অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ফেসিয়াল প্যারালাইসিস কেন হয়?

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৬:৪৪ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২৩ সোমবার   আপডেট: ০৬:৪৫ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২৩ সোমবার

হঠাৎ কোনো এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার মুখ একদিকে বেঁকে গেছে! কুলি করতে গেলে পানি ঠোঁট বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে, চোখ বন্ধ করতে পারছেন না! কী ভয়ংকর অনুভূতি হবে তখন, তাই না? এটি একটি রোগ, যার নাম ফেসিয়াল প্যারালাইসিস।

মানব দেহের সপ্তম ক্রেনিয়াল নার্ভটিকে ফেসিয়াল নার্ভ বলে। যখন এটি আংশিক বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে যায়, তখন তাকে ফেসিয়াল পলসি বা ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস বলে। এই ক্ষেত্রে মুখের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে যায় বা একপাশে প্যারালাইজড হয়ে যায়। এটি মুখের মাংসপেশীর সঙ্গে যুক্ত স্নায়ুগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে হয়।

তবে এই পেশীগুলো কিন্তু সাময়িকভাবে আক্রান্ত হয় এবং নিয়মিত চিকিৎসার ফলে এই রোগ সাধারণত পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। ফেসিয়াল পলসি সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ভালো হতে শুরু করে। নার্ভ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে রোগটা কতদিনে ভালো হবে।

কাদের বেশি হয়?

এটি যেকোনো বয়সের নারী ও পুরুষের হতে পারে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের এই রোগটি বেশি দেখা যায়। এছাড়া প্রেগনেন্সির সময়, ফুসফুসের ইনফেকশন, ডায়াবেটিস এবং পরিবারের কেউ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে ফেসিয়াল পলসি বা প্যারালাইসস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের কারণ

ভাইরাল ইনফেকশন, মধ্য কর্ণে ইনফেকশন, ঠান্ডাজনিত কারণ, আঘাতজনিত ও মস্তিষ্কের স্ট্রোকজনিত কারণ, ফেসিয়াল টিউমার এবং কানের অপারেশন পরবর্তী ফেসিয়াল নার্ভ ইনজুরি ইত্যাদি কারণে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস হতে পারে।

লক্ষণগুলো কী কী?

এই রোগে আক্রান্ত রোগীর মুখ সাধারণত একদিকে বাঁকা হয়ে যায়। তবে শতকরা এক ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে মুখের দুই পাশ আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোগীর মুখের যে পাশ আক্রান্ত হয়েছে, সে পাশের চোখ বন্ধ হয় না এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে। অনেক সময় চোখ পুরোপুরি খুলতেও কষ্ট হয়। রোগী কপাল ভাঁজ করতে পারে না।

ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের চিকিৎসা

এর চিকিৎসা রোগের কারণের উপর নির্ভর করে। কী কারণে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস হয়েছে, তার উপর নির্ভর করে মেডিসিন দেওয়া হয়ে থাকে। তবে সব ক্ষেত্রেই মেডিসিনের পাশাপাশি মূল চিকিৎসা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। ফেসিয়াল পলসিতে আক্রান্ত হওয়ার ৭২ ঘন্টার মধ্যে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু হলে রোগীর দ্রুত ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণত এই রোগের জন্য স্টেরয়েড মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। ‘ড্রাই আই’ প্রতিরোধ করার জন্য আই ড্রপ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া চোখ একেবারে বন্ধ না হলে ঘুমানোর সময় সার্জিক্যাল টেপ দিয়ে চোখ বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ফিজিওথেরাপি ও ঘরোয়া চিকিৎসা

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান করে থাকেন। তার মধ্যে ফেসিয়াল মাসল এক্সারসাইজ, স্পিচ রি-এডুকেশন, বেলুনিং এক্সারসাইজ, ইলেক্ট্রো থেরাপি রয়েছে। অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি থেকে দিনে ২-৩ বার ফিজিওথেরাপি নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। যদি নার্ভ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে রোগী সুস্থ হতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লেগে যায়। ফেসিয়াল ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। চোখের জ্বালা-পোড়া এবং ব্যথা কমাতে নরম টাওয়াল উষ্ণ পানিতে ভিজিয়ে চোখে সেঁক দেওয়া যায়। একটা গ্লাসে অল্প পানি নিয়ে তার ভেতর স্ট্র দিয়ে বুদবুদ তুলবেন। এতে ঠোঁটের চারপাশের মাংসপেশী শক্তিশালী হবে, পানি পান করার সময় আর গাল বেয়ে পড়ে যাবে না।

কথা বলুন, এতে করে কথা বলার জড়তা কমে আসবে। কোনো শব্দ উচ্চারণে সমস্যা হলে প্রথমে স্বরবর্ণগুলো জোরে জোরে উচ্চারণ করুন। তারপর ব্যঞ্জনবর্ণ অনুশীলন করবেন। রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করবেন। ব্রেথিং এক্সারসাইজ, ইয়োগা এগুলো আপনাকে রিল্যাক্স থাকতে সাহায্য করবে।

নিয়মিত ফিজিওথেরাপিস্টের শেখানো এক্সারসাইজ করবেন। এছাড়া নিয়মিত ৮ ঘণ্টার ঘুম, হেলদি ডায়েট এবং প্রচুর পানি পানি করবেন। এসব ক্ষেত্রে হেলদি লাইফস্টাইল আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।