অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

অফিস সহকারী-চেয়ারম্যানের পকেটে খাজনার ৩৬ লাখ টাকা!

মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর

প্রকাশিত: ০৫:২৯ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার  

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় দুই হাটের খাজনা আদায়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা এক কালিন টোল আদায়ের অনুমতি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে হাটবাজার খাজনা আদায় কমিটির বিরুদ্ধে। 

আর হাটবাজারের সরকারি রাজস্ব আদায়ের এ টাকা জমা হয়নি সরকারি কোষাগারে। কোন হাটে কত টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে সেটাও জানেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তারা। এতে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে উপজেলার যশোর-নড়াইল সড়কের চাড়াভিটা সাধারণ হাট ও একই রোডস্থ ছাতিয়ানতলা হাটের খাস খাজনা আদায়ে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাঘারপাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মোট ১৮টি হাট রয়েছে। এর মধ্যে ভাংগুড়াহাট মামলা জটিলতায় ইজারা বন্ধ রয়েছে। এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ইজারা প্রদানের জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উপজেলা প্রশাসন। দরপত্র অনুযায়ী ১৫টি হাট ইজারা প্রদান করা হয়। চাড়াভিটা সাধারণ হাট, ছাতিয়ানতলা হাটের দরপত্র না কেনায় নিয়ম অনুযায়ী খাস খাজনা আদায়ের নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দরপত্রে চাড়াভিটা সাধারণ হাটের ইজারা মূল্য ছিল ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৭৩৩ টাকা এবং ছাতিয়ানতলা হাটের ইজারা মূল্য ২০ লাখ ১৭ হাজার ৫৩৩ টাকা। 

নীতি মালায় উল্লেখ রয়েছে, খাজনা আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, স্থানীয় গ্রাম পুলিশ সদস্য ও ব্যক্তিবর্গ সাথে নিয়ে খাজনা আদায় করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু নীতিমালা না মেনে হাটবাজার খাস আদায় কমিটির সভা করে স্থানীয় দুই ব্যক্তিকে হাট ইজারার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল হাটবাজার খাস আদায় কমিটির ১৩ সদস্যের সভার মাধ্যমে চাড়াভিটা সাধারণ হাট আব্দুল আজিজ সরদার ও ছাতিয়ানতলাহাটের ক্ষেত্রে আব্দুল হানিফকে হাটের টোল আদায়কারি হিসাবে নিয়োগ  দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে টোল আদায়কারি ব্যক্তিদের কাছ থেকে কি পরিমান জামানত রাখা হবে সে বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। অথচ দুই হাট বাবদ ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চাড়াভিটা হাটের ইজারাদারের কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা জমা নেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী অধির কুমার সরকার। আর ছাতিয়ানতলা হাটের ইজারাদারের কাছ থেকে ১৫ লাখ ৬০ হাজার জমা নেন দরাজহাট ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বাবলু। এ টাকা নেয়া বাবদ তাদের লিখিত চুক্তিপত্র দেয়া হয়নি। এমনকি জমা নেয়া এ টাকার একটি অংশও সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি বলে গুঞ্জন রয়েছে। অন্যদিকে নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে চুক্তিতে সামান্য কিছু টাকা জামানত হিসাবে নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দায় এড়াতে করোনাকালিন সময়ে হাট বসেনি। এ অজুহাতে ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেয়া হয়নি বলে তথ্য রয়েছে। তাছাড়া মোটা অংকের টাকাগুলো কোথায় আছে খাস খাজনা আদায়ের কমিটির কেউই জানেনা।

চাড়াভিটা সাধারণ হাটের টোল আদায়কারী আব্দুল আজিজ সরদার জানান, তার কাছ থেকে এককালিন ২১ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী অধির কুমার সরকারের কাছে তিনি এ টাকা জমা দিয়েছেন।

বাসুয়াড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরদার বলেন, হাটের টোল আদায়ে এককালিন টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি অবগত না। বলতে পারবোনা সেই টাকা কোথায়। 

চাড়াভিটা সাধারণ হাটের রাজস্ব আদায় বাবদ কত টাকা আদায় হয়েছে প্রশ্ন করলে ওই ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা স্বপন কুমার কুন্ডু বলেন, আমাদের লোকবল কম থাকায় ইউএনও স্যার আদায় কমিটি করেছেন। টাকা আদায়ের বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারি অধির বাবু ভাল জানেন।

ছাতিয়ানতলা হাটের টোল আদায়কারী আবু হানিফ বলেন, দরাজহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বাবলুর কাছে ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ছাতিয়ানতলা হাটের ইজারা নিয়েছি। আমাকে কোন লিখিত চুক্তি পত্র দেওয়া হয়নি। মাঝে মাঝে নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী অধির কুমার সরকার আমাকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।

দরাজহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বাবলু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, আমি হাট বাবদ এককালিন টাকা নেইনি। কাউকে টাকাও দেইনি।

ছাতিয়ানতলা হাটের রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা হাসান আলী গাজী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। ইউএনও অফিসের অধীর বাবুর সাথে কথা বলতে পারেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী অধীর কুমার সরকার অভিযোগের বিষয়ে জানিয়েছেন, অফিসিয়াল তথ্য অফিসে এসে জানবেন। হাটের টাকা আমার কাছে থাকার কথা না। তা কেনো আমার কাছে থাকবে। এ টাকা কি আমার কাছে থাকার জিনিস বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

হাটবাজার খাস আদায় কমিটির সদস্য সচিব সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা জান্নাত বলেন, হাটের বিষয় গুলি অনুমোদন নেয়া আছে। অফিসে সব নথি আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজ বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ি খাস খাজনা আদায় হচ্ছে। এককালিন কোন টাকা নেয়া হয়নি। হাট সংশ্লিষ্ট ভূমি উপসহকারিরাই তার সব কিছু দেখ ভাল করেন।