অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

রহনপুর স্টেশনে স্টেশন মাস্টারের স্বেচ্ছাচারিতায় যাত্রী দুর্ভোগ

কাইসার রহমানী, রহনপুর থেকে

প্রকাশিত: ০৬:৫৩ পিএম, ৩ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার   আপডেট: ১১:২৬ পিএম, ৩ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার

পায়ের সমস্যার কারণে রাজশাহীতে ডাক্তার দেখাতে যাবেন  বোয়ালিয়ার সেঁজুতি ইসলাম। সোমবার ( ৩ জানুয়ারী) ব্যাটারি চালিত ভ্যানে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার  রহনপুর রেল স্টেশনে আসেন তিনি। বিকাল ৫ টার ট্রেনে রাজশাহী যাবার জন্য টিকিটও নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ট্রেনে উঠতে পারেননি।

ট্রেনে না উঠতে পারার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘স্টেশনের মূল প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ছিলনা। ১ নম্বর লাইনে ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রেন রাখা হয়েছে। আর রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী ট্রেন রাখা হয়েছে মূল স্টেশন থেকে দূরে বিপরীত পাশের প্ল্যাটফর্মের ৪ নম্বর লাইনে। পায়ের সমস্যা নিয়ে মূল স্টেশন থেকে হেঁটে ওপাশে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভবনা। আর পণ্যবাহী মালগাড়ী দীর্ঘ হবার জন্য, অনেক দূর ঘুরে সেখানে যাওয়া কোন রোগীর পক্ষে সম্ভব না। ফুটওভার ব্রীজ পায়ের সমস্যার জন্য তিনি ব্যবহার করতে পারবেন না। 

স্টেশনে ট্রেনে উঠতে পারেননি এমন বেশ কিছু যাত্রী অভিযোগ করেন, এখানকার যাত্রীদের একটা বড় অংশ রোগী। রাজশাহী যেতে হয় তাদের চিকিৎসার প্রয়োজনে। বেশিরভাগ সময়েই মূল স্টেশনের ১ নম্বর লাইনে ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী মালগাড়ী রাখা হয়। যার কারণে বিপরীত পাশের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রোগীদের কিংবা বয়স্ক যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে খুব কষ্ট হয়। কোন রকম ঘোষণা ছাড়া বেশিরভাগ সময় যাত্রীবাহী ট্রেন মূল প্ল্যাটফর্মে না রাখায় দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। কলেজ ছাত্র তাহমীনুল ইসলাম বলেন,  পণ্যবাহী ট্রেন মূল প্ল্যাটফর্মে দিনের পর দিন কেন রাখা হয় তা কেউ বুঝতে পারছেননা। পণ্যবাহী ট্রেনেতো যাত্রী উঠেওনা, নামেওনা। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত লাভের কারণে এটা করা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

সরেজমিনে রহনপুর রেলস্টেশন বেশ কয়েকদিন ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ সময় ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী মালগাড়ী মূল প্ল্যটফর্মের ১ নম্বর লাইনে রাখা হয়েছে। মাঝেমাঝে ২ দিনও এক নম্বর লাইনে মালগাড়ী রাখা হয়। মূল প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রীদের ট্রেনে ওঠার পর্যাপ্ত সুবিধা থাকলেও, পণ্যবাহী মালগাড়ী সেখানে থাকার কারণে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি দেখা যায়। বিশেষ করে রোগী, শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, মূল প্ল্যাটফর্মের বিপরীত পাশের প্ল্যাটফর্ম অপরিকল্পিত ভাবে নির্মাণের জন্য যাত্রীদের জন্য সমস্যা হয় ট্রেনে উঠতে। বেশ কিছু যাত্রী অভিযোগ করেন, সমস্যার কথা স্টেশন মাস্টারকে জানাতে গেলে, তিনি তাতো শুনেননা, বরং দুর্ব্যবহার করেন। 

রহনপুর উন্নয়ন আন্দোলন কমিটির  আহবায়ক নাজমুল হুদা খান অভিযোগ করেন, ১ নম্বর লাইনে অর্থাৎ যেখান থেকে যাত্রী খুব সহজে ট্রেনে উঠতে পারবেন সেখানে পণ্যবাহী মালগাড়ী রাখার কারণ হচ্ছে কমিশন বাণিজ্য। স্টেশন মাস্টার তার অন্যায় আর্থিক সুবিধার জন্য মালবাহী ট্রেন মূল প্ল্যাটফর্মের ১ নম্বর লাইনে রাখেন। তাকে অনেক অভিযোগ জানানোর পরও কোন সুরাহা হচ্ছেনা। তিনি বলেন, ১ নম্বর লাইনে পণ্যবাহী মালগাড়ী রাখার কারণ হিসেবে স্টেশন মাস্টার তাদের জানিয়েছেন, স্লিপার সমস্যার কারণে মূল প্ল্যাটফর্ম ছাড়া অন্য লাইনে নেয়া পণ্যবাহী মালগাড়ী সম্ভব না।  রহনপুর উন্নয়ন ফোরামের আহবায়ক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ স্টেশনে যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি। সমস্যা নিরসনে স্টেশন মাস্টার আন্তরিক না। তারা তাদের দাবি নিয়ে শীঘ্রই আন্দোলনে নামবেন। 

রহনপুর রেল স্টেশন মাস্টার মির্জা কামরুল হক অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলেন সহকারী স্টেশন মাস্টারের কক্ষে। অনুমতি নিয়ে কক্ষে ঢুকে, পরিচয় জানানোর পর, পণ্যবাহী মালগাড়ী ১ নম্বর লাইনে রাখার কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রেগে যান। বলেন,  তিনি সাংবাদিক পরিবারের। কোন বক্তব্য তিনি দিবেননা। যা ইচ্ছা লিখে দিতে বলেন মির্জা কামরুল। বক্তব্য রেকর্ড করতে বাধা দেন তিনি। বলেন,  উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তাদের বক্তব্য দেয়া নিষেধ আছে।

খরচ কম হওয়ায় আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ তথা আমদানি-রফতানিকৃত পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলওয়ে শুল্ক স্টেশনটি। অবিভক্ত ভারতবর্ষে ঢাকা ও কলকাতার সঙ্গে রেল যোগাযোগের মাধ্যমও ছিল এই রহনপুর-সিঙ্গাবাদ রেলপথটি।