অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

অসম বয়সীদের বিয়ে কি অপরাধ?

তাসলিমা পারভীন বুলাকী

প্রকাশিত: ১০:০৭ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২২ রোববার  

বিয়ে শুধু কোনো সামাজিক প্রথা নয়, মানব জীবনের ইহকাল-পরকালের মানবীয় পবিত্রতা রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামতও। বিয়ে হারাম ও গুনাহের কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখতে সহায়তা করে। 

সম্প্রতি নাটোরের গুরুদাসপুরের এক কলেজ শিক্ষিকা (৪০) ও মামুন (২২) নামে এক যুবক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে তারা অবৈধ কোনো কাজ করেননি। কিন্তু তাদের এই বিয়ে নিয়ে কতিপয় অতি-উৎসাহীর সুড়সুড়িসর্বস্ব আচরণে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে গণমাধ্যকেও নানামুখী আলোচনার ঝড় উঠেছে।  
কিছু গণমাধ্যম বিশেষ করে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে এ নিয়ে বিকৃত হেডলাইন দিয়ে নিউজ করতে দেখা গেছে। এসব বহু ঘটনা গণমাধ্যমের কাজ ও উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
 
গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। গণমাধ্যমের কাজ-বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে জনমত গঠন করা, জনগণকে শিক্ষিত করে তোলা। অথচ এই সময়ের গণমাধ্যম বিশেষ করে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো আমাদের কী দিচ্ছে? কতটা স্বাস্থ্যকর সংবাদ পরিবেশন করছে? না শুধু কাটতি বা ভিউ বাড়ানোর জন্য বস্তাপচা সংবাদ তুলে ধরছে? 
 
মূলত মানুষ জানতে চায় তথ্য। বর্তমানে পোর্টালগুলো চটকদার বা চটি তথ্য পরিবেশন করতে সিদ্ধহস্ত। এসব চটকদার তথ্যে এক শ্রেণির মানসিক বিকারগ্রস্তরা সুড়সুড়ি অনুভব করেন, তাদের লালা ঝরে কিন্তু তাতে দেশ-জাতির কোনো উপকার হয় না।

এখন প্রশ্ন হলো, অনলাইন গণমাধ্যমগুলো কী করবে? সমাজ-রাষ্ট্রকে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেবে, না বিকারগ্রস্তদের রুচির জোগান দিয়ে হিট বাড়াবে? যদি সুড়সুড়ির জোগান দেওয়া ও হিটই লক্ষ্য হয়, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। নৈরাজ্য ও অস্থিরতা তৈরি হবে। বর্তমানে সমাজে এসবের উপস্থিতি চরমভাবে লক্ষণীয়। 

সবশেষে, সুড়সুড়ি সর্বস্ব কন্টেন্ট প্রকাশ করে অনলাইনগুলো যে ধরনের রুচি গড়ে তুলছে, তাতে পাঠক কী শিখছে। তাদের জনমত কোন দিকে যাচ্ছে? সচেতন বা অবচেতন ভাবে পোর্টালগুলো পাঠকদের মানসিক বিকলাঙ্গতা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে না তো?
 
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো নিউজের ভিউ বাড়ানোর জন্য পাঠকের  জন্য এমন অশ্লীল ও চটকদার সংবাদ পরিবেশন করে। সমাজে এমন ঘটনা যে আগে ঘটেনি, তা কিন্তু নয়। হরহামেশাই ঘটছে। নিউজ পোর্টালগুলো সেই সব ঘটনাগুলো কুরুচিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করে নিজেদের ফায়দা লুটছে। এসব নিউজ পোর্টাল তথা গণমাধ্যমে কর্মরত কর্মীরাও গণমাধ্যমের কাজ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। তাদের শিক্ষা-রুচি নিয়েও প্রশ্ন আছে। এমন অনেক পোর্টাল আছে, যেগুলোতে কাজ করা গণমাধ্যমকর্মীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই।

কিন্তু সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সমাজের নানান অসঙ্গতির তথ্য লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়, অত্যাচার লুটপাটের বিপক্ষে কাজ করার মানসিকতা সম্পন্ন যে কেউ এই পেশায় আসতে পারেন। তবে এই পেশায় কাজ করতে ও প্রতিষ্ঠা পেতে একটি জিনিস অত্যাবশ্যক, তাহলো, শিক্ষা ও রুচি। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকতা ও আইনজীবী ও সাংবাদিকতার মতো পেশায় জড়াতে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক বা অ্যাকাডেমিক শিক্ষা। প্রচলিত নিয়মে মেডিক্যাল গ্রাজুয়েশন ছাড়া ডাক্তার ও আইনে গ্রাজুয়েশন ছাড়া আইনজীবী হতে না পারার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখনো বহু পেশায় নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতার বাধ্যবাধকতা নেই। তাই এমন সুবিধার সুযোগে বহু অর্ধশিক্ষিত লোক বিভিন্ন পেশায় ঢুকে পড়েছে। সাংবাদিকতাও এর বাইরে নয়। এই পেশায় থাকা অসংখ্য অর্ধশিক্ষিত কর্মী কাজ করছেন। যার ফলে গণমাধ্যম তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। 

লেখক: সাংবাদিক