অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মৃত্যুর পর কি হবে আগেই জানলেন ব্রিটিশ রানী

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৯ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার   আপডেট: ০১:২৪ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরের দিনগুলোতে কী কী করা হবে তার জন্য পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। যার কোডনাম ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’। সে পরিকল্পনা রানী এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিতে গৃহিতও হয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে একজন বেসামরিক কর্মকর্তা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে জানাবেন ‘লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন’ অর্থাৎ রানী মারা গেছেন। তারপর প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের একটি নিউজফ্ল্যাশের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর ঘোষণা দেয়া হবে। 

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যাওয়ার পর কী কী করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘পলিটিকো’র হাতে আসে। ব্রিটিশ রাজপরিবার ও সরকারের গৃহিত পদক্ষেপগুলো প্রচারের অনুমতি দেয়ার পর ‘পলিটিকো’তে সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

বর্তমানে ৯৫ বছর বয়সী রানীর শারিরীক অবস্থায় ভালো। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। তারপরও ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি সে পরিকল্পনা হালনাগাদ করে সেখানে করোনাকালীন করণীয়ও সংযুক্ত করা হয়েছে। 

পলিটিকোর হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, রানী মারা গেলে ব্রিটিশ প্রশাসনের প্রতিটি জায়গা বেশ তৎপর হয়ে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইতিহাসে সবচেয়ে জোরদার করতে হবে কারণ দেশটির সড়কে তখন নজিরবিহীন ভীড় লক্ষ্য করা যেতে পারে এবং ধারণা করা হচ্ছে তখন পুরো লন্ডন মানুষে পরিপূর্ণ থাকবে। 

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার সদস্যরা রানীর কফিন দেখতে যাবেন সেইন্ট প্যানক্রাস স্টেশনে। আর শেষকৃত্যের আগে পরবর্তী রাজা চার্লস পুরো যুক্তরাজ্য সফর করবেন। 

রানীর মৃত্যুর দশদিন পর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এসময় সব জায়গায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। আর সরকারের যোগাযোগ প্রধান কর্তৃক অনুমোদন না করা হলে হোয়াইট হলের সব টুইটে রিটুইট নিষিদ্ধ করা হবে।

দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ ও চার্লসের সিংহাসনের বসার ‘অপারেশন স্প্রিং টাইড’ তুলে ধরা হলো-

ডি-ডে

রানীর মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বেশ কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ও কর্মকর্তাকে অবহিত করে একটি "কল ক্যাসকেড" অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীকে রানীর একান্ত সচিব দ্বারা অবহিত করা হবে, যিনি প্রিভি কাউন্সিল অফিসকেও বলবেন।

অভ্যন্তরীণভাবে, দিনটিকে "ডি-ডে" হিসাবে উল্লেখ করা হবে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত প্রতিটি পরবর্তী দিনকে "ডি+১", "ডি+২" দিয়ে উল্লেখ করা হবে।

জনসাধারণের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি "সরকারী বিজ্ঞপ্তি" জারি করবে রাজপরিবার ।

মন্ত্রীদের কাছে সংবাদটি কীভাবে প্রকাশ করা যায় তা তুলে ধরা হবে সে বিষয়ের নথিতে জানা যায়, তাদেরকে জানানো হবে "আমরা মহামান্য রানীর মৃত্যুর খবর পেয়েছি।" 

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছ থেকে মন্ত্রীরা এবং সিনিয়র সিভিল সার্ভেন্টরাও একটি ইমেল পাবেন, যার একটি খসড়ায় লেখা আছে: "প্রিয় সহকর্মীরা, দুঃখের সাথে আমি আপনাকে মহামান্য রাণীর মৃত্যুর খবর জানাচ্ছি।"

এই ইমেলটি পাওয়ার পর, হোয়াইটহল জুড়ে পতাকা অর্ধনমিত করা হবে। চেষ্টা থাকবে ১০ মিনিটের মধ্যে সেটি করার। 

