অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

নতুন গন্তব্যে উড়লো ইউএস-বাংলা, ঢাকা-মালে ফ্লাইট শুরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০২:৩১ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার   আপডেট: ০৩:০৮ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার

বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-মালে ফ্লাইট চালু করেছে দেশের অন্যতম বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। শুক্রবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মালদ্বীপের উদ্দেশে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রথম ফ্লাইটটির উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।

ঢাকা-মালে ইউএস-বাংলার দশম আন্তর্জাতিক গন্তব্য। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর দেশি কোনো এয়ারলাইন্স আবারও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মালেতে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করল। এর আগে ২০০৮-০৯ সালে এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল বেসরকারি বিমান সংস্থা বেস্ট এয়ার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, মালদ্বীপে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে ইউএস-বাংলা আকাশ পথে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। তাদের এই ফ্লাইটের মাধ্যমে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশে শ্রমিকরা সহজে যাতায়াত করতে পারবে। দুই দেশের সব যাত্রীর যাত্রা সহজ এবং আরামদায়ক হবে। পাশাপাশি দুই দেশের পর্যটন শিল্পের প্রসারে এই ফ্লাইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। অভ্যন্তরীণের রুটের পাশাপাশি নতুন নতুন আন্তর্জাতিক গন্তব্য বাড়াচ্ছে তারা। 

দেশের বিমান সংস্থাগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউএস-বাংলাসহ সবাইকে অনুরোধ করছি, আপনারা মালদ্বীপের নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণের জন্য আকর্ষণীয় প্যাকেজ দিন। এই উদ্যোগ দেশের এভিয়েশন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ফলে মালদ্বীপের নাগরিকরাও বাংলাদেশ ঘুরে দেখার সুযোগ পাবে। দেশের পর্যটন খাতের আয় বাড়বে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেবিচকে’র সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশে অবস্থিত মালদ্বীপ হাই কমিশনের হাই কমিশনার শিরুজিমাথ সামির, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।

অনুষ্ঠানে মালদ্বীপের হাই কমিশনার শিরুজিমাথ সামির বলেন, ইউএস-বাংলা দ্বিতীয় এয়ারলাইন্স হিসেবে মালেতে সরাসরি ফ্লাইট শুরু করল। করোনার প্রকোপের মধ্যেও এটি তাদের অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। মালদ্বীপ খুবই চমৎকার একটি দেশ। আমি চাই ইউএস-বাংলা সাশ্রয়ী প্যাকেজ দিয়ে বাংলাদেশিদের মালদ্বীপ যাওয়ার সুযোগ করে দেবে।

ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমানে মালদ্বীপে যাতায়াত করা ৯০ ভাগ যাত্রীই শ্রমিক। বাকি ১০ ভাগ ব্যবসায়ী। আমার শ্রমিক ভাইয়েরা এতোদিন ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে মালদ্বীপের ওয়ানওয়ে টিকেট কাটতেন। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এখন তাদের সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকায় ওয়ানওয়ে টিকেট দেবে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়।

তিনি বলেন, আমরা জানি যখন কোনো বিদেশি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের যাত্রীদের বহন করে তখন আমাদের দেশের রাজস্ব রেভিনিউ বিদেশে চলে যায়। এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে ইউএস-বাংলা ফরেন কারেন্সি রিটেইন করবে। এই রুটে প্রাথমিকভাবে ৩টি ফ্লাইট চালু করলেও পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে ৭টি ফ্লাইট চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, ঢাকা-মালে রুটে প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে তিনদিন সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। প্রতি মঙ্গলবার, শুক্রবার ও রোববার ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করা হবে।

মঙ্গলবারের ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে বেলা ১১টা ১০ মিনিট মালদ্বীপের রাজধানী মালের উদ্দেশে উড্ডয়ন করে। স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে মালেতে অবতরণ করবে এটি। একই দিন বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে মালে থেকে উড্ডয়ন করে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করবে।

শুক্রবারের ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মালের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে মালেতে অবতরণ করবে। একই দিন বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে মালে থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে এবং রাত ৮টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবে।

এছাড়া প্রতি রোববার ঢাকা থেকে সকাল ৯টা ৩০ মিনিট মালের উদ্দেশে উড্ডয়ন করবে এবং স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মালেতে অবতরণ করবে। একই দিন দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে মালে থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

এই রুটে সব ট্যাক্স ও সারচার্জসহ ওয়ানওয়ের ন্যূনতম ভাড়া ২৯ হাজার ৫০৮ টাকা এবং রিটার্ন ভাড়া ৪৫ হাজার ৫৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে মালদ্বীপে বাংলাদেশি ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত দুই দেশের বন্ধনকে আরও বেশি সুদৃঢ় করবে বলে মনে করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। এছাড়া দুই দেশের পর্যটন শিল্পও আরও গতিশীল হবে।

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গন্তব্য দুবাই, মাস্কাট, দোহা, বাংলাদেশি অধ্যুষিত কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেন্নাই এবং চীনের অন্যতম গন্তব্য গুয়াংজুতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। করোনা মহামারিতে বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে কলকাতা ও ব্যাংকক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খুব শিগগিরই কলম্বো, জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম রুটে ফ্লাইট শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।

আন্তর্জাতিক রুট ছাড়াও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সব রুট বিশেষ করে ঢাকা থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা। এছাড়া তারা যশোর থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং সৈয়দপুর থেকে চট্টগ্রাম রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।