অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বিজয়ের প্রতীক বঙ্গবন্ধু

শেখ আনোয়ার

প্রকাশিত: ১১:১৬ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ শুক্রবার  

বিজয়, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ। তিনটি শব্দ বাঙালির কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই বিজয় অর্জনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশবাসীকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়। বাঙালি জাতির রয়েছে দীর্ঘকাল লড়াইয়ের ইতিহাস। বাঙালি জাতি কখনো পরাজয় মানে না। যেকোনো যুদ্ধে বাঙালি জাতি জয়ী হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা দেশকে পুরোপুরি শত্রুমুক্ত করে বিজয় অর্জন করি। আমরা পাই হাজার বছরের কাঙ্খিত স্বাধীনতা। স্বাধীন মানচিত্র ও স্বাধীন পতাকা।

এর আগে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের নামে বাংলায় তাদের রাজত্ব কায়েম করে। ১৯৪৮ সাল থেকে বাঙালিদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে এদেশের ছাত্রসমাজ ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে পশ্চিমা শাসকদের ওপর অসন্তোষ ধূমায়িত হতে থাকে। উর্দু ভাষাকে এদেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তাই মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষার তাগিদ থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ বপন হয়। নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালির রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাস বহু পুরনো। পৃথিবীর নানান অঞ্চল থেকে আসা ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বাঙালি লড়াই করেছে ধারাবাহিকভাবে। উপমহাদেশব্যাপী উপনিবেশায়নের এ লড়াই কোথাও চলেছে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে, কোথাও বাঙালিকে লড়তে হয়েছে একা। জী হ্যাঁ। লড়াইটা বাঙালির রক্তেই মিশে রয়েছে। বাঙালির চেতনায় প্রোথিত রয়েছে শত সংগ্রামের ইতিহাস।

পাকিস্তানের জন্মের পর পূর্ব পাকিস্তানে অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। পাকিস্তান শাসনের ২৪ বছরের পুরোটা সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের মুক্তি আন্দোলনে অতিবাহিত করেছেন। এর প্রায় অর্ধেক সময় অর্থাৎ এক যুগই তিনি কাটান কারাগারে। পাকিস্তানের স্বাধীনতার মাত্র ৮ মাসের মাথায় ১৯৪৮ সালে তিনি কারাবরণ করেন। স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাত দিন কারাভোগ করেন। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তিনি কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনা করেন। ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক আইন, ১৯৬২, ‘৬৪ ও ‘৬৫- এরই পথ ধরে ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামে বারবার কারাবরণ করার পরও বাঙালির স্বাধীনতার ব্যাপারে তিনি ছিলেন আপোসহীন। 

১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবর সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে টেলিভিশন ও রেডিওতে দেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘যে সংকট আজ জাতিকে গ্রাস করতে চলেছে তার প্রথম কারণ, দেশবাসী রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। দ্বিতীয় কারণ, জনগণের এক বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ অর্থনৈতিক বৈষম্যের কবলে পতিত। তৃতীয় কারণ, অঞ্চলে অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষ্যমের জন্য সীমাহীন অবিচারের উপলব্ধি জন্মেছে। প্রধানত এগুলোই বাঙালির ক্ষোভ অসন্তোষের কারণ। পশ্চিম পাকিস্তানের অবহেলিত মানুষেরও আজ একই উপলদ্ধি।’ তিনি বৈষম্য তুলে ধরে পাকিস্তানের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণা করে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘গণতন্ত্র ধ্বংসের যেকোনো পদক্ষেপ পাকিস্তানকেই ধ্বংস করবে।’ তিনি বক্তব্য শেষে বলেন- ‘ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হবো।’ বঙ্গবন্ধু এমনই ছিলেন। গবেষকরা বলেন, এক হাতে জট ছাড়াতে ছাড়াতে, আরেক হাতে সেই জটিলতাকে মূলধন করে একটা বিস্ফোরক আন্দোলন তৈরি করার কাজটা সেদিন অতো সোজা ছিলো না। একটা দেশকে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করা সহজ কথা নয়। তিনি বঙ্গবন্ধু। তাই তিনি পেরেছেন।

