অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ঢাকা টেস্ট: মিরাজের ঘূর্ণিতে কিছুটা আশা দেখছে বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৬ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ রোববার  

শেষ বিকেলে স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে ঢাকা টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। মিরাজের বোলিং তোপে দিনের শেষ বিকেলে ৪ উইকেট হারিয়েছে  সফরকারী ভারত। ম্যাচ জিততে  বাকী দু’দিনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৬ উইকেট। ভারতের দরকার ১০০ রান। বাংলাদেশের দেয়া ১৪৫ রানের জবাবে তৃতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে ৪৫ রান করেছে ভারত। মিরাজ ৩ উইকেট নেন। 

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২২৭ রানের জবাবে  ভারতের সংগ্রহ ছিল  ৩১৪ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।  

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ তৃতীয় দিনের শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে লেগ বিফোর আউট করেন ভারতের স্পিনার রবীচন্দ্রন অশি^ন। রিভিউ নিয়েও টিকতে পারেননি শান্ত। ৫ রান নিয়ে শুরু করে সেখানেই  থামেন শান্ত। 
দলীয় ১৩ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার জাকির হাসান ও প্রথম ইনিংসে ৮৪ রান করা মোমিনুল হক। এই ইনিংসে মোমিনুলকে বড় ইনিংস খেলতে দেননি পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। তার  করা ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে  উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৫ রানে বিদায় নেন মোমিনুল। 

পতন হওয়া প্রথম দুই উইকেটে ১৩ রান করে জুটি হলেও জাকিরকে নিয়ে সাবধানে খেলতে থাকেন চার নম্বরে ব্যাট হাতে নামা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ৩০এর বেশি বল খেলে উইকেটে সেটও হয়ে যান সাকিব।

সেট হয়ে পেসার উনাদকতের বলে এক্সট্রা-কভারে শুভমান গিলকে সহজ ক্যাচ দেন ১টি চারে ৩৬ বলে ১৩ রান করা সাকিব ।  আউট হওয়ার আগে জাকিরের সাথে তৃতীয় উইকেটে ৭১ বলে ২৫ রান যোগ করেন টাইগার দলনেতা। 

সাকিবের বিদায়ে উইকেটে আসা  মুশফিকুর রহিম অন্য প্রান্তে উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া জাকিরের সাথে জুটির চেষ্টা করেন।  কিন্তু মধ্যাহ্ন-বিরতির ১১ বল আগে  স্পিনার অক্ষর প্যাটেলের বলে লেগ বিফোর আউট হন মুশি। আম্পায়ারের আউটের সিদ্বান্তের পর রিভিউ নিয়েও টিকতে পারেননি ১৯ বলে ৯ রান করা  মুশফিক।
ব্যাটিং বিপর্যয়ে প্রথম সেশনে চার উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।  এ সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩৩ ওভারে ৪ উইকেটে ৭১ রান।  ৬ উইকেট হাতে নিয়ে তখনো ১৬ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।

বিরতির পর পঞ্চম ওভারেই লিড নেয় বাংলাদেশ। লিডের পর টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করা জাকির। 
১২৯ বলে হাফ-সেঞ্চুরিতে পা দেয়ার পর নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি জাকির। উমেশের শর্ট ও অফ-স্টাম্পের বলে ব্যাট চালিয়ে ডিপ থার্ডে সিরাজকে ক্যাচ দিয়ে  আউট হওয়া  জাকির  ১৩৫ বল খেলে ৫টি চারে ৫১ রান করেন ।

জাকিকের আউটের পর উইকেটে আসা  মেহেদি হাসান মিরাজ রানের খাতা খোলার আগেই প্যাটেলের শিকার হন । এতে  ১১৩ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় উইকেটে এসেই ভারতের বোলারদের উপর চড়াও হন নতুন ব্যাটার উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় দ্রুত রান তুলছিলেন তিনি। প্যাটেলের বলে ব্যক্তিগত ২৭ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান নুরুল। ঐ প্যাটেলের বলে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড  আউট হন ২৯ বলে ৩১ রান করা নুুরুল।  লিটনের সাথে সপ্তম উইকেটে ৪৮ বলে ৪৬ রান যোগ করেন তিনি।

২০ রানে জীবন পাওয়া লিটন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন। ৭৪ বলে হাফ-সেঞ্চুরির পর পেসার তাসকিনকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন লিটন। তাসকিন-লিটনের দুর্দান্ত লড়াইয়ে বাংলাদেশের স্কোর ২শ স্পর্শ করে। এই জুটি গড়ার সময় রিভিউ নিয়ে একবার করে রক্ষা পান লিটন ও তাসকিন।

শেষ পর্যন্ত  সিরাজের বলে বোল্ড   আউট হওয়ার আগে ৯৮ বলে  সাত বাউন্ডারিতে ৭৩ রান করেন লিটন।  তাসকিন-লিটন  অষ্টম উইকেটে ৭৬ বলে ৬০ রান যোগ করেন। লিটনের পর আম্পায়ারস কলে অশ্বিনের বলে লেগ বিফোর হন ১ রান করা তাইজুল। 

আর শেষ ব্যাটার হিসেবে  ৪ রানে খালেদ আহমেদ রান আউটের শিকার হলে ২৩১ রানে শেষ হং বাংলাদেশের দ্বিতীয়  ইনিংস।  ৪টি চারে ৪৬ বল খেলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন তাসকিন। ভারতের প্যাটেল ৩টি, সিরাজ ও অশ্বিন ২টি করে উইকেট নেন। ভারতকে ১৪৫ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। 

জবাবে শুরুটা ভালো হয়নি ভারতের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে ভারত অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে ২ রানে বিদায় করেন সাকিব। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রাহুল। 

অষ্টম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই উইকেট শিকার করেন  স্পিনার মিরাজ। উইকেট ছেড়ে খেলতে এসে মিরাজের বলে স্টাম্পড  আউট হন ৬ রান করা  পূজারা।

১৪তম ওভারে পূজারার মত মিরাজের বলে একই ধরনের আউট হন ওপেনার শুভমান গিল। ৭ রান করে গিল আউট হলে ২৯ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। 
সাবধানে খেলে দিন শেষ করার লক্ষ্য ছিলো নাইটওয়াচম্যান অক্ষর প্যাটেল ও বিরাট কোহলির। শেষ বিকেলে কোহলিকে ১ রানে বিদায় করেন মিরাজ।  
শেষ পর্যন্ত উনাদকতকে নিয়ে দিন শেষ করেন প্যাটেল। উনাদকত ৩ ও প্যাটেল ২৬ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশ মিরাজ ১২ রানে ৩ উইকেট নেন। ২১ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।