অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

রোহিঙ্গা সঙ্কট: জরুরি সমাধানে জাতিসংঘে রেজুলেশন গৃহীত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:২৩ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার   আপডেট: ১২:৩৪ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

রোহিঙ্গা সঙ্কটের জরুরি সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বিপুল ভোটে রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। বুধবার চতুর্থবারের মতো এ সংক্রান্ত রেজুলেশনটি গৃহীত হয়। ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যৌথভাবে এটি উত্থাপন করে। তাতে ১০৪টি দেশ পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রেজুলেশনটি মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অন্যান্য সহিংসতার শিকার নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বিপুল সংখ্যক জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রের শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও অকুণ্ঠ সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। 

এর পক্ষে ১৩২টি দেশ ভোট দেয়, বিপক্ষে দেয় ৯টি। আর ভোটদানে বিরত থাকে ৩১টি দেশ। ইইউ ও ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আন্তঃআঞ্চলিক জোটের সমর্থন এবং সহপৃষ্ঠপোষকতা পায় রেজুলেশনটি।

এতে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের সাময়িক আদেশ, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের তদন্ত শুরুর বিষয় এবং রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে বঞ্চিত করার মতো নতুন বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

রেজুলেশনটিতে মিয়ানমারকে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়। সেগুলো হলো-রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়াসহ সমস্যাটির মূল কারণ খোঁজা, প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে তাদের নিরাপদ, টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত এবং প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে ওদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা করা।

‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক রেজুলেশনটিকে ধারাবাহিকভাবে সমর্থন জানানোয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। 

তিনি বলেন, এক মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এই সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজছে। তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মধ্যে যা নিহিত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার বাস্ত্যুচুত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় মানবিক দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেছে। সেটার ভূয়সী প্রশংসা করা হয় রেজুলেশনে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মতো বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বড় আশ্রয় শিবিরে কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার রোধে সফল প্রচেষ্টার স্বীকৃতিও দেয়া হয়েছে। 

রেজুলেশনে বাংলাদেশ গৃহীত মানবিক প্রচেষ্টায় সমর্থন প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়। রাবাব ফাতিমা আশা প্রকাশ করেন, এটি বাংলাদেশসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে গঠনমূলক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারকে নতুনভাবে চাপ সৃষ্টি করবে।

এবারের রেজুলেশনের ফলে মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চলমান বিচার ব্যবস্থা আরও বেশি আন্তর্জাতিক সমর্থন পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রেজুলেশনটিতে ভোটে দেয়ার আগে এর সমর্থনে ইইউ’র পক্ষে জার্মানের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ওআইসি’র তরফে সৌদি আরবের স্থায়ী প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। এটি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দীর্ঘকাল ধরে চলমান দুর্দশা মোকাবেলায় অবদান রাখবে; নিজ বাসভূমিতে নিরাপদভাবে এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবে বলে আশাবাদী তারা।

উভয় সংস্থার প্রতিনিধিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, মিয়ানমারকে চ্যালেঞ্জসমূহ কাটিয়ে উঠতে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ ঘটাতে সাহায্য করবে এই রেজুলেশন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব ইস্যু সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।