অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

‘সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন ড. এস এম ইমামুল হক

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১২ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২২ সোমবার  

‘সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রখ্যাত মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হক । ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসে তাঁকে এ সম্মাননা প্রদান করে কৃষি মন্ত্রণালয়। আয়োজনে সহযোগী ছিল জাতিসংঘের খাদ্য কৃষি সংস্থা এবং মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। এর আগে তিনি অর্জন করেছেন বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস গোল্ড মেডেল ২০০৪, বাংলাদেশ ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড ২০০৭, বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক ২০০৮, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পদক ২০০৯, সয়েল সায়েন্টিস্ট অব দ্য ইয়ার ২০১০, এডুকেশন পিস অ্যাওয়ার্ড ২০১৮, ধরিত্রী জাতীয় সম্মাননা ২০১৮-সহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।

খ্যাতিমান এই বিজ্ঞান গবেষকের ৩১০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি গবেষণা করে দেখিয়েছেন, নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করার ফলে খাদ্য শষ্যের উৎপাদন বাড়লেও এর গুণগত মান ও আবশ্যক এমিনো এসিডের পরিমাণ কমে যায়। দু’ধরনের ডাল জাতীয় শষ্যের উপরে লবনাক্ততার প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। মাটি থেকে পানির মাধ্যমে খাদ্যচক্রে আর্সেনিকের সংক্রমণ এবং প্রকোপ নিয়ে তাঁর গবেষণা দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর অধীনে গবেষণা করেছেন ১১৫ জন গবেষক। তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ৬টি।

ড. এস এম ইমামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, শহীদল্লাহ হলের প্রভোস্ট, জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও গভর্নিং বডির সদস্য, রেডিও টুডে মিডিয়া একাডেমির অনারারি ডিনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক ও উপদেষ্টা ছিলেন। বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতির সাবেক সভাপতি ড. ইমামুল হক বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ মৃত্তিকাবিজ্ঞান সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের আজীবন সদস্য।

ড. এস এম ইমামুল হক ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে বিএসসি (অর্নাস) ও ১৯৭১ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮০ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অবস্থিত এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এআইটি) থেকে এমএসসি, ফ্রান্সের ন্যান্সি বিশ^বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে সহকারী অধ্যাপক, ১৯৮৬ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ১৯৯১ সালে অধ্যাপক হন। ফ্রান্সে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৮৬ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ফরাসি ভাষা শিক্ষা বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কর্মরত। তাঁর শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১৬ সালে একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘অ্যান ওড টু প্রফেসর এস এম ইমামুল হক : ফরটিটু ইয়ার্স অব ডেডিকেশন টু টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ (১৯৭৩-২০১৬)’ সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাঁর ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস ও বিভাগীয় জার্নালের প্রধান সম্পাদক, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নাল (বিজ্ঞান) ও বাংলাদেশ জার্নাল অব সয়েল সায়েন্সের যুগ্ম সম্পাদক, জার্নাল অব সয়েল সায়েন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্যসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালের পর্যালোচক ড. এস এম ইমামুল হক। বিভিন্ন সময়ে দেশে-বিদেশে অসংখ্য সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেছেন। সফর করেছেন ৫০টিরও বেশি দেশ। তাঁর সহধর্মিনী পারভীন আক্তার খন্দকার (মন্টি ইমাম) ডানকানে কর্মরত ছিলেন, বেশ কয়েক বছর হলো অবসরে গেছেন। তাঁদের দুজন কন্যা সন্তান রয়েছেন, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ড. ইমামুল হক রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থগুলো হলো ‘বুড়ো দাদুর গল্প’, ‘তুলনামূলক দর্শন’, ‘জিকর’ ও ‘অধ্যাপক এ কি এম বি করিমের জীবন ও কর্ম’।