২৩ বৃহস্পতিবার

'আজ আমি নিজের গাড়ি নিজেই চালিয়ে এসেছি'। দৃঢ়তা ও আত্মপ্রত্যয় যেনো ঝরে পড়ছিলো সোনিয়া তালুকদারের কণ্ঠ থেকে। সফলতার গল্প শোনাচ্ছিলেন তিনি। বলছিলেন, কিভাবে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। হয়েছেন সফল ফ্রিল্যান্সার। নিশ্চিত করেছেন আত্মমর্যাদার এক পথ চলা। 

শুধু সোনিয়া নন। এমন সাফল্যের গল্প শোনাচ্ছিলেন শাকিল, বৃষ্টি বাগচী, সৌমেন মন্ডলসহ আরও অনেকে। এরা সকলেই কোডার্সট্রাস্টের অ্যালাম। ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে কোডার্সট্রাস্টের পথচলার কোনো না কোনো পর্যায়ে তারা নিয়েছেন প্রশিক্ষণ। কোডার্সট্রাস্টের মেন্টরদের কাছ থেকে আইসিটির বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তারা কেউ নিজেই মেন্টর, নয়তো সফল উদ্যোক্তা, কিংবা মার্কেটপ্লেসের সফল ফ্রিল্যান্সার। 

এমন শতাধিক অ্যালাম উপস্থিত হয়েছিলেন কোডার্সট্রাস্টের বনানী কার্যালয়ে। ১ আগস্ট যাত্রা শুরু হলো কোডার্সট্রাস্ট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের। লোগো ও অ্যালানাই কার্ড উন্মোচনের মাধ্যমে এই অ্যাসোসিয়েশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কোডার্সট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আজিজ আহমদ। 

অতিথিদের মধ্যে ছিলেন কোডার্সট্রাস্টের অন্যতম উপদেষ্টা ও সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান। এফবিসিসিআই'র সাবেক পরিচালক মেহেদি আলী ও ব্যবসায়ী নেতা মাহবুব ইসলাম রুনু। 

পারিবারিক কারণে সেনাবাহিনী থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে, পরে বেসরকারি পর্যায়ে কিছুদিন চাকরি করার পর, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে কাজ করেও সে কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন সোনিয়া তালুকদার। কারণ একটাই পরিবার সামলানো। কিন্তু মেধাবী এই নারী থেমে থাকতে চাননি। আর তাই খুঁজে নিয়েছেন ঘর-গৃহস্থালী সামলে, সন্তান লালন-পালনের মধ্যেও কিভাবে নিজের ভবিষ্যত গড়ে নেওয়া যায় তারই পথ- ফ্রিল্যান্সিং। আর সেই পথে তাকে দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কোডার্সট্রাস্ট। এখানে মেন্টরদের ভূয়সী প্রশংসা করছিলেন সোনিয়া। তিনি বলেন, তারা আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন এবং সেই শিক্ষাকে পূজি করে আজ আমি সফল ফ্রিল্যান্সার। নিজের অর্থে গাড়ি কিনে নিজেই আজ চালিয়ে এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছি। 

শাকিল আহমেদ বলছিলেন তিনি কেবল গাড়ি নয়, বাড়িও করেছেন তার উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান থেকে আয়ের অর্থে। কেবল নিজেই নয় আরও শত শত মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে অবদান রেখে চলেছেন। তবে তিনি সব কিছুর জন্যই কৃতজ্ঞ কোডার্সট্রাস্টের প্রতি। কোডার্সট্রাস্টই তাকে তৈরি করেছে, পথ দেখিয়েছে। আর প্রথমে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এবং পরে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। 

সৌমেন মন্ডল জানান কোডার্সট্রাস্টের মেন্টরদের কাছে শিখে এখন তিনি নিজেই সফল মেন্টর। পাঁচ শতাধিক প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষিত করেছেন আর মার্কেটপ্লেস থেকে আয় করছেন যা তাকে দিয়েছে সাচ্ছন্দ্যের জীবন। বৃষ্টি বাগচি শিখেছেন গ্রাফিক ডিজাইনিং। এখন চাকরি করেন বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডে। সেখানে সকল পর্যায়ের ডিজাইনিং কাজ এখন তার হাতেই হয়। তার কর্মস্থলে উর্ধ্বতনরা তাকে প্রশংসা করেন। এবং এই অর্জনের পেছনে কোডার্সট্রাস্টের অবদানের কথাই বললেন বৃষ্টি। আর ফরহাদ হোসেন তার গল্প শোনাতে গিয়ে বলেন, দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সে বিষয়ে কাজ করার সুযোগটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কানাডীয় একটি বাইং হাউসের সাথে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসাবে কাজ করছেন ফরহাদ হোসেন।  

অনুষ্ঠানে কোডার্সট্রাস্ট অ্যালামদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন আজিজ আহমদ। আইটি দক্ষতার আরও অগ্রসর ও আধুনিকতম বিষয়গুলো শিখে নেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিশ্ববাজারে নিজেকে প্রমাণিত করতে, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এর বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে আজিজ আহমদ বলেন, আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে আত্মপ্রত্যয় ও আত্মনিয়োজনের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। 

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশেনর মধ্য দিয়ে নেটওয়ার্ক যেমন সম্মৃদ্ধ হবে, তেমনি স্বার্থহীনভাবে একে অপরের সহযোগিতায় আসতে পারবেন এমনটাই মনে করেন আজিজ আহমদ।  

কোডার্সট্রাস্টের উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান ফ্রিল্যান্সারদের দলগতভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, একেকজন একেক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে তারা একত্রিত হয়ে উদ্যোগ নিলে তা সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সকলকে কাছাকাছি নিয়ে আসবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে এনআই খান বলেন, এর মাধ্যমে আরও বেশি প্রশিক্ষণার্থী কোডার্সট্রাস্টে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাবে এবং তারা নিজেরা উপকৃত হবে, কোডার্সট্রাস্টের সুনাম বাড়বে আর সর্বোপরি দেশ উপকৃত হবে। 

ব্যবসায়ী নেতা মেহেদি আলী ও মাহবুব ইসলাম রুনু কোডার্সট্রাস্টের অ্যালামদের সাফল্যের গল্প শুনে তাদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান ও কোডার্সট্রাস্টের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ভবিষ্যতে কোডার্সট্রাস্টের যে কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকারও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা। 

সভাপতির বক্তব্যে কোডার্সট্রাস্টের সিইও মো. শামসুল হক সকলকে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের আহ্বান জানান। কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউল গনি ওসমানি বলেন, কোডার্সট্রাস্ট নতুন নতুন ক্ষেত্রে তার হরাইজন বিস্তৃত করছে আর সেসব ক্ষেত্রে যে সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তাতে কোডার্সট্রাস্টের অ্যালামদের সুযোগটাই বেশি থাকবে। আর সে কারণে এমন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অনেক বেশি গুরুত্ব রাখে।  

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এই উদ্বোধনী দিনে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছিলো কোডার্সট্রাস্টের বনানী ক্যাম্পাস। অ্যালামরা অনেকদিন পরে নিজেদের প্রিয় ক্যাম্পাসে আনন্দময় সময় কাটান আর অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশেনর মধ্য দিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ আরও দৃঢ় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।