বঙ্গবন্ধু হঠাৎ হুইসেল বাজিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। বঙ্গবন্ধু কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন? তার পটভূমি তিনি ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে সুনিপুণভাবে ব্যক্ত করেছেন। ভাষা আন্দোলনের ধারায় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।’ ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা কিছু আছে আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে।’ অসংবদ্ধ বাক্যগঠন, স্থানিক ভাষা। কিন্তু এটাই বাংলার মানুষের প্রাণের ভাষা। আবেগ-উদ্দীপিত বাক্য। সোজা-সোজা শব্দ হলেও যেনো তীরের ফলার মতো গেঁথে যায় বিদ্রোহী বিক্ষুব্ধ দেশের পথে প্রান্তরে। সোজা গিয়ে তা মর্মস্থলে বিঁধে। তা জানতেন ক্যারিশমেটিক নেতা শেখ মুজিব। নিজেকে তিনি একদম নামিয়ে আনতেন এবং নিজেকে ভাসিয়ে দিতেন গণমানুষের স্রোতে। তাঁর অপূর্ব বাগ্মিতা, কিন্তু তাতে আনুষ্ঠানিকতা নেই। ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’। বাংলা ভাষায়, মায়ের ভাষায় এর চেয়ে সহজ সংগ্রামী বার্তা আর কি হতে পারে? তাই ৭ মার্চে ঢাকার সেই ঐতিহাসিক ভাষণ আধুনিককালের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। 

এরপর এলো ২৫ মার্চ। ভয়াবহ কালরাত্রি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে পাকিস্তানি সামরিক শাসক বর্বর বাহিনী দিয়ে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানের সামরিকজান্তা ঢাকাসহ সারাদেশে গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২টা ২০মিনিটে অর্থাৎ ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর পাকিস্তানিদের অত্যাচারে গোটা বাংলাদেশে সংগ্রামের আগুন জ্বলে ওঠে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষিত সৈনিক ছিলেন না। তাদের না ছিলো অস্ত্র, না ছিলো যুদ্ধের উপযোগী সাজ-সরঞ্জাম, জামাকাপড়, খাবার-ওষুধ-আশ্রয় ইত্যাদি। খালি পায়ে হেঁটে, কাদা পানি পেরিয়ে, হেমন্তে-শীতে খালি গায়ে সাধারণ বাঙালির এই ঐতিহাসিক যুদ্ধ সম্ভব হতো না, যদি না তাদের আশ্চর্য মনোবল থাকতো। কিন্তু কী করে এলো এই আশ্চর্য মনোবল? এলো বঙ্গবন্ধুর আঙ্গুল উঁচানো- চোখে ভাসা প্রতিচ্ছবি থেকেই। নেতার প্রতি গণমানুষের আপ্রাণ প্রতিশ্রুতি থেকে। এই নেতার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নাম ধরে উচ্চারিত হতো যুদ্ধের শ্লোগান: ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’, ‘বঙ্গবন্ধু এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’। দিগন্ত-কাঁপানো ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের সঙ্গে মিশে যেতো শেখ মুজিবের অবয়ব। চোখে ভেসে উঠে বঙ্গবন্ধুর চেহারার ভাস্কর্য, বঙ্গবন্ধুর তর্জনীর তীরের প্রতিকৃতি। হাতে বাঁশের লাঠি, মুখে তাঁর দেয়া ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান। তাঁর নামে শপথ নিয়ে একটা জাতি যেনো উদ্বেল হয়ে ফুঁসে উঠে।

