অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কুমিল্লা বিভাগের নাম মেঘনা, ফরিদপুরের পদ্মা, চান প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:২২ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার  

কুমিল্লা বিভাগের নাম মেঘনা, ফরিদপুরের পদ্মা: প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত

কুমিল্লা বিভাগের নাম মেঘনা, ফরিদপুরের পদ্মা: প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত

ফরিদপুর এবং কুমিল্লাকে দেশের দুটি প্রধান নদী পদ্মা এবং মেঘনার নামে বিভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, 'বিভাগের বিষয়ে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দুইটা বিভাগ বানাব। দুইটা নদীর নামে। একটা পদ্মা, আরেকটা মেঘনা। এই দুই নামে দুইটা বিভাগ করতে চাই।'

এ সময় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, 'আপা, আমি একটু বলতে চাই। কুমিল্লার নামে করেন।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দুটি নদীর নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি- একটি পদ্মার নামে এবং অন্যটি মেঘনার নামে।'

তিনি আরও বলেন, 'যদি কুমিল্লা নামে বিভাগ গঠিত হয়, তাহলে অন্যান্য জেলা এতে যোগ দিতে আগ্রহী নাও হতে পারে।'

দেশের আরেকটি বিখ্যাত নদী পদ্মার নামে ফরিদপুর বিভাগ গঠন করতে চান বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, 'আপা, আমি একটু বলতে চাই। কুমিল্লার নামে করেন।'
 
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘'কু' নাম দিব না আমি। কুমিল্লা দিব না।’এ সময় বাহার আবারও প্রধানমন্ত্রীর কাছে একই দাবি করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, 'না আমি দেব না তো বললাম। তোমরা যদি রাজি থাক। ওই কুমিল্লা নাম নিলেই মোশতাকের কথা মনে ওঠে।'

বাহার বলেন, 'কোনো কুলাঙ্গারের নামে দেশের পরিচয় হয় না আপা। বাংলাদেশের পরিচয় বঙ্গবন্ধুর ওপর। মোনায়েম খানের ওপর না। বঙ্গবন্ধুকেই চিনে সারা বিশ্ব। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশ। কোনো কুলাঙ্গারের নামে না।'

পরে বাহার কথা বলতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাকে থামান। বলেন, 'তুমি যদি কুমিল্লা বলো, তাহলে শুধু কুমিল্লা হবে কেন? চাঁদপুর বলে আমার নাম হবে। নোয়াখালী বলে আমাদের নাম। কারণ নোয়াখালী সব থেকে পুরোনো একটা। কুমিল্লা তো ত্রিপুরার ভগ্নাংশ।'

এ সময় বাহার বলেন, `এতগুলো বিভাগ দিয়েছেন। কোথাও সমস্যা হয়নি। কুমিল্লা এসে সমস্যা কেন হবে?'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি ফরিদপুর বিভাগ করব পদ্মা নামে। কুমিল্লা বিভাগ হবে মেঘনা নামে। কারণ পদ্মা-মেঘনা-যমুনা। তোমার আমার ঠিকানা। এই স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, বিজয়ী হয়েছে।'

এ সময় বাহার আবারও বলেন, 'আমাদের কুমিল্লার সব মানুষ, এই নামেই চায়।'

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই নামে অন্য জেলাগুলো আসতে চায় না। আমরা চেষ্টা করেছি তো। নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই নামে আসবে না।' 

এ সময় বাহার প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, `সিলেটের বিষয়ে কি সবার কাছে জিজ্ঞেস করে দিয়েছেন?' জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, `হ্যাঁ, জিজ্ঞেস করেছি।' এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, `তাহলে তুমি সবার কাছ থেকে লেখায় আনো।' জবাবে বাহার বলেন, `আপনি দিলেই মানবে। আপনি মুখ দিয়ে বললে সব হবে।' 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, `আমি তো দিচ্ছি, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নাম দিয়ে। তুমি ছাত্রজীবনে স্লোগান দাও নাই, পদ্মা-মেঘনা, যমুনা। তোমার আমার ঠিকানা। পিণ্ডি না ঢাকা। ঢাকা ঢাকা। তাহলে তুমি থাকো। যদি বিভাগ চাও, তবে আমি মেঘনা না করে দিতে পারি। মেঘনাটা পার হয়ে যেতে হয় কুমিল্লায়। আর পদ্মা পার হয়ে যাব ফরিদপুরে।' 

এ সময় বাহার বলেন, ‘আমরা আমাদের আপা হিসাবে চাই, বঙ্গবন্ধুর কন্যা ফেরত দিবে না বাহারকে।'

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু পার হয়ে পদ্মায় যাব। তোমার মেঘনা, গোমতী ও তিতাস সেতু করে দিয়েছি। সবই তো করে দিয়েছি। কোনটা বাকি রেখেছি? আমি তো বললাম অন্য জেলা থাকবে না।' 

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চায় তাদের নাম হোক, ফেনীও তাদের নাম চায়। চাদপুর নামটা তো আরও সুন্দর। কুমিল্লার আসল নাম ছিল ত্রিপুরা। এটা ভুলে যেও না। এখনো পুরোনো কাগজে ত্রিপুরা লেখা আছে। পুরোনো দলিলে ত্রিপুরা লেখা আছে। আমার প্রস্তাব রাখলাম, যদি পছন্দ হয় ভালো। না হলে হবে না। আমি কী করব। আমাদের দুটি বড় নদী। এই নামগুলো সম্মান দিয়ে রাখতে চাই। যে স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই নাম রাখতে চাই।' প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে হলে তিনটা ফেরি পার হতে হতো। কত লম্বা সময় লাগত। এখন তো ঢাকা-কুমিল্লা মিশে যাচ্ছে। 

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নতুন অফিস ভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।