অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ইনভার্টার নাকি নন-ইনভার্টার: কোন এসি কিনবেন?

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩:১৩ পিএম, ১০ জুন ২০২৩ শনিবার  

গরমের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলছে। তীব্র গরম থেকে বাঁচতে এসি যেন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মধ্যবিত্তদের এসি কেনার আগে অনেককিছু নিয়েই ভাবতে হয়। এই যেমন কষ্ট থেকে বাঁচতে এসি কিনে অনেককেই গুণতে হয় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বোঝা। মাসে মাসে মোটা অঙ্কের বিল টেনে একসময় মনে হয়, খাজনার চেয়ে যেন বাজনা বেশি।

এসি কিনতে গেলে খেয়াল করবেন তার গায়ে ইনভার্টার বা নন-ইনভার্টার লেখা থাকে। অনেকে জানতে চান, কোন ধরনের এসি ভালো? বিদ্যুৎ বিল কম আসে কোন ধরনের এসি ব্যবহারে? আসলে ইনভার্টার আর নন-ইনভার্টারের আলাদা সুবিধা রয়েছে। কোন পণ্যটি আপনার জন্য উপযুক্ত তা জানতে পারবেন এই প্রতিবেদনে-

ইনভার্টার এসি এবং নন-ইনভার্টার এসি কীভাবে কাজ করে?

ইনভার্টার প্রযুক্তিতে এসি প্রথমে পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়। এরপর ঘরের তাপমাত্রা যখন আরামদায়ক পর্যায়ে পৌঁছে তখন এসিটি শক্তি খরচ কমিয়ে নিয়ে আসে। এভাবে কম শক্তিতে চলার কারণে বিদ্যুৎ কম ব্যয় হয়। ফলে বিদ্যুতের বিলও কম আসে।

অন্যদিকে, নন-ইনভার্টার প্রযুক্তিতে এসি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কেবল অন-অফ হওয়ার মাধ্যমে। অর্থাৎ এসি পূর্ণ শক্তিতে চালু হবার পর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক অবস্থায় আসলে বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়, তখন এসি আবার চালু হয়। এভাবে বার বার এসি চালু ও বন্ধ হবার কারণে বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।

কেন ইনভার্টার এসি কিনবেন?

আপনি যদি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে এসির হাওয়া খেতে চান তবে অবশ্যই ইনভার্টার এসি কিনুন। এই এসির কিছু সুবিধা চলুন জেনে নেওয়া যাক।

পরিবেশবান্ধব

ইনভার্টার এসির অন্যতম বড় সুবিধা হলো এর কম্প্রেসারের মোটরটি প্রয়োজনমত নিজস্ব চলার গতি পরিবর্তন করতে পারে। এতে এমন একটি সেন্সর থাকে যা ঘরের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে কম্প্রেসারটিকে পুরোপুরি বন্ধ না করে, মোটরটির চলার গতি কমিয়ে দেয়। এর কারণেই বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে, যা পরিবেশবান্ধব। নন-ইনভার্টার এসির কম্প্রেসার বার বার চালু-বন্ধ হয়। তাই অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে, যা পরিবেশবান্ধব নয়।

সাশ্রয়ী

যেকোনো এসির কম্প্রেসার ইউনিট প্রতিবার চালু হওয়ার সময় অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে। ইনভার্টার এসিতে কম্প্রেসার ইউনিট বার বার বন্ধ-চালু হয় না। বরং গতি কমিয়ে চলতে থাকে। এভাবে চলার কারণে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ বিল কম আসে। নন-ইনভার্টার এসিতে প্রতিবার কম্প্রেসার ইউনিট চালু হবার সময় অনেক বিদ্যুৎ টানে। এ কারণেই মূলত বিদ্যুৎের খরচ বাড়ে, ফলে বিলও বেশি আসে।

শব্দের তীব্রতা

এসি যত কম শব্দ করবে ততই শান্তি। ইনভার্টার এসির কম্প্রেসার নন-ইনভার্টার/সাধারণ এসির মতো বার বার চালু এবং বন্ধ হয় না। এটি প্রয়োজনমত গতি কমিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। শব্দের তীব্রতাও থাকে ক্ষীণ। নন-ইনভার্টার এসির কম্প্রেসার বার বার বেশ শব্দ করে চালু এবং বন্ধ হয়। এমনকি যখন চলে তখনও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশ শব্দ তৈরি করে।

দ্রুত শীতলতা

ইনভার্টার এসিতে ঘর দ্রুত ঠান্ডা হয়। কারণ এসি চালু হবার সময়ে ইনভার্টার এসি সাধারণ এসির চেয়ে বেশি শক্তি খরচ করে দ্রুত ঘর ঠান্ডা করে, এরপর শক্তি কমিয়ে ধীরে চলতে থাকে। কিন্তু নন-ইনভার্টার এসি চালুর সময় স্বাভাবিক শক্তিতেই চালু হয়, কিছু সময় ধরে ঘর ঠান্ডা করার পর আবার পুরো বন্ধ হয়। ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আবার চালু হয়। তাই ঘর ঠান্ডা হতে বেশি সময় লাগে।

কোন ব্র্যান্ডের এসি কিনবেন?

বাজারে অনেক প্রতিষ্ঠানই ইনভার্টার এসি এনেছে। জেনারেল, হিটাচি, স্যামসাং, ওয়ার্লপুল, গ্রি ইত্যাদি কোম্পানির এসি কিনতে পারেন। বেছে নিতে পারেন হায়ার, ক্যারিয়ার, মিডিয়া, প্যানাসনিক ইত্যাদি ব্র্যান্ড। ট্রান্সটেক ও ওয়ালটনেরও ইনভার্টার এসি রয়েছে। প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা অনুযায়ী কিনুন পছন্দের ব্র্যান্ডের এসি।

নন-ইনভার্টারের এসির তুলনায় ইনভার্টার এসির দাম কিছুটা বেশি। তবে এতে আপনি সহজে ঘর ঠান্ডা করার সুবিধা পাবেন। বিদ্যুৎ বিল হাতের নাগালে রাখার সুবিধা তো রয়েছেই। এখন সিদ্ধান্ত আপনার। ভেবে দেখুন, একটু বেশি দামে এসি কিনবেন নাকি মাস শেষে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল টানবেন?