অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

প্রাণ ফিরেছে কুমিল্লার শিক্ষাঙ্গনে

রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ০৪:৩৪ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ রোববার   আপডেট: ০৪:৪১ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ রোববার

দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত কুমিল্লা শিক্ষাঙ্গনগুলো। আজ যেন উৎসবের আমেজ। কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের তো ক্লাসে ফেরানো হচ্ছে রীতিমত ফুল উপহার দিয়ে। এভাবেই ৫৪৩ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাকে স্বাগত জানাচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্কপরা, হাতধোয়াসহ সামাজিক দূরত্ব মেনে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করার বিষয়টি তদারকি করছেন কুমিল্লায় জেলা প্রশাসন৷

চলমান করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতির অবসান ঘটেছে আজ। অপেক্ষার পালা শেষে প্রাণহীন শিক্ষাঙ্গনে আবার প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে। নতুন করে রং করা হয়েছে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। 

নতুন খাতা-কলম বই পাশাপাশি নতুন স্কুল ও কলেজ ড্রেস পড়ে আসছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য হাতধোয়ার সঠিক নিয়ম, মাস্ক পরার নিয়ম, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারও টাঙানো হয়েছে স্কুল-কলেজে।যে সব শিক্ষার্থী ভূলবশত মাস্ক পড়ে আসেনি, স্কুল-কলেজ পক্ষ থেকে তাদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে,কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড স্কুল এন্ড কলেজ,ইশ্বর পাঠশালা পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানান কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ কামরুল ইসলাম,কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন,জেল শিক্ষা অফিসার মো আব্দুল মজিদআদর্শ সদর উপজেলার ইউএনও জাকিয়া আফরিনসহ প্রমুখ।

দীর্ঘদিন পর সশরীরে ক্লাসে বসার আনন্দ দেখা যায় শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে। কর্তৃপক্ষও সমউচ্ছ্বাসে তাদের বরণ করছে।স্বাস্থ্যবিধি মেনে একে একে সবাইকে ঢোকানো হয়েছে শ্রেণিকক্ষে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে দেড় বছর পর স্কুল খুলাতে সহপাঠীদের সঙ্গে আগের সেই হইহুল্লোড় নেই। সামনের বেঞ্চ ধরা নিয়ে নেই হুড়োহুড়িও।শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে ছাত্রীরা দূরত্ব বজায় রেখে তারা স্কুলে প্রবেশ করছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে একই সঙ্গে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়ার শঙ্কায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও করেছেন একাধিক অভিভাবক।

সরেজমিনের ঘুরে দেখা যায়,কুমিল্লার নগরীর নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা জিলা স্কুল, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজ, বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লা মডার্ন স্কুল,কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লা হাই স্কুল, শাকতলা উচ্চ বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর সরকারি বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

কুমিল্লা জিলা স্কুলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম মজুমদার বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা অনলাইনে ক্লাস করেছি। কিন্তু সেটি তেমন প্রাণবন্ত ছিল না। বিদ্যালয়ে এসে প্রিয় শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাস করতে পেরে যেন খুব ভালো লাগছে। এতদিন পড়াশোনা বাইরে ছিলাম,এখন থেকে পুরাতন রুটি আবার শুরু করছি।সবমিলে অনেল ভালো লাগছে।

নবার ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণি শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফৌরদৌস,আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করছি,সত্যি আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে,এতগুলোদিন বাসা বন্দি ছিলাম,শুধু অপেক্ষা করতাম কবে স্কুল খুলবে।প্রিয় শিক্ষক ও সহপাঠীদের সাথে দেখা হলো আজ। বন্ধুদের নিয়ে ক্লাস করায় খুব আনন্দ লাগছে। আশা করি আমরা এভাবে পড়ালেখা করতে পারবো।

কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকা রাশেদা আক্তার বলেন,শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত খোঁজ নিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনা মতে আজ থেকে পাঠদান শুরু করা হবে। আমরা চারটি শিফে ভাগ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি বিষয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। স্কুলের নিজ উদ্যোগে ২০০০ মাস্ক ব্যবস্থা করেছি। বাচ্ছারা  ও ক্লাস করতে পেরে খুবই খুশি।

কুমিল্লা জেলা শিক্ষা অফিসার মো আব্দুল মজিদ বলেন রোকসানা বেগম জানান, ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আজ আমরা জেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করেছি।শিক্ষার্থী শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস পরিচালনা করার জন্য আমরা সার্বিক চেষ্টা করছি। আমাদের বিশেষ টিম সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর রাখছেন।

উল্লেখ্য কুমিল্লায় জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ২,১০৬ টি,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মোট ৬০৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৭৯, মাদ্রাসা ৩৭৯, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৯৯টি,স্কুল এন্ড কলেজ ৩৬ টি।