অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

এইসব পড়া আর লেখা

মালেকা পারভীন 

প্রকাশিত: ১০:৫৮ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২০ শনিবার   আপডেট: ১১:০৩ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২০ শনিবার

কোন মাসে সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে অতিরিক্ত একদিন ছুটি মিলে গেলে কিছু সময়ের জন্য দারুণ আনন্দে ঘুরপাক খেতে থাকি। মনেমনে অবশ্য। সেই আনন্দের সিংহভাগ জুড়ে থাকে ওই একটা অতিরিক্ত ছুটির দিন কত রকম কাজে লাগানো যায় তার পরিকল্পনা করে। বাস্তবতা হচ্ছে, পরিকল্পনার বেশিরভাগ কল্পনা হয়েই থাকে। 

কথায় যে বলে, পাগলের ভেবেই সুখ। আমার ক্ষেত্রেও মনে হয় তাই। তবে নিজেকে স্বান্তনা দিই এই বলে, সারা সপ্তাহ-মাস জুড়ে কী পরিশ্রমটাই না করতে হয়। এই যে করোনার কারণে কত অফিস হোম অফিস করলো, তোমরা তো কেবল এক এপ্রিল মাসেই যা একটু এমন সুযোগ পেয়েছিলে, এরপর তো টানা অফিস, এমনকি কখনো কখনো সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও। সেজন্যই তো একদিন হঠাৎ ছুটি মিলে গেলে এমন এলোমেলো আনন্দে মন ভাসতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে।

দু'জায়গায় লেখা পাঠানোর ডেডলাইন শেষ হয়ে গেছে আরো আগেই। আশা করেছিলাম, আজ ছুটির দিনটা কাজে লাগিয়ে লেখা শেষ করে পাঠাতে পারবো। তা আর হলো কই। 

গত রাতে লেখার প্রস্তুতি নিয়ে বসলাম। তারপর অনলাইনে গার্ডিয়ান পত্রিকার এক গাদা নতুন-পুরোনো সাহিত্যভিত্তিক নিবন্ধ পড়ে ঘুমে কাদা হয়ে ঢুলে পড়লাম। ব্রিটিশ উপন্যাসিক উইলিয়াম বইড এর রাশান লেখক চেকফ এর দাম্পত্য জীবনের ওপর একটি লেখা পড়তে পড়তে আমার জেগে থাকার সময় ফুরিয়ে এলো। নিজের লেখালেখি শিকেয় উঠলো।

গভীর ঘুমের ঘোরে নিজেকে আবিষ্কার করলাম এক কাফের ভেতরে। টেক এওয়ে কফির অর্ডার করেছি। কাউন্টারের উল্টা পাশে বসা এক সুদর্শন ফরেনার আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার সেই দৃষ্টিতে স্পষ্ট প্রেমের নিবেদন। তড়িঘড়ি করে দুটা কফির পেপার মাগ নিয়ে বের হয়ে এলাম। তারপর কোথাও কিছু দুর্ঘটনা। লোকজনের ছোটাছুটি। চাপা পড়া বাড়িঘর। এর মধ্যেও সেই প্রেমমুগ্ধ জোড়া চোখের আমাকে অনুসরণ।

মোবাইলে সকাল সাড়ে সাতটার এলার্ম দেওয়া ছিল। এলার্ম নিজ হাতে বন্ধ করে কখন উঠেছি তা আর নাইবা বলি। কাজের ফাঁকে এলোপাতাড়ি বই, প্রবন্ধ, নিবন্ধ পড়লে স্বপ্নেও তার প্রতিফলন ঘটবে, এতে অবাক হবার কী আছে! (সুপুরুষ চেকফ এর ছবি যতবার দেখি, ততবার মুগ্ধ হই। স্বপ্নে দেখা সুদর্শন চেকফ ছিলেন কিনা সেটা কনফার্ম হতে পারিনি!)

যত বই এবং পড়ার উপকরণ জমা হয়েছে কিন্ডল রিডার আর মোবাইলে, এই এক জীবনে তা পড়ে শেষ করা সম্ভব হবে না জেনে বুঝেও গত দুই দিনে আরো কিছু বই কিনে জমা করেছি। এ বিষয়ে মাঝেমাঝে নিজেকে এই বলে প্রবোধ দিই, যা লেখার তা তো সব লেখা হয়েই গেছে (বিশেষ করে দুদিন আগে ব্রাজিলিয়ান লেখক JOAQUIM MARIA MACHADO DE ASSIS এর লেখা পড়ে এই ধারণা আবারো বদ্ধমূল হয়েছে)। বরং যে কটা দিন বেঁচে-বর্তে আছো, অবসরে ওইসব লেখা পড়ে পার করে দাও। 

একটা ফুল টাইম প্রফেশনে থাকার পর এসব লেখালেখির হাঙ্গামা না হয় নাইবা করলে। সবাই নির্মল পাঠাভ্যাসের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনা। তোমার তো অন্ততপক্ষে ওই গুণ আছে। সেটা নিয়েই মোটামুটি স্ট্রেসবিহীন একটা জীবন কাটিয়ে দাও। ইত্যাদি। 

আমার এক আমি এরকম যুক্তি-তর্ক দিয়ে যেতে থাকে, আরেক আমি চোখ বুজে সেগুলো শুনতে থাকে আর হাতের আঙ্গুলে লেখা জমা দেবার ডেডলাইন কতদিন আছে সেই হিসাব করতে থাকে।

মালেকা পারভীন: কথাসাহিত্যিক ও গল্পকার।