অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

শাবিপ্রবির উপাচার্যের বাসার পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৯:১৫ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২২ রোববার   আপডেট: ১০:০০ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২২ রোববার

শাবিপ্রবির উপাচার্যের বাসার পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

শাবিপ্রবির উপাচার্যের বাসার পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের ১০০ ঘণ্টা পেরিয়েছে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে। উপাচার্য পদত্যাগ না করায় আন্দোলনকারীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার বাসভবনের বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

**শাবিপ্রবি উপাচার্যের পদত্যাগে দ্রুত ব্যবস্থা চায় শিক্ষক সমিতি

**শাবিপ্রবির উপাচার্য ভবনে সাধারণের প্রবেশ এবং পানি-বিদ্যুৎ বন্ধের ঘোষণা

আন্দোলনকারীদের একজন মুখপাত্র সাদিয়া আফরিন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সন্ধ্যায় প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে রবিবার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার রাজ। সে সময় শিক্ষার্থীরা তাদের মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেন, রবিবার পর থেকে উপাচার্যের বাসভবনে পুলিশ ছাড়া আর কেউ ঢুকতে পারবেন না। তার বাসায় পানি, বিদ্যুৎসহ সব পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হবে।

এরপর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন।

শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র বলেন, 'আমরা বাসভবনের বাইরে আটকে আছি, আর উনি সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন, সেটা হতে পারে না। এখন থেকে উপাচার্যের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।'

এর পরই উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলনকারীরা।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ গত বুধবার উপাচার্যের বাসার সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন ২৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একজনের বাবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরের দিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে এখন ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি ৮ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন চিকিৎসকেরা। 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়।  

পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ওই হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।

এর মধ্যে  শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে তাদের দাবি লিখিতভাবে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না।

শনিবার রাতে ঢাকায় নিজ বাসভবনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি জানান, প্রয়োজনে তার প্রতিনিধিদল শাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। শিক্ষার্থীরা যখন কথা বলতে রাজি হবে, তখনই প্রতিনিধি যেতে পারবে। পারিবারিক কারণে এখন তিনি সিলেটে যেতে পারছেন না।
এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। দীপু মনি আশ্বস্ত করেন, লিখিত দাবি পেলে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেবে সরকার।