অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

জবি সেই ছাত্রীর মোবাইল ফোনটি বিক্রি হয় ৪ হাজারে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৩:১৪ পিএম, ৩ আগস্ট ২০২২ বুধবার  

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তারের (২৫) ছিনতাই হওয়া মোবাইল জব্দ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন, রাশেদুল ইসলাম (১৭) ও মূল অভিযুক্ত মো. রিপন ওরফে আকাশ।

বুধবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁও থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রুবাইয়াত জামান।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রুবাইয়াত জামান বলেন, “গত ২১ জুলাই মাস্টার্সের থিসিসের কাজ শেষে বাসযোগে নিজ বাসায় ফিরছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তার (২৫)। তেজগাঁও থানাধীন কারওয়ান বাজারস্থ ওয়াসা ভবনের সামনে আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে ট্রাফিক সিগন্যালে থেমে যায় বাসটি। এ সময় বাসের জানালা থেকে অভিযোগকারী পারিশার হাত থেকে তার ব্যবহৃত পোকো এম থ্রি কালো রঙের মোবাইলটি টান দিয়ে ছিনতাই করে নিয়ে যায় জনৈক অপরাধী। অভিযোগকারী এ সময় দ্রুত বাস থেকে নেমে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরে ফেলতে সক্ষম হন। পারিশার সঙ্গে থাকা তার বন্ধুরা ঘটনাস্থল থেকে অপর সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরে ফেলেন। সন্দেভাজন ব্যক্তি বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলেও, পারিশার মোবাইল চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”

এডিসি রুবাইয়াত জামান বলেন, “ঘটনার পর প্রথমে তেজগাঁও থানায় একটি জিডি লিপিবদ্ধ করেন পারিশা আক্তার। পরবর্তীতে আইনী বিষয় ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতে পুলিশের অনুরোধে একটি মামলা করেন। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং অপরাধীর বিষয়ে অভিযোগকারীর মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাশেদুল ইসলামকে (১৭) প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এক পর্যায়ে ঘটনার সঙ্গে নিজের ও মূল অভিযুক্ত মো. রিপন ওরফে আকাশকে (২৪) জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সে।”

পুলিশ জানায়, ইতোমধ্যে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মো. রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালতে রিমান্ড চাওয়া হলে বিজ্ঞ আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে এবং চুরি করা মোবাইল ফোনটি মাত্র ৪ হাজার টাকার বিনিময়ে কারওয়ান বাজারের চোরাই মোবাইল ক্রেতা মো. শফিকের (২১) কাছে বিক্রয় করেছে বলে জানায়।

অভিযুক্তের বক্তব্য অনুযায়ী, কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় শফিককে এবং তার কাছ থেকে জব্দ করা হয় চোরাই মোবাইলটি।
অভিযুক্ত মো. রিপন ওরফে আকাশের নামে বিভিন্ন থানায় ৬টি মামলা, আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু রাশেদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা এবং চোরাই মোবাইল ক্রেতা শফিকের নামে ২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তেজগাঁও থানা পুলিশও বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনাপূর্বক অপরাধ দমন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতে মামলার তদন্ত কার্যক্রম দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করেছে।

মামলা রুজু হবার ১০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ বুধবার মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে উল্লিখিত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র প্রদান করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে ফোন জব্দ ও ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর উচ্ছ্বাসিত পারিশা বলেন, “ফোন পাওয়াটাই আমার কাছে মুখ্য বিষয় ছিল না। আমি খুব কষ্টে আমার গবেষণাপত্র জমা দিয়েছি। ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে এতেই আমি অনেক খুশি। তাদের ৭/১০ বছর শাস্তি হোক এটাই চাই। আমি চাই এই চুরি ছিনতাইয়ের স্থায়ী সমাধান হোক। আমার মতো যেন আর কেউ এমন ঘটনার শিকার না হয় সেই নিশ্চয়তা চাই। বাংলাদেশ থেকে চুরি ছিনতাই শব্দ মুছে যাক।”

মোবাইল চুরি বা ছিনতাই হলে থানায় মামলা করারও কথা জানান এই শিক্ষার্থী।

তেজগাঁও বিভাগে প্রতিদিন অসংখ্য মোবাইল চুরি এবং ছিনতাই হয়। এমনকি সাংবাদিকদের অনেক মোবাইলও ছিনতাই হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে এডিসি রুবাইয়াত জামান বলেন, “এই কথাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। তেজগাঁও বিভাগে প্রতিদিনই চুরি ও মোবাইল জব্দ করা হয়। জুলাই মাসেও প্রায় ৪০টি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।”

মোবাইল চুরি কিংবা ছিনতাই হলে থানায় গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।