অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?

শেখ আনোয়ার

প্রকাশিত: ১২:০৮ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২২ শুক্রবার   আপডেট: ১২:১১ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২২ শুক্রবার

পটকা মাছ খেয়ে মানুষের মৃত্যুর খবর প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে সাধারণত দু’ ধরনের পটকা মাছ পাওয়া যায়, যেমন- স্বাদু পানির পটকা ও লোনা পানির পটকা। স্বাদু পানির পটকা নদ-নদী, খাল-বিল, ডোবা, ইত্যাদিতে পাওয়া যায় এবং লোনাপানির পটকা সমুদ্রে পাওয়া যায়। স্বাদুপানির পটকা আকারে লোনাপানির পটকার চেয়ে অঈেক্ষাকৃত অনেক ছোট। আমাদের দেশে স্বাদুপানিতে এ পর্যন্ত দু’ প্রজাতির পটকা  পাওয়া গেছে। কিন্তু আমাদের সামুদ্রিক পটকার প্রজাতির সংখ্যা জানা নেই।

তবে জাপান সমুদ্রে এ পর্যন্ত একুশ প্রজাতির পটকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪ প্রজাতির পটকাই বিষাক্ত। সে হিসাবে অনুযায়ী আমাদের সমুদ্রের পটকার প্রজাতির সংখ্যা সামান্য কম-বেশি হতে পারে। জাপানীজ বিষাক্ত পটকার চামড়া যকৃত এবং ডিম্বাশয়ে সবচেয়ে বেশি বিষ থাকে। পটকা মাছ নিজের জীবন রক্ষার্থে এসব নিঃসরণ করে থাকে। ডিমে বিষ না থাকলে জলাশয়ে এসব ডিম হয়তো অন্য প্রাণীর সুস্বাদু খাবারে পরিণত হতো। ফলে পটকার বংশ বিস্তার হতো না। তাই বিষ পটকা মাছের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমাদের দেশের স্বাদুপানির সকল পটকাই বিষাক্ত। আমাদের সকল সামুদ্রিক পটকার বিষাক্ততা সম্পর্কে বিশদ তথ্য এখনও জানা নেই। পটকা মাছের বিষাক্ততা স্থান, প্রজাতি এবং ঋতুভেদে ভিন্নতর হয়। অর্থাৎ, বাংলাদেশে পটকা মাছের যে প্রজাতিটি বিষাক্ত জাপানে সেটা বিষাক্ত নাও হতে পারে। অনুরূপভাবে, বৈশাখ মাসে যে পটকা মাছটি বিষাক্ত কার্তিক মাসে সেটি বিষহীন হতে পারে। তবে বিষাক্ত পটকার চামড়া, যকৃতে বিষের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। পটকার মাংসপেশীতে বিষের মাত্রা অপেক্ষাকৃত কম। পটকা মাছ বিষাক্ত কারণ, এর মধ্যে 'টেট্রোডোটক্সিন' নামে এক বিবশকারী বিষ থাকে। এই বিষ কারও শরীরে ঢুকলে মৃত্যু অবধারিত। পটকা মাছের বিষ টেট্রোডোটক্সিন(টিটিএক্স) একটি শক্তিশালী বিষাক্ত পদার্থ যা মানুষের উত্তেজক (এক্সাইট্যাবল) সেল মেমব্রেনের  সোডিয়াম চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম। গবেষণায় দেখা গেছে, পটকা মাছের বিষ সায়ানাইড এর চেয়েও অধিকতর বিষাক্ত এবং জীবননাশক।  স্বাদুপানির পটকার বিষের কার্যকর মৌলিক উপাদান এবং সামুদ্রিক পটকার বিষের মৌলিক উপাদানও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সামুদ্রিক পটকার বিষ টেট্রোডোটক্সিন এবং স্বাদুপানির পটকার বিষ সেক্সিটক্সিন নামে পরিচিত।

পটকা মাছ খাওয়া থেকে আমাদের বিরত থাকাই উত্তম। অনেকের ধারণা পটকা মাছ রান্না করলে এর বিষাক্ততা নষ্ট হয়ে যায়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। অত্যধিক তাপে বিষের উপাদান এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর হতে পারে বটে। কিন্তু এতে বিষাক্ততার খুব বেশি একটা তারতম্য হয় না। আমাদের দেশে সাধারণত: গ্রামীণ জনপদে পটকা মাছ খায়। পটকা মাছের বিষাক্ততা অ¤øীয় মাধ্যমে অধিকতর ক্রিয়াশীল। পটকা মাছ খাওয়া থেকে নিজে সাবধান হোন। আপনার আশে পাশের জনসাধারণকে সচেতন ও সতর্ক করুন।

শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।