অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

সরকারি বই দপ্তরির ঘরে, ফার্মেসিতে, বিক্রি হচ্ছে কেজিদরে! 

খলিল উদ্দিন ফরিদ, ভোলা করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:৩৮ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২১ রোববার   আপডেট: ১২:৫৫ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২১ রোববার

বিনামুল্যে বিতরনের জন্য সরবরাহকৃত ২০২১ সালের পাঠ্যপুস্তক মাদ্রাসার দপ্তরির ঘরে পড়ে রয়েছে। নতুন বইগুলো এখন কেজি দরে বিক্রি করার অপেক্ষা। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহায়ক (দপ্তরি) আলাউদ্দিন ভুইয়ার বাড়িতে বইগুলো পাওয়া গেছে। 

মাদ্রাসা সুপার আমির হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে করে জানিয়েন, ২০ থেকে ২২ মন বই রয়েছে যা বিতরণ করা হয়নি। সেগুলোই বিক্রি করা হচ্ছে। বিষয়টি এরই মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন। 

বেশ কিছুদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন দোকানপাটে পাঠ্যপুস্তকের ছেড়া কাগজে পেচিয়ে ক্রেতাদের দ্রব্যসামগ্রী দিচ্ছে, বিষয়টি অনেকের নজরে পড়ে। যা স্থানীয়ভাবে সংবাদকর্মীদের নজরে আনা হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অনেক দোকানেই এমন বই রয়েছে, যা তারা কেজি দরে কিনে নিয়েছেন। এই বইয়ের উৎসের সন্ধান করতে গিয়েই ধরা পড়ে আলাউদ্দিন ভুইয়ার বাড়িতে এমন আরও অনেক বই রয়েছে, যা বিক্রি করা হবে।   

এই প্রতিবেদক আলাউদ্দিনের বাড়ীতে গিয়ে বই সর্ম্পকে কথা বলতে চাইলে প্রথমে তার স্ত্রীর জেরার মুখে পড়েন। পড়ে তিনি নিজেই জানান, ঢালচর আলিম মাদ্রাসার বই তাদের বাসায় রাখা হয়েছে। তার স্বামী ওই মাদ্রাসার দপ্তরি হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। 

বিষয়টিতে মাদ্রাসা সুপার আমির হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি দাবি করেন, নদী ভাঙ্গন জনিত কারনে এ বছর ৬০ থেকে ৬৫ জন শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া ও স্থানান্তরিত হয়, তাদের বই মাদ্রাসার কাছে রয়ে যায়। 

ঢালচর দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ও ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাম হাওলাদার জানান, বই জমিয়ে রাখার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না ।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনের নজরে আনা হলে তিনি বলেন, ঢালচর আলিম মাদ্রাসার অবিতরনকৃত বই দপ্তরি আলাউদ্দিনের বাসায় রয়েছে এমন তথ্য তিনি এক সংবাদকর্মীর কাছ থেকে জেনে মাদ্রাসা সুপারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছন, মাদ্রাসার বই দপ্তরির বাসায় মজুদ রাখার ব্যাপারে মাদ্রাসা কমিটির বৈঠক হয়। তার ভিত্তিতেই সেখানে রাখা হয়। ওই বৈঠকের রেজুলেশন নিয়ে আগামী সপ্তাহে তিনি শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করবেন। 

কোনো অসৎ উদ্যেশে বই মজুদের বিষয় প্রমান হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে, বলে জানান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে তথ্যানুসন্ধনে আরও জানা যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেকসময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সংখ্যক বইয়ের চাহিদাপত্র দেয়। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি হিসাবে যত শিক্ষার্থী দেখানো হয়, বাস্তবে তত শিক্ষার্থী থাকে না। সে কারণে বই সরবরাহের পর তা সব বিতরণ করা হয় না। পরে তা কেজি দরে বিক্রি হয়। 

তবে ২০২০ ও ২১ সালে করোনার অজুহাতে বই বিতরণ না করে রেখে দেয় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর বছর শেষে বইগুলো কেজি দরে বিক্রি করে সে অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করে নেন। 

জেলার শশীভুষণ থানার আঞ্জুর হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বইও এভাবে বিক্রি হয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে খবর সংগ্রহে গেলে জানা যায়, ঐ এলাকার প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই মনির নামক এক ব্যবসায়ীর কেজি দরে বই কিনেছেন। পরে মনিরের কাছ থেকে খুচরা দোকানীরা কিনে নেন। 

শুক্রবার রাতে বাবুর হাট পরিষদ বাজারের একটি ফার্মেসিতে ২০২০ সালের প্রায় ৩০ মন নতুন বইয়ের সন্ধান মিলেছে।