অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

অনেক আশংকাকে সঙ্গী করেই বিদেশ ভ্রমণ!

মোঃ কামরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০৫:০৫ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রোববার  

আরটিপিসিআর মেশিনে কোভিড-১৯ শনাক্তকরন পদ্ধতির মাধ্যমে সব দেশের স্বাস্থ্যবিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ট্রাভেল করার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নেগেটিভ সনদ নিতে হয়। কারো যদি বিদেশ যাওয়ার পর ৭২, ৪৮ কিংবা ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আবার ট্রাভেল করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তখন ট্রাভেলারকে আবার কোভিড টেস্ট করাতে হয়। যা বাধ্যতামূলক। 

আবার ভ্রমণ করার আগে কোভিড টেস্ট এর নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক হওয়ার পর আবার কোনো কোনো দেশে ট্রাভেল শেষে অন্য দেশের বিমানবন্দরেও কোভিড টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একদিন পরই যদি আবার নিজ দেশে ফেরত আসতে চায় তখন আবার আরটিপিসিআর এর মাধ্যমে কোভিড টেস্টের নেগেটিভ সনদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যা অনিশ্চিয়তা ভরা। 

বেশ কিছুদিন ধরে করোনার তৃতীয় ধাপে একটা বিষয় দেখা যাচ্ছে, কোনো ধরনের করোনার লক্ষণ না থাকার পরও আরটিপিসিআর টেস্টের রেজাল্ট আসছে পজিটিভ। একটি পজিটিভ রেজাল্ট জীবনকে অনিশ্চিয়তায় ফেলে দিচ্ছে। কোথাও ট্রাভেল করার জন্য চূড়ান্ত পরিকল্পনার পর কোভিড টেস্ট করা হয়। সেই পরিকল্পনার মধ্যে এয়ারলাইন্স এর টিকেট কনফার্ম, ভিসা কনফার্ম, হোটেল বুকিং কনফার্ম, অফিসিয়াল মিটিং কনফার্ম, চাকুরীজীবী হলে ছুটি কনফার্ম, মানি এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি ইত্যাদি কার্যাদি সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তা আছে। একটি শব্দ (পজিটিভ) নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে ট্রাভেলারকে। 

শুধু আর্থিক নয় নানা অনিশ্চয়তাই বিরাজ করে ব্যক্তি জীবনে। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে নিজেকে করোনা রোগী ভাবতে থাকে। আইসোলেশন কিংবা কোয়ারেন্টাইন থাকার কারনে মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। পুনরায় কোভিড টেস্ট করানো এবং নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেলে পরবর্তীতে আবার সব সিদ্ধান্তগুলোকে পুনরুজ্জীবীত করা, হোটেল কিংবা এয়ারলাইন্স এ আসন পাওয়া সব কিছুতেই অনিশ্চয়তা বিরাজ করে।

২৪ কিংবা ৪৮ ঘন্টার পর যখন আবার কোভিড টেস্ট করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় পুনরায় ট্রাভেল করার জন্য তখনও একই ধরনের অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরে। অন্য দেশে কোভিড টেস্টের রিপোর্ট যদি পজিটিভ হয় তখন আরো বেশী অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। উদাহরন হিসেবে মালদ্বীপের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। কোনো ট্রাভেলার কোভিড টেস্টে পজিটিভ হলে সাথে সাথেই তাকে কোভিড রোগী হিসেবে কোনো একটি দ্বীপে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয় আইসোলেশনের জন্য। কোয়ারেন্টাইনের সকল ধরনের খরচ ট্রাভেলারকেই বহন করতে হয়। যা ভবিষ্যতে যেকোনো ধরণের ট্রাভেল করা থেকে অনুৎসাহিত করতে পারে।

একই ধরনের টেস্ট স্বল্পতম সময়ে বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট আসার কারনে ট্রাভেলারদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করে থাকে। আর্থিক অসঙগতি তো রয়েছেই। একই টেস্ট স্থানভেদে বিভিন্ন ধরনের চার্জ নির্ধারণ করে থাকে, যা সত্যিই অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হয় কোভিড টেস্টের রিপোর্ট প্রাপ্তিতে। প্রাইভেট মেডিকেল থেকে কেউ করোনা টেস্ট করালে রিপোর্ট প্রাপ্তিতে কোথাও দুই হাজার পাঁচশত টাকা, কোথাও তিন হাজার কিংবা কোথাও চার হাজার টাকাও নির্ধারণ করেছে। আবার সরকারী হাসপাতালে কিংবা সরকারী ব্যবস্থাপনায় ট্রাভেলারদের কোভিড টেস্ট করালে এক হাজার পাঁচশত টাকার চার্জ নির্ধারণ করা আছে। একই ধরনের টেস্টের জন্য বিভিন্ন চার্জ নির্ধারণের অসঙ্গতি দূর হওয়া খুবই জরুরী।

২০১৮ এর পর সারা দেশে মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ শনাক্তের জন্য বিভিন্ন মেডিকেল সেন্টারে ফি নির্ধারণে নানা রকমের অরাজকতা দূর করার জন্য সরকার একটি নির্দিষ্ট চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোভিড টেস্টের ফি নির্ধারণে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। কোভিড টেস্টের সময় নির্ধারণে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন দেশের সাথে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন হতে পারে। 

ছোট্ট একটি দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্র্রায় ৪ লক্ষ অথচ বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে কিংবা ভ্রমণ করছে। ফলে  হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে কোভিড রিপোর্ট নির্ধারণে। যা ভাবনার বিষয় হয়ে গেছে।

অনির্ধারিত খরচ আর ভোগান্তি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত করে তুলবে। যার ফলে এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজম সেক্টর মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

মোঃ কামরুল ইসলাম: মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।