অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

অবৈধ বালু উত্তোলন: তৈরি করছে পরিবেশগত সংকট

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:০৮ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার   আপডেট: ০২:৪২ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার

বালু সব দেশের শারীরিক এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জুলিয়ান লেল্যান্ড বলেন, "বালু সম্পদ হিসেবে এত মূল্যবান যে অনেক মানুষ তারজন্য খুনও হয়েছে। 

কংক্রিট উৎপাদনে বালু অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার কারণেই তার এমন মূল্য। তবে সব বালু সিমেন্টের সাথে মজবুতভাবে কাজ করে না। তারজন্য খোঁজা হয় নদীর খাঁজকাটা ও তীক্ষ্ণ বালু। 

স্থায়িত্ব কৌশলবিদ মধুমিতা অর্ধনারী জানান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে ভূমি সম্প্রসারণ প্রকল্পে নদীর বালু ব্যবহার করা হয়। দেশটি বার্ষিক ২১০ মিলিয়ন টনেরও বেশি বালু কেনে। বিশ্বের বৃহত্তম বালু আমদানিকারকও সিঙ্গাপুরই। ক্ষুদ্র দেশ সিঙ্গাপুর গত 60 বছরে তাদের ভূখণ্ড 22 শতাংশ বাড়িয়েছে এই বালুর মাধ্যমেই।  এই সম্প্রসারণ, এবং এর সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে "বিপুল পরিমাণ" বালুর মাধ্যমেই। 

আর নদীর বালুর একটি মূল্যবান উৎস হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বালু উত্তোলন একটি বড় ব্যবসা এবং যদিও এটি নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা তবে  বালু ব্যবসায়ীরা প্রায়ই তাদের কার্যক্রম আইনগতভাবে ইজারা দেওয়া এলাকার বাইরে প্রসারিত করে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতির একজন অ্যাটর্নি সৈয়দা রিসওয়ানি হাসান অনুমান করেন যে বাজারে বাংলাদেশী বালুর ৭০ শতাংশই অবৈধভাবে খনন করা হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বালুতে ‘রক্তের দাগ’ রয়েছে। অবৈধ বালু উৎপাদন নদীর ইকোসিস্টেম নষ্ট করছে। 

দেশের মানুষের প্রোটিনের বড় সরবরাহ আসে নদীর মাছ থেকেই। আর এক তৃতীয়াংশ পর্যটনের সঙ্গে নদী জড়িত। 

রিসওয়ানি হাসান বলেন, নদী ভাঙন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকা থেকে ২ থেকে ৫ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি হবে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিবাসন।

কেন অবৈধ বালু উত্তোলন নজরদারি করা হয়না সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশাসন তার জন্য অনেকাংশে দায়ী। অনেক কর্মকর্ত ঘুষ নিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করতে দেন। এছাড়া ক্রমবর্ধমনা চাহিদার কারণেও এর দৈরত্ম বাড়ছে। 

বালুর অতৃপ্ত চাহিদাকে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক বলে মনে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেসব দেশ নিজেদের পরিবেশ নষ্ট করতে চায় না তারা বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করবে কারণ এখানে আইনের প্রয়োগ খুবই দুর্বল। "এবং যদি বালুর চাহিদা বেশি থাকে, তাহলে দেশের সব নদীর বাস্তুতন্ত্র কেবল ভেঙে পড়বে।"

বালু উত্তোলনের ভবিষ্যৎ আরও খারাপ হতে পারে। কেননা বালু ব্যবসা নজরদারি করতে পৃথক কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা নেই।

অনেক দেশ প্রায়ই তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকারীদের ব্যবহার করে বালুর ব্যবসা করে এবং তার নথি ঘনিষ্ঠ পক্ষের দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। সাংবাদিক ও গবেষকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে বালু খনির ব্যবসায়ীরা হয়রানি, ভয়ভীতি এমনকি শারীরিক নির্যাতন করে। 

সৈয়দা রিসওয়ানি হাসান আরও বলেন "স্থানীয় মানুষ এখন বালু খনির বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে কারণ তারা দেখেছে যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিগ্রস্ত আমলারা অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে চুপ করে আছে।"

বিজ্ঞানীরা এবং গবেষকরা বর্তমানে বালু ব্যবসা ট্র্যাক করার জন্য উপগ্রহ চিত্র এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রতিশ্রুতিশীল কৌশলগুলি বিকাশ করছেন, কিন্তু তহবিলের অভাবে এই ধরণের গবেষণার ভবিষ্যত হুমকির মুখে রয়েছে।

উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকায় অবৈধ বালু খনন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নদীর কাছে বসবাসকারী মানুষ এবং যারা নদীর উপর নির্ভর করে তাদের জন্য একটি বিধ্বংসী ফলাফল অপেক্ষা বলে মন্তব্য করেন তিনি।