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট এবং স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইনসভা তখন স্থগিত করা হবে। 

বাকিংহাম প্যালেস

এছাড়া সামাজিক মাধ্যমের বিষয়েও কিছু পদক্ষেপ নেয়া আছে। রাজপরিবারের ওয়েবসাইট রানীর মৃত্যু নিশ্চিত করে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়ে একটি কালো হোল্ডিং পেজে পরিবর্তিত হবে। যুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটের শীর্ষে একটি কালো ব্যানার প্রদর্শন করা হবে। 

সমস্ত সরকারি বিভাগীয় সামাজিক মিডিয়া পেইজগুলোতে একটি কালো ব্যানার দেখাবে এবং তাদের প্রোফাইল ছবি তাদের বিভাগীয় ক্রেস্টে পরিবর্তন করবে। অ-জরুরী বিষয়বস্তু তখন প্রকাশ করা হবে না। 

রাজপরিবার রানীর শেষকৃত্যের পরিকল্পনা ঘোষণা করবে, যা তার মৃত্যুর ১০ দিন পরে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রথম সদস্য হিসেবে বক্তব্য দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর কথা না বলা পর্যন্ত সরকারের অন্য সব সদস্যদের মন্তব্য না করার নির্দেশ দেওয়া হবে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সব স্যালুট স্টেশনে বন্দুক দিয়ে স্যালুট দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। জাতীয়ভাবে এক মিনিট নীরবতার ঘোষণা দেয়া হবে।

পরবর্তী রাজা চার্লস

প্রধানমন্ত্রী তখন নতুন রাজার সাথে দেখা করবেন এবং সন্ধ্যা ৬টায় রাজা চার্লস জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেবেন। 

এরপর লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে স্মৃতিচারণের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বল্পসংখ্যক সিনিয়র মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। পলিটিকো কর্তৃক দেখা অফিসিয়াল নথি অনুসারে, অনুষ্ঠানটি গণমাধ্যমে প্রচার করা হবে। 

ডি-ডে+১ 

রানীর মৃত্যুর পরের দিন সকাল ১০ টায় সিনিয়র সরকারি ব্যক্তিত্বরা সেন্ট জেমস প্যালেসে অ্যাকসেসন কাউন্সিলে একত্রিহ হবেন এবং সেখানে চার্লসকে নতুন সার্বভৌম রাজা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হবে। 

প্রধানমন্ত্রী এবং সিনিয়র মন্ত্রিসহ কয়েকশ’ প্রিভি কাউন্সিলরদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হবে। যেখানে সবাই লাউঞ্জ স্যুটের সাথে কালো টাই পরবেন। 

চার্লসকে রাজা হিসাবে নিশ্চিত করে লন্ডন শহরের সেন্ট জেমস প্যালেস এবং রয়েল এক্সচেঞ্জে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।

শোক বার্তায় সম্মত হওয়ার জন্য সংসদ বৈঠক করবে। অন্য সব সংসদীয় কাজ ১০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। সংসদ সদস্যরা হাউস অব কমন্সে শ্রদ্ধা জানাবেন।

বিকাল সাড়ে ৩ টায়, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা নতুন রাজার সাথে সমাবেশ করবেন। মন্ত্রীদের সঙ্গে তাদের সঙ্গী উপস্থিত হতে পারবেন না। 

ডি-ডে+২

সেদিন রানী কফিন বাকিংহাম প্যালেসে ফিরিয়ে আনা হবে। 

যদি রানী পূর্ব ইংল্যান্ডের নরফোকের তার বাসভবন স্যান্ড্রিংহামে মারা যান, তাহলে তার মরদেহ রাজকীয় ট্রেনে করে লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাস স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রসভার সদস্যরা তার কফিনের কাছে যাবেন। 

