অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

দুইদিনের রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব শুরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৩:২৬ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২২ শুক্রবার   আপডেট: ০৩:২৭ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২২ শুক্রবার

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ‘এই জীবনের ব্যথা যত এইখানে সব হবে গত-’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমন অমিয়বাণী ধারণ করে দুইদিনের সঙ্গীত উৎসবের সূচনা হয়েছে। এদিন রবীন্দ্রনাথের গানের সুরে সুরে সংস্কৃতির লড়াইকে বেগবান করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করা হয়। 

রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে দুইদিনের উৎসব ভাগ করা হয়েছে তিন অধিবেশনে। উদ্বোধনী দিনেই ছিল দুইটি অধিবেশন। সকাল ১০টায় প্রথম অধিবেশনে ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। প্রথমেই দেয়া হয় গুণীজন সম্মাননা। 

তেত্রিশতম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসবে সম্মাননা দেয়া হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম ও সঙ্গীতশিল্পী রফিকুল আলমকে। তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও চেক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। 

সম্মাননা প্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম বলেন, ‘জগতের বিপুল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। আমি আজ তার নামাঙ্কিত সম্মাননা পেলাম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা থেকে৷ এ সম্মাননাটি আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের৷’ 

রফিকুল আলম তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত এ সম্মাননা আমার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যেন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো৷’ 

সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুই শব্দসৈনিককে সম্মাননা দিতে পেরে আমরা গর্বিত।’ এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযুষ বড়ুয়া। 

সংবর্ধিত দুই গুণীর শংসাবচন পাঠ করেন সাগরিকা জামালী ও সীমা সরকার।

উদ্বোধনী অধিবেশনে (সকালে) দ্বিতীয় পর্বে ছিল আমন্ত্রিত পাঁচটি দলের সমবেত পরিবেশনা। এতে অংশ নেয় সঙ্গীতভবন, উত্তরায়ণ, সুরতীর্থ, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী (বাফা) ও বিশ্ববীণা। 

রবীন্দ্রনাথের পূজা-প্রেম পর্যায়ের গানের পাশাপাশি বৈচিত্র্য পর্যায়ের গান দিয়ে সাজানো এই পর্বটি দর্শক শ্রোতাদের বিমোহিত করে। এই পর্বের শুরুতেই মঞ্চে আসেন সঙ্গীতভবনের শিল্পীরা। তারা পর পর গেয়ে শোনালেন ‘লহো লহো তুলে লহো নীরব বীণাখানি’ ও ‘হেমন্তে কোন্ বসন্তেরই বাণী/ পূর্ণশশী ওই-যে দিল আনি’। তাদের পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন উত্তরায়ণের শিল্পীরা। তারাও গেয়ে শোনান দুইটি গান- ‘সত্য মঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রুবজ্যোতি তুমি অন্ধকারে’ও  ‘প্রাণে খুশির তুফান উঠেছে/ভয়-ভাবনার বাধা টুটেছে’। সুরতীর্থের শিল্পীর গাইলেন ‘কবে আমি বাহির হলেম তোমারি গান গেয়ে’ ও  ‘কান্নাহাসির-দোল-দোলানো পৌষ-ফাগুনের পালা’। বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা)-এর শিল্পীরা শোনান ‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে’ ও ‘এখন আর দেরি নয়, ধর্ গো তোরা হাতে হাতে ধর্ গো’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনের সমাপ্তি হয় বিশ্ববীণা শিল্পীদের কণ্ঠে সমবেত গানের মধ্য দিয়ে। তারা শোনান ‘হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা-’ও ‘একি মায়া, /লুকাও কায়া/জীর্ণ শীতের সাজে’।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম পর পর গেয়ে শোনান ‘উত্তর বায় জানায় শাসন/পাতলো তপের শুষ্ক আসন’ ও ‘ওই জানালার কাছে বসে আছে /করতলে রাখি মাথা—’ শিরোনামে দুইটি গান। তার আগেসংবর্ধিত বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’- এর কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করেন।

অগ্রহায়ণের মিষ্টি সকালে মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উৎসবের সূচনা হয় সংগঠনের রীতি অনুযায়ী জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। এর পর সংস্থা শিল্পীরা দুইটি কোরাস পরিবেশন করেন। গান দুইটি ছিল ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ ও ‘তোমার  সুরের ধারা ঝরে যেথায় তারি পারে’। 

উৎসবের দ্বিতীয় দিন ২৬ নভেম্বর (শনিবার) একই মঞ্চে বিকাল ৫টা থেকে হবে আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। উৎসবের সারা দেশ থেকে প্রায় ২০০ জন শিল্পী একক ও দলীয় পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বুলবুল ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, রোকাইয়া হাসিনা, অদিতি মহসিন, ড. অরূপ রতন চৌধুরী, চঞ্চল খান, লিলি ইসলাম সহ বেশ কয়েক জন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী। 

দুই দিনের অনুষ্ঠানে গানের পাশাপাশি আবৃত্তি পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন বাকশিল্পী আশরাফুল আলম, জয়ন্ত রায়, বেলায়েত হেসেন. মাহমুদা আখতার ও রেজিওয়ালী লীনা।

৩৩তম উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে করোনাকালে যে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি ও সংস্কৃতজন মারা গেছেন তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।