অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

জুমের ধানে সোনায় মোড়া পাহাড়

ছবি ও লেখা: কমল দাশ

প্রকাশিত: ০৮:৪৩ পিএম, ৯ অক্টোবর ২০২১ শনিবার   আপডেট: ১১:৩৮ পিএম, ৯ অক্টোবর ২০২১ শনিবার

বান্দরবান জেলায় পাহাড়ের পর পাহাড় জুড়ে জুমের ধান পেকেছে। এই ধান নিয়ে হয়তো হয়েছে কোনো কাব্য রচনা, হয়তো হয়নি, কিন্তু জ্বলজ্বলে সূর্যালোকের রূপোলি দুপুরে এক সোনায় মোড়া পাহাড়ই যেনো চোখে পড়লো। জুম চাষিরা মগ্ন এখন ধানে। ধান কাটা, মাড়াই, শুকোনো সব চলে এই পাহাড়ের গায়ে। 

ওরা বলে জুম চাষ এখন কমে গেছে। পরিবেশবিদরাও নানা কথা বলে। কিন্তু পাহাড়ের ভূমিতে এই জুমকে ঘিরে যাদের স্বপ্ন, পাহাড়ের চিরচারিত প্রথা জুম চাষাবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য আদিবাসীদের সংগ্রাম- সংঘাত কম হয় না। কারণ বুঝি পাকা ধানের এই সোনালী দিনের প্রত্যাশা। শরতের দিনগুলোতে পাহাড়ের জুমে পাকা ধানে আদিবাসীদের চোখে মুখে এখন এনে দিয়েছে হাসির ঝিলিক।

জুম চাষ পাহাড়ীদের আদিপেশা। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ ৭টি উপজেলায় বসবাসকারী পাহাড়ী পরিবারগুলো প্রায় সকলেই জুম চাষ করে আজও। জেলার মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, খুমি, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকাংশই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। জুমের উৎপাদিত ধান থেকে বছরের ১২ মাসের অন্তুত ৮ মাসের খাদ্যের জোগান মজুদ করে নেয় তারা। পার্বত্য জেলার আদিবাসীরা প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত পাহাড়ে জুম চাষ করে, আর তার ব্যতিক্রম হয়নি এবারও।

বান্দরবানের সদরের বাঘমারা এলাকার জুম চাষী মং মারমা জানালেন, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় জুমের ফলন ভাল হয়েছে। নিজেদের জন্য রেখে বাকী ধান বিক্রি করে ভাল টাকাও আয় করতে পারবেন তারা। 

প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাসে শুরু হয় জুমে ধান লাগানোর প্রক্রিয়া। চাষ-বাস পরিচর্যায় কেটে যায় ৪ মাসের বেশি সময়। সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে পাহাড়ে ধান পাকতে থাকে। শুরু হয় জুমের ধান কাটা। অক্টোবরের গোড়ার দিকটা পর্যন্ত বেশ সরব থাকে এই ফসল ঘরে তোলার কাজে। জুমিয়ারা তখন সারা দিনমান কাজে ব্যস্ত থাকেন। সে দৃশ্যই দেখা গেলো পাহাড়ে গিয়ে।


জুমে ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে জুমিয়া পরিবারগুলো। শিশু কিশোরসহ পরিবারের কেউই বসে নেই ঘরে। পরিবারের সবাই জুমের ধান কাটতে নেমেছে পাহাড়ে। কেউ কাটছে, কেউ মাড়াই করছে, কেউ শুকোচ্ছে। 

চিম্বুক এলাকার জুম চাষী ম্যানলে ম্রো বলেন, "জুমের ফলন ভাল হওয়ায় খুব খুশি লাগছে, আমাদের পরিশ্রমও সার্থক হয়েছে, সারা বছর শান্তিতে খেতে পারবো।"

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিরা জুমে ধানের পাশাপাশি ভূট্টা, মরিচ, যব, সরিষা, মিষ্টি ও চাল কুমড়া, চিনার, বেগুন, কাকন ধান, মারপা, তিল, পুঁই ও টকপাতাসহ হরেক রকমের শাক সবজি চাষ করেছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পাহাড়ে রেকর্ড পরিমাণ জুম চাষ হয়েছে বলেই মত জুমিয়াদের।