যে কারণে বাংলার শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতা গড়ে তোলেন মুক্তিবাহিনী। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাঙালি ধর্মীয় কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠে হাজার বছরের বাঙালি পরিচয়কে প্রধান বিবেচনা করে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একই পতাকা তলে সমবেত হন। এই একতা মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিকে নতুন প্রেরণা দান করে। দেশের অনেক মানুষ নিরুপায় হয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেন। সেখানে গড়ে ওঠে ত্রাণশিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে জলে-স্থলে, অন্তরীক্ষে মুক্তিযোদ্ধারা সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেন। যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনারা দেশীয় বিকৃত ধর্মান্ধ রাজাকার, আলবদর ও আলশাম্স বাহিনীর সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে এদেশের আলোকিত, মেধাবী ও বরেণ্য ব্যক্তিদের। দেশের ভিতরে অবরুদ্ধ জীবনযাপন করতে করতে প্রাণ দিয়েছেন অসংখ্য কৃষক, মজুর, ছাত্র, সাংবাদিক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ৩০ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশুর রক্তে ভেজা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলার মাটি কাঁপিয়ে ন’মাসের তীব্র যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালে বাঙালি ছিনিয়ে আনে বহু কাঙ্খিত বিজয়ের রক্তিম সূর্য। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের গৌরবের বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয় এসেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। যে বিজয় পেয়েছে এদেশের বাংলার বাঙালি, তার প্রধান কারিগর বঙ্গবন্ধু। তাই বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতিসত্তা, স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যাতে এদেশের মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। তাঁর রাজনীতির মূলমন্ত্রই ছিলো আদর্শের জন্য সংগ্রাম। আদর্শের জন্য ত্যাগ। যে আদর্শ, বিশ্বাস ও স্বপ্ন নিয়ে তিনি রাজনীতি করতেন, শত কষ্ট ও প্রচণ্ড চাপেও তিনি তাতে অটল ছিলেন। তাঁর আদর্শ, ত্যাগ, দূরদর্শিতা এবং অকুতোভয় আপোসহীন নেতৃত্বে দেশ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। বাঙালি জাতি পায় হাজার বছরের কাঙ্খিত বিজয়, স্বাধীন পতাকা ও স্বাধীন মানচিত্র। তাঁর হাত ধরেই ভঙ্গুর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবার পথ দেখেছে। তাই বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিমাত্র নন। যতোদিন রবে বাংলাদেশ, ততোদিন বঙ্গবন্ধু অমর হয়ে থাকবেন। তিনি অবিনশ্বর এক আদর্শ ও প্রেরণার নাম। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের বিজয়ের প্রতীক হয়ে থাকবেন। যতোদিন বাংলাদেশের বাংলাদেশের মানচিত্র থাকবে, ততোদিন লাল-সবুজ পতাকা উড়বে পতপত করে। ততোদিন আমরা গাইবো- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। 

বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন স্বাধীন দেশ, পতাকা এবং মানচিত্র। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতিকে দিয়েছেন উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও অর্থনৈতিক বিজয়। বাঙালি জাতি আজ সত্যি ধন্য। কারণ-এই জাতি বিজয় দেখেছে। বাঙালি ধন্য, কারণ-এই জাতি শেখ মুজিবুর রহমানের মতো পিতা পেয়েছে। পেয়েছে শেখ হাসিনার মতো বঙ্গবন্ধুকন্যা। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে দিয়েছে আত্মমর্যাদা সম্পন্ন দেশ। দিয়েছে বিশ্বের দরবারে দাঁড়াবার সাহস। নিম্নআয়ের কাতার থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনকালেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পায়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ এ সরকারের অন্যতম বৃহৎ অর্জন। এছাড়াও মহাকাশে ওড়ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, চালু হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। মেট্রোরেলও কিছুদিনের মধ্যেই চালু হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুতেও রেল সংযোগ হচ্ছে। দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, পায়রা বন্দর নির্মাণ এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। এভাবেই শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের উন্নয়নে একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরের কাজও এগিয়ে চলেছে। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু করা সম্ভব হবে। সেখানে নাগরিকেরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে। সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে। বৈশি^ক সংকটকালেও দেশের অর্থনৈতিক বিজয় আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু কি তাই? বাংলাদেশের বিজয়ের পতাকা এখন বিশে^র নানান দেশে ওড়তে দেখা যায়। বাংলাদেশের মেধাবী তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন সেক্টরে ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে বাংলাদেশের গৌরব বয়ে আনছেন। এই প্রজন্মের ক্রিকেট, ফুটবল খেলোয়াড়রা বিশ^ জয়ের মুকুট মাথায় নিয়ে দেশে ফিরছেন। এক কথায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বের গুণে অর্জিত হয়েছে এবং হচ্ছে।

শেখ আনোয়ার: লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।