স্যান্ড্রিংহাম, নরফোক

আর যদি তিনি স্কটল্যান্ডের বালমোরালে মারা যান তখন অপারেশন ‘ইউনিকর্ন’ সক্রিয় করা হবে। যার অর্থ সম্ভব হলে তার লাশ রাজকীয় ট্রেনে করে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। যদি না হয়, অপারেশন ‘ওভারস্টাডি’ চালু হবে, মানে কফিনটি বিমানে স্থানান্তরিত হবে। কফিনকে স্বাগত জানাতে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

ডি-ডে+৩

সকালে রাজা চার্লস ওয়েস্টমিনিস্টার হলে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। বিকেলে তিনি স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্ট পরিদর্শন এবং এডিনবার্গের সেন্ট গাইলস ক্যাথেড্রাল থেকে যুক্তরাজ্য সফর শুরু করবেন।

ডি-ডে+৪

রাজা চার্লস উত্তর আয়ারল্যান্ডে পৌঁছাবেন, যেখানে তিনি হিলসবারো ক্যাসলে আরেকটি শোক প্রস্তাব পাবেন এবং বেলফাস্টের সেন্ট অ্যান ক্যাথেড্রালে একটি সেবায় অংশ নেবেন।

অপারেশন ‘লায়ন’ এর জন্য একটি মহড়া হবে। সেখানে বাকিংহাম প্যালেস থেকে ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেস পর্যন্ত কফিন নেয়া হবে।

ডি-ডে+৫

লন্ডন হয়ে একটি আনুষ্ঠানিক পথ ধরে বাকিংহাম প্যালেস থেকে কফিন ওয়েস্টমিনস্টার নেয়া হবে। কফিনের আগমনের পর ওয়েস্টমিনিস্টার হলে একটি অনুষ্ঠান থাকবে।

ডি-ডে+৬ থেকে +৯

এ তিনদিন ওয়েস্টমিনিস্টার প্যালেসে থাকবে রানীর কফিন। এ অনুষ্ঠানের কোডন্যাম ‘অপারেশন ফিদার’। কফিনটি ওয়েস্টমিনিস্টার হলের মাঝখানে ক্যাটাফালক নামে পরিচিত একটি বক্সে রাখা হবে যা প্রতিদিন ২৩ ঘন্টা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আর বাকি সময় ভিআইপিদের জন্য আলাদা স্লট করে দেয়া হবে। 

এর মধ্যে রাজ্যের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মিছিলের জন্য একটি মহড়া হবে এবং রাজা চার্লস ওয়েলস পার্লামেন্টে শোকের আরেকটি প্রস্তাব গ্রহণ করতে এবং কার্ডিফের লিয়ানডাফ ক্যাথেড্রালে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়েলসে যাবেন।

এই সময়কালে সরকারি বিভাগগুলি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে। যে বিভাগগুলি সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সেগুলো হল-পররাষ্ট্র দপ্তর, স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং পরিবহন বিভাগ।

ওয়েস্টমিনিস্টার প্যালেস

করোনাভাইরাস মহামারীর সময় রাণীর মৃত্যু হলে কীভাবে দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক প্রবেশের ব্যবস্থা করা যায় তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিবহন বিভাগ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে লন্ডনে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক লোকের সংখ্যা পরিবহন নেটওয়ার্কের জন্য বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং রাজধানীতে উপচে পড়া ভিড়ের কারণ হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী এবং রাণী সম্মত হয়েছেন যে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিনটি "জাতীয় শোকের দিন" হবে। দিনটি কার্যকরভাবে একটি ব্যাংক ছুটির দিন হবে। যদি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন সপ্তাহান্তে বা বিদ্যমান ব্যাঙ্ক ছুটিতে পড়ে তবে অতিরিক্ত ব্যাঙ্ক ছুটি দেওয়া হবে না। 

ডি-ডে+১০

রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে’তে অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরে দেশজুড়ে দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হবে। লন্ডন ও উইন্ডসরে শোকমিছিল হবে।

ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে

উইন্ডসর ক্যাসলে সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে একটি কমিটাল সার্ভিস থাকবে এবং রানীকে দুর্গের রাজা ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে সমাহিত করা হবে।