অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বিএনপি নেতার ছেলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, সমালোচনার ঝড়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, পাবনা

প্রকাশিত: ০৭:৪০ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার   আপডেট: ০৯:০২ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২১ মঙ্গলবার

পাবনায় বিএনপি নেতার ছেলেকে ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করেছে জেলা ছাত্রলীগ। সম্মেলন ছাড়াই ত্যাগী কর্মীদের বঞ্চিত করে বিএনপি পরিবারের সন্তানকে ছাত্রলীগের সম্পাদক করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে উৎকোচের বিনিময়ে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে নিন্দার ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমেও।

বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, কোন ধরণের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ৫ অক্টোবর মঙ্গলবার ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সোহেল রানাকে সভাপতি ও জাহিদ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা ছাত্রলীগ। পাবনা জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ আলী ও সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামের স্বাক্ষর করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠন গতিশীল করার স্বার্থে নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, নব নির্বাচিত ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদক উভয়ই বিএনপি পরিবারের বলে সুনির্দিষ্ট প্রমান থাকার পরেও বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জেলা ছাত্রলীগ তাদের মনোনীত করে বিতর্কিত কমিটি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। 

আরও পড়ুন: সাংবাদিক কনক সারওয়ারের বোন গ্রেপ্তার

ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আমির ফয়সাল জানান, ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সোহেল রানা ও জাহিদ হাসানকে সভাপতি 
ও সম্পাদক মনোনীত করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। সোহেল রানার চাচাত ভাই উপজেলা শ্রমিক দলের বর্তমান কমিটির আহ্ববায়ক এবং জাহিদ হাসানের বাবা মৃত আব্দুল হামিদ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি, বনওয়ারী নগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত উপজেলা যুবদলের আহ্ববায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। জাহিদ ছাত্রলীগের কোন ইউনিটের সদস্যও ছিলোনা। ত্যাগী কর্মীদের কোন সুযোগ না দিয়ে জেলা ছাত্রলীগ অর্থের বিনিময়ে বিএনপি পরিবারের সন্তানদের কাছে কমিটি বিক্রি করেছে। আমরা এই বিতর্কিত কমিটি বাতিল চাই।

ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বকুল, মৃত আব্দুল হামিদের বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার মৃত্যুতে উপজেলা বিএনপি শোকসভাও করেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঞ্চিত এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, কমিটি দেয়ার নাম করে জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ আলী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব বিশ্বাসের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে টাকা নিয়েছেন। এখন শুনছি সব প্রার্থীদের কাছ থেকেই তারা টাকা নিয়ে কমিটি বাণিজ্য করেছেন। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগ পরিবারের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে চিহ্নিত বিএনপি পরিবার থেকে সভাপতি-সম্পাদক মনোনীত করেছেন। 

এদিকে, বিএনপি পরিবারের সন্তানদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও ফরিদপুর পৌর মেয়র খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ বলেন, জেলা ছাত্রলীগ নেতাদের বার বার বলেছিলাম সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে। তারা তা না শুনে বিএনপি পরিবারের অছাত্র ব্যবসায়ীদের সভাপতি ও সম্পাদক বানিয়েছে। কমিটি বাণিজ্য করতেই প্রেস রিলিজ নির্ভর কমিটি দেয়া হচ্ছে। এটি আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। 

তবে, অর্থের বিনিময়ে কমিটি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। সদ্য মনোনীত নেতারা বিএনপি পরিবারের নয় বলেও দাবি করেছেন তারা। জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ আলী বলেন, কমিটি গঠনে কোন প্রকার টাকার লেনদেন হয়নি। কে কোথায় টাকা নিয়েছে আমার জানা নেই। পদ না পেয়ে অনেকে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। উপজেলা সভাপতি মনোনয়ন পাওয়া সোহেল রানা এর আগেও ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন। জাহিদ হাসানকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশে পদ দেয়া হয়েছে।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, সদ্য মনোনীত নেতারা বিএনপি পরিবারের নয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের মতামতের ভিত্তিতেই তাদের পদ দেয়া হয়েছে। অর্থ নেয়ার প্রমাণ দিতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলেও জানান তিনি।