অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

৮০ দেশের জাতীয় সংগীত প্রিয়াংশুর কণ্ঠে, গিনেস বুকে নামের অপেক্ষা

কমল দাশ, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৬:৫৬ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার   আপডেট: ০৭:৩৭ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

স্কুল বন্ধ। করোনার কারণে বাসায় সময় যেনো কাটতেই চায় না। এই বিপর্যস্ত সময়কে কাজে লাগিয়ে একক প্রচেষ্টায় এক অন্যরকম উদাহরণ সৃষ্টি করেছে চট্টগ্রামের কিশোর প্রিয়াংশু। সে গাইতে শিখেছে বিশ্বের ৮০টি দেশের জাতীয় সঙ্গীত।

পুরো নাম প্রিয়াংশু রায় চৌধুরী। চট্টগ্রামের পাথরঘাটা প্রিয়াংশুর ঠিকানা। সে পড়ছে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে। 

শিশু কিশোররা ঘরে বসে ইউটিউবে সময় কাটাচ্ছে এখন। প্রিয়াংশুও কাটিয়েছে। কিন্তু তার সে কাটানো আর দশটি ছেলে-মেয়র মতো যে ছিলো না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্রেফ ইউটিউব দেখে দেখে এরই মধ্যে সে রপ্ত করে নিয়েছে বিশ্বের ৮০টি দেশের জাতীয় সংগীত।এখন তার এই কৃতিত্ব গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে তুলে আনার অপেক্ষা। 

কীভাবে সম্ভব হলো? সে কথা জানতে চাইলে প্রিয়াংশুর উত্তর, ‘গান গাওয়া, গান  শোনা আমার শখ। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, আধুনিক বাংলা গান সবই ভালো লাগে। আর ভালো লাগে ক্রিকেট। খেলা শুরুর আগে ক্রিকেটাররা যখন মাঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করেন, তখন গায়ে কাঁটা  দেয়। ভাবলাম স্কুল বন্ধ এ সময় নানা  দেশের জাতীয় সংগীত শিখে নিলে  কেমন হয়? আর যেই ভাবা সেই কাজ। ব্যস শিখে ফেললাম।"

শুরুর দিকে বিষয়টা স্রেফ শখের বশে শেখাই ছিলো প্রিয়াাংশুর জন্য। সেই শখ থেকে প্রথমেই শিখে ফেললো অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের জাতীয় সংগীত। এরপর বিশ্ব ক্রিকেটের অন্য প্রধান দলগুলোর জাতীয় সংগীত শিখলো। 

প্রিয়াংশু জানালো এত কিছু মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতই তার কাছে সেরা লেগেছে। তবে বেশ ভালো লেগেছে নিউজিল্যান্ডের জাতীয় সংগীত। 

এরপর এক পর্যায়ে তার মাথায় আসে গিনেস ওয়ার্ল্ড  রেকর্ডসে নাম ওঠানোর ভাবনা। 

গুগল সার্চ করে খোঁজ পায় কানাডার শিশুশিল্পী কেপ্রি এভেরিটের। জানলো, কেপ্রি এ পর্যন্ত ৭৬টি  দেশের জাতীয় সংগীত  গেয়ে বিশ্ব  রেকর্ড করেছে। ২০১৫  থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ওইসব দেশে গিয়ে সে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেও এসেছে।  

কেপ্রির কথা জানার পর প্রিয়াাংশুর এই রেকর্ড ভাঙ্গার প্রত্যাশা জাগে। শুরু হয় তার জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার একক প্রচেষ্টা। ইউটিউবে তো সবই আছে। একটা একটা করে শিখতে থাকে। একে একে ৮০টি  দেশের জাতীয় সংগীত শিখে  নেয়।

"পাঁচ মাসের মধ্যেই জাতীয় সংগীতগুলো আমার আয়ত্তে চলে আসে," বললো প্রিয়াংশু। 

কথার ফাঁকে বেশ কয়েকটি জাতীয় সংগীত  গেয়েও  শোনাল  সে। ‘আমার  সোনার বাংলা’ দিয়ে শুরু করে একে একে সে শোনাল ভারত, নেপাল, ভুটান, আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, ফ্রান্স, আমেরিকা, কানাডা, শ্রীলঙ্কা, ও নেদারল্যান্ডের জাতীয় সংগীত।

পড়াশোনায়ও বেশ ভালো প্রিয়াংশু। বিজ্ঞানের জটিল অথচ আনন্দদায়ক বিষয় নিয়ে আগ্রহ তার। প্রাণিবিজ্ঞানের নানা কঠিন বিষয় পড়তে তার ভালো লাগে। অবসর কাটে গান, তবলা ও ইউকেলেলে শেখার মধ্য দিয়ে। গল্পের বই ও পত্রিকা পড়া তার নিত্যদিনের অভ্যাস। তার ইচ্ছে বড় হয়ে মানুষের কল্যাণে কিছু করা। তার কাছে ধর্ম কোনো বড় বিষয় নয়, মানব ধর্মই আসল। 

বাবা পলাশ রায়  চৌধুরী কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন  কোম্পানির ব্যবস্থাপক। মা  সোমা দত্ত গৃহিণী। প্রিয়াংশুর একটি ছোট বোন রয়েছে।

কথা হয় প্রিয়াংশুর বাবা-মার সঙ্গেও। তারা বললেন, প্রথম দিকে ব্যাপারটা বাসার কাউকে জানায়নি প্রিয়াংশু। 

মা বললেন, "প্রায়ই দেখতাম ট্যাবে দেখে দেখে কিছু একটা করছে। জানতে চাইলে এড়িয়ে যেত। পরে সে নিজেই জানালো তার স্বপ্নের কথা।"

"গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে নাম উঠুক বা না উঠুক, ছেলে  যে আগ্রহ নিয়ে একটা কিছু করছে, দেশের নাম ভিনদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, এতেই আমরা খুশি" বলেন বাবা। 

আর এখন যদি গিনেস বুকে নাম উঠে বাবা-মা হিসাবে সেটা হবে গর্বের ও আনন্দের, বলছিলেন তারা। তবে সেটা যদি হয়, কেবল বাবা-মায়েরই নয়, আনন্দ বা গর্ব হবে দেশের সকলের। 

প্রিয়াংশুর এই প্রচেষ্টা বিশ্ব স্বীকৃতি পাক এখন এটাই হোক এখন আমাদের চাওয়া।