অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

৩০ হাজার টাকায় বাগান করে বছরে ১০ লাখ আয় শাহজাহানের

রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ১২:১৮ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২২ রোববার   আপডেট: ১২:২৩ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২২ রোববার

জীবিকার তাগিদে একসময় বিদেশ যাবেন বলেই ঠিক করেছিলেন শাহজাহান। পরে অবশ্য সে মত পাল্টে বাবার নার্সারির সাথেই শুরু করেন কাশ্মিরী আপেল কুলের চাষ। ৩০ হাজার টাকায় শুরু করা সে বাগান থেকে এখন বছরে ১০ লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।  

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গোমতী নদীর তীরে ঝাকুনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিলো বিদেশ যাবেন। তবে স্কুল জীবন শেষ করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাবার নার্সারি সাথে গড়ে তোলেন কাশ্মিরী আপেল কুলের বাগান। পুরো বাগান জুড়েই বিভিন্ন ফুলের সাথে কাশ্মিরী আপেল কুলের সমাহার।  

মায়ের কাছ থেকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিয়ে শাহজাহান ২০১৯ সালে শুরু করেছিলেন কাশ্মিরী কুল চাষ। গোমতীর চরে ৮০ শতাংশ জমিতে রোপণ করেছিলেন কাশ্মীরি কুলের ৩৫০টি চারা। বর্তমানে তা দাড়িয়েছে ৬০০টিতে৷ সফলতা পেয়ে এবছর কাশ্মীরি কুলের পাশাপাশি করেছেন বল সুন্দরী চাষ । 

এই কুল আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। স্বাদ হালকা মিষ্টি, অনেকটা বাউকুলের মত। প্রচলিত আপেল কুল ও বাউকুলের থেকে আকারে বেশ বড় এই কাশ্মীরি আপেল কুল।  

মো.শাহজাহান জানান, ৩ বছর আগে ভারত থেকে চারা আনেন। আনা-নেওয়াসহ প্রতিটি চারার খরচ পড়ে ১৫০-১৮০ টাকা। এখন পর্যন্ত তিন বছরে তার ব্যয় হয়েছে ১ লাখ হাজার টাকার মতো। প্রতিটি বছর গাছে   প্রচুর পরিমাণে কুল ধরে। 

প্রথম ও ২য় বছর মিলে তিনি লাভ করেছে ৩ লক্ষ টাকা। এ বছরও প্রতিটি গাছ ৩০-৪০ কেজি করে কুল ধরেছে। এভাবে টানা ৫-৭ বছর পর্যন্ত ফল বিক্রি করা যাবে। প্রতি কেজি কুল ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি এখনও বিক্রি শুরু করেননি।  দু’একদিনের মাঝে শুরু করবেন। সব মিলিয়ে এ বছর তিনি ১০ লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। 

এদিকে এ তরুণের সফলতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। রবিবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কাশ্মিরী  আপেল কুল বাগানটি পরিদর্শনের করেন তিনি। 

শাহজাহান মিয়ার বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি আপেল কুলের এই বাগান দেখতে প্রায় নিয়মিত লোকজন ভিড় করছেন। তার বাগানের একেকটি গাছ চার ‍ফুট উচ্চতার। ডালে থোকায় থোকায় ধরে আছে বরই। পরিপক্ব বরইগুলো দেখতে লাল আপেলের মতো। তার পাশেই আছে বিভিন্ন ফুলের গাছ।  

বরইগাছ বড় হওয়ার পর ছড়ানো ডাল ঠিক রাখার জন্য বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করেন। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে গাছগুলোতে ফুল আসে। এসব কুল প্রথমে সবুজ থাকে। পরে সেটি লাল রং ধারণ করে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ফল পরিপক্ব হয়। এরপর থেকে বরই বিক্রি শুরু করেন।   

প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম ও কুমিল্লা শহর থেকে মানুষ এসে তাঁর এই বাগান থেকে বরই কিনে নিয়ে যান।  

শাহজাহান মিয়া আরো বলেন, অ্যাগ্রো অ্যান্ড নার্সারি নামে নার্সারি দিয়েছি। এই নার্সারির আওতায় বরইবাগানের পাশে অন্য জমিতে বিভিন্ন ফুল, ফল,সবজির চারা বপন করে চারা বিক্রি করি। আমার মা  আমাকে সহযোগিতা করেন। বর্তমানে আমার বাগানে চারজন শ্রমিক কাজ করে।  সরকারি সহযোগিতা পেলে বাগানের বিস্তাত ঘটিয়ে ১০০জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই।