অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ফ্রিল্যান্সার ফাহিম ছিলেন আমাদের বিস্ময়, আমাদের অনুপ্রেরণা

মোহাম্মদ শাজ্জাদ হোসেন খান

প্রকাশিত: ০২:২৯ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২০ রোববার   আপডেট: ০৯:১২ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২০ রোববার

ফাহিম-উল করিম আর আমাদের মাঝে নেই

ফাহিম-উল করিম আর আমাদের মাঝে নেই

ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার অনেক উদাহরণ আমাদের আছে। বাংলাদেশের কয়েক লক্ষ ফ্রিল্যান্সার ঘরে বসে সারা বিশ্বের জন্য কাজ করে আয় করে সাবলম্বী হবার গল্প আজ সবারই জানা। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধীতা জয় করে বাড়িতে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প খুব বেশি নেই। এমনই একটি গল্পের মূল চরিত্রের নাম ফাহিম উল করিম। হ্যা, আমাদের ফাহিম উল করিম। আমাদের বিস্ময় আমাদের অনুপ্রেরণা।

ফাহিম-উল করিমের বাসা মাগুরা শহরের মোল্যা পাড়া এলাকায়। মাগুরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিমের বাবার নাম রেজাউল করিম। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময় ফাহিমের শরীরে ডুচেনে মাসকিউলার ডিসট্রফি (ডিএমডি) রোগ ধরা পড়ে। আর তাতেই ফাহিমের গোটা শরীর অচল হয়ে যায়। শুধু মাথা ও ডান হাতের দুটি আঙুল সচল ছিল। 

এরকম একটি কঠিন অবস্থার মধ্যথেকেও অদম্য ফাহিম স্বপ্ন দেখতো সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পরিবারের বোঝা না হয়ে থেকে তাদের জন্য কিছু করার। দৃঢ় মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মেধা কাজে লাগিয়ে বিছানাবন্দি অবস্থায় বাবার অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইন ঘাঁটাঘাঁটি করে ইউটিউব ও গুগলের সাহায্যে অনলাইন কিভাবে কাজ করতে হয় তা শিখে নেন। অন্যের সহযোগিতা, প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তিনি একটি ল্যাপটপ কেনেন। শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। 

প্রথমে ফাইবার এ ভিজিটিং কার্ড ও ব্যানার ডিজাইনের গিগ সাবমিট করেন। অল্প সময়ের মধ্যে একটি কাজও পেয়ে যান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সফলভাবে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য বায়ার তাকে আরও ১০ ডলার বোনাস দেয়। এর পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফাহিমকে। দিন দিন অর্ডার এত বেশি আাসা শুরু হলো যে, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সময় দিলেও কাজ শেষ হয় না। তার উপার্জনে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরে। নিজের উপার্জনের অর্থ দিয়ে শহরের মোল্লাপাড়ায় জমি কিনে বাড়ি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। 

এভাবে এক পর্যায়ে প্রতি মাসে ৫০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনেন ফাহিম। একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাদের কাছে হয়ে ওঠেন অনুকরণীয় অনুসরণীয়। 

তার কাজে খুশি হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় এর পক্ষ থেকে ফাহিমকে একটি ল্যাপটপ উপহার দিয়েছিলেন। এছাড়া তার কাজের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেন। বেসিস থেকে বেশ কয়েকবার দেশসেরা ফ্রিল্যান্সারের পুরস্কারও পেয়েছেন ফাহিম উল করিম।

গত বুধবার (১১ নভেম্বর) সকালে ফাহিম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয় (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মাত্র ২২ বছরের ছোট জীবন সময়ে ফাহিম উল করিম আবারো প্রমান করে দেখিয়ে দিলেন ইচ্ছা শক্তি ও নিষ্ঠা থাকলে যে কোন অবস্থা থেকেই লক্ষ্যে পৌছানো যায়। বর্তমান প্রজন্মের জন্য তিনি একটি চমৎকার উদাহরণ।

মোহাম্মদ শাজ্জাদ হোসেন খান, ফ্রিল্যান্সার ও আইসিটি স্পেশ্যালিস্ট