অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

শতাধিক মৃত্যুর সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল এই বিড়াল!

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪০ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ সোমবার  

‘অস্কার-দ্য হসপিস ক্যাট’। আশ্চর্যভাবে মৃত্যু বুঝে নেওয়ার দক্ষতা ছিল আমেরিকার এই বিড়ালের। আর সেই কারণেই বিখ্যাত এই বিড়াল। অস্কারের বাসস্থান ছিল আমেরিকার রোড আইল্যান্ডের ‘স্টিয়ার হাউস নার্সিং অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’-এ। হাসপাতাল এবং শুশ্রূষাকেন্দ্রে বিভিন্ন প্রাণী, বিশেষ করে বিড়ালের সংস্পর্শে রেখে কিছু অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করার চেষ্টা করানো হয়। এই বিড়ালদের ‘থেরাপি ক্যাট’ বলা হয়। ‘স্টিয়ার হাউস নার্সিং অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’-এও ‘থেরাপি ক্যাট’ হিসাবেই কাজে লাগানো হত অস্কারকে।

২০০৫ সাল থেকে শুশ্রূষাকেন্দ্রে থাকতে শুরু করে অস্কার। ওই চিকিৎসাকেন্দ্রে অস্কার-সহ মোট ছয়টি ‘থেরাপি ক্যাট’-কে নিয়ে আসা হয়। ২০০৭ সাল নাগাদ অস্কার খবরের শিরোনামে উঠে আসে। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ ‘জেরিয়াট্রিশিয়ান’ (যাঁরা সাধারণত বয়স্ক মানুষদের চিকিৎসা করেন) ডেভিড ডোসার লেখা একটি নিবন্ধে প্রথম প্রকাশ্যে আসে অস্কারের কাহিনি।

ডোসার দাবি, অস্কার অসুস্থ রোগীদের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে তাদের বিছানায় গিয়ে ঘুমতো। অর্থাৎ এই চিকিৎসাকেন্দ্রের কোনো কর্মী যদি দেখতেন যে, অস্কার কোনো রোগীর বিছানায় গিয়ে ঘুমোচ্ছে, তারা ধরে নিতেন যে ওই রোগীর মৃত্যু আসন্ন। এক কথায়, রোগীদের মৃত্যু নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারত অস্কার।

ডোসার ২০১০ সালে লেখা বই, ‘মেকিং রাউন্ডস উইথ অস্কার: দ্য এক্সট্রাঅর্ডিনারি গিফট অব অ্যান অর্ডিনারি ক্যাট’-এ অস্কারের বিভিন্ন কাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত ভাবে লেখা রয়েছে।

ওই চিকিৎসাকেন্দ্রে সাধারণত মানসিক রোগীদের চিকিৎসা চলত। তবে ‘থেরাপি ক্যাট’ হিসেবে আনা হলেও রোগীদের প্রতি অস্কারের আচরণ মোটেও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। বেশির ভাগ সময়ই বিড়ালটি একা একা থাকত। তাকে কেউ কাছে টানার চেষ্টা করলে সে বিরক্তই হত। হাসপাতালের অনেক কর্মী তাকে ‘মেজাজি বিড়াল’ বলেও ডাকতেন। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি কিছু দিন অসুস্থ থাকার পর অস্কারের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর।

অস্কার প্রায় ছয় মাস ওই চিকিৎসাকেন্দ্রে থাকার পরে হাসপাতাল কর্মীরা লক্ষ করেন, সে প্রায়ই রোগীদের পাশে গিয়ে ঘুমোতে পছন্দ করে। আর এর ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়। জোয়ান টেনো নামে এক চিকিৎসকের নজরে প্রথম এই বিষয়টি আসে। তিনি লক্ষ করেন যে, রোগীদের মারা যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে সেখানে এসে উপস্থিত হয় অস্কার।

অস্কার বার বার এ রকম করার পর কর্মীরা তার ‘ক্ষমতা’ সম্পর্কে একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যান। অস্কারকে কোনো রোগীর পাশে ঘুমোতে দেখলেই সেই রোগীর প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে শুরু করতেন চিকিৎসকরা। তবে শেষরক্ষা হত না। অনেকে অস্কারকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মনে করতেন। অনেকে মনে করতেন, রোগীদের নড়াচড়ার ক্ষমতা এবং তাদের শরীরে মৃত কোষ থেকে নিঃসৃত জৈব রাসায়নিক পদার্থের গন্ধ পেত এই বিড়াল। আবার অনেকে এ-ও মনে করতেন যে, অস্কারের গল্প স্রেফ বুজরুকি। অস্কারের এ রকম কোনো ক্ষমতাই ছিল না। একটা-দুটো দৈবাত ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করেছেন ওই চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্মীরা।

২০১৫ সাল পর্যন্ত অস্কার প্রায় ১০০ জনের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছে বলে ওই হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মীদের দাবি।