অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

চুয়াডাঙ্গায় জমির রেজিস্ট্রি কার্যক্রমে অচলাবস্থা

চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ০৬:৩৫ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার   আপডেট: ০৭:৩০ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার

চুয়াডাঙ্গায় ৪ উপজেলার ৩টির কার্যালয়েই নেই সাব-রেজিস্ট্রার। সে কারনে জমি কেনাবেচাতে চলছে অচলাবস্থা। মাত্র ১ জন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে চলছে ৪টি কার্যালয়ের কার্যক্রম। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। 

বর্তমানে এম নাফিজ বিন জামান চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব থাকলেও দলিল লেখকদের অনুরোধে তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এ কারনে রেজিস্ট্রি কাজে প্রকট সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং জমি ক্রেতা-বিক্রেতা, দলিল লেখকসহ সেবা প্রত্যাশী মানুষ পড়েছেন নানারকমের হয়রানী ও বিড়ম্বনার মধ্যে। দীর্ঘদিন যাবৎ এমন সমস্যা চলে আসলেও তা সমাধানে কার্যকর কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা ও লকডাউনের প্রকোপের কারনে প্রায় ৩ মাস একটানা বন্ধ ছিল চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলার সব অফিসের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম। এর পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সংকট কাটেনি জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস গুলোতে। লকডাউন পরবর্তী সময়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরকে সেখান থেকে ক্লোজ করে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার স্মৃতিকনা দাস ও জীবননগর উপজেলা সাব-রেজিষ্টার মাসুদুর রহমান বদলী জনিত কারনে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। 

সেই থেকেই চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগরের উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় গুলো সাব-রেজিস্ট্রার শুন্য হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কোন মতে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন ১০ সেপ্টেম্বর যোগদান করা দামুড়হুদা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার এম নাফিজ বিন জামান। তিনি একাই জেলার ৪টি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় সামাল দিতে যেমন হিমসিম খাচ্ছেন, ঠিক তেমনি ভোগান্তি ও হয়রানীর শিকার হচ্ছেন মানুষ।

রেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে আরো জানা যায়, সপ্তাহের প্রতি রবি ও সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা, দামুড়হুদা উপজেলায় মঙ্গল ও বুধবার, আলমডাঙ্গা উপজেলায় রবি ও সোম এবং মঙ্গলবার, এবং সপ্তাহের ৫ দিনই জীবননগর উপজেলায় জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চলার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রর সংকট কালীন সময়ে দামুড়হুদা উপজেলা সাব-রেজিষ্টার এম নাফিজ বিন জামান একাই জেলার ৪টি উপজেলায় ১দিন করে নির্ধারণ করে জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় গুলোতে জনবল সংকটের কারনে ও কাজের পরিধি বেশি হওয়ায় দিনরাত কাজ করেও অনেক কাজ অসম্পূর্ন থাকতো। কিন্তু বর্তমানে প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে ৩টি উপজেলার কার্যক্রম। মাঝে মধ্যে দামুড়হুদা সাব-রেজিস্ট্রার ওই ৩টি উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও সেটা সবসময় সম্ভব হচ্ছেনা। একারনে জেলার রেজিস্ট্রি কার্যালয় গুলোর কার্যক্রম একবারেই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

ভূক্তভোগী আনিসার ও জয়নাল শেখ জানান, সাব-রেস্ট্রিার সঙ্কটের দোহায় দিয়ে রেজিট্রি কার্যালয়ে চলছে প্রকাশ্যে ডাকাতি। রেজিস্ট্রি করে দেয়ার কথা বলে সাব-রেজিস্ট্রারের নামে কিছু দলিল লেখক ও দালাল প্রতিদিন মানুষের কাছ থেকে হয়রানি করে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছে। সকাল থেকে রেজিস্ট্রির জন্য দলিল জমা নেয়া হয়। টাকার বিনিময়ে দলিল সরিয়ে অন্য দলিল রেজিস্ট্রি করার কারনে দুরদুরান্ত থেকে মানুষ রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে এসে সারাদিন বসে থেকে সময় ব্যয় করে জমি রেজিস্ট্রি না করেই ফিরে যাচ্ছেন। রেজিস্ট্রি কার্যালয় গুলো এখন ডাকাতদের আশ্রয়স্থলের পরিণত হয়েছে। প্রতিবাদ করলেই নানা হয়রাানির শিকার হতে হচ্ছে। এ কারনে সরকার এ খাত থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার কার্যালয়ে কয়েক দিন যোগাযোগ করতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার কার্যালয়ে উপস্থিত কর্মচারীরা তার মোবাইল ফোন নম্বর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারন অনুসন্ধানে জানা যায়, রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলাম সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই তার বাড়ি কুড়িগ্রামে থাকেন। মঙ্গলবার (৫অক্টোবর) বেলা ১২ টা ১৮ মিনিটে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদকে জানান যে, তিনি ছুটিতে ছিলেন এখন তার কার্যালয়ে ফিরছেন। তবে কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কথাটি তিনি অস্বীকার করেন।

জেলা রেজিস্টার শফিকুল ইসলামের ছুটি সংক্রান্ত বিষয়টি তারই কার্যালয়ের টাইপিস্ট উজ্জ্বল জানেন না বলে জানান। তবে রেজিস্টার বিভিন্ন কাজের কারনে জেলার বাইরে থাকেন বলে তিনি এ প্রতিবেদককের কাছে স্বীকার করেন। 

জেলার সাব-রেজিস্টার সঙ্ককটের বিষয়টি সম্পর্কে পরবর্তীতে শফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিবন্ধন অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। বদলী প্রক্রিয়ার কাজ করেন আইন মন্ত্রনালয়। তবে আলমডাঙ্গা উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার পদে একজনকে দেয়া হয়েছে। তিনি এসে যোগদান করবে। আশা করা যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সদর ও জীবননগর উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রারের পদ তাড়াতাড়ি পুরণ হবে।