অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন অতিরিক্ত বেড়ে বা কমে গেলে কী হয়?

মো. বিল্লাল হোসেন

প্রকাশিত: ০৪:৩৪ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার   আপডেট: ০৪:৩৫ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার

টেস্টোস্টেরন নামটির সঙ্গে প্রায় আমরা সবাই পরিচিত। এটিকে মেল সেক্স হরমোন বলা হয়। এই হরমোনটি স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন যা প্রধানত কোলেস্টেরল থেকে সংশ্লেষিত হয়ে তৈরি হয়। টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রধানত পুরুষ জননতন্ত্রের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে থাকে। 

তবে এটি হাড়ের ঘনত্ব ও মুড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এসব কথা সম্পর্কে মোটামুটি সম্যক ধারণা হয়তো সবারই আছে। তবে আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন থাকে যদি টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ পুরুষের দেহে অতিরিক্ত বেশি অথবা কম হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে

এই লেখাটিতে এই প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রথমেই জেনে নেয়া যাক যদি পুরুষদের দেহে টেস্টোস্টেরন এর পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে যায় তাহলে কি ঘটতে পারে।–

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের তথ্য মতে পুরুষের দেহের টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে-

  • শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়, শুক্রাশয় শুকিয়ে যায় ও যৌন অক্ষমতা বেড়ে যায়।
  • হৃদযন্ত্রের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • প্রোস্টেট অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যকৃতের সমস্যা দেখা যায়।
  • পায়ে পানি জমতে পারে ও পা ফুলে যেতে পারে। 
  • শারীরিক ওজন অনেক ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায়।
  • উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়।
  • প্রতিনিয়ত ঘুমের পরিমাণ কমে যায় এবং মাথাব্যথার পরিমাণ বেড়ে যায়। 
  • কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে খাটো হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
  • আচরণগত বিভিন্ন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় যেমন হঠাৎ রেগে যাওয়া বা সবসময় নিশ্চুপ হয়ে থাকা। 
  •  

কারো দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে উপরোক্ত সমস্যাগুলির যেকোনোটি দেখা দিতে পারে। তবে কারো দেহে টেস্টোস্টেরন এর পরিমাণ কমে গেলে কী হতে পারে?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন এর ঘাটতি নিয়ে নানান ধরনের গবেষণা হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষের দেহে অন্ততপক্ষে প্রতিবছর এক থেকে দুই শতাংশ টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমতে থাকে। এভাবে টেস্টোস্টেরন কমতে থাকলে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সেগুলো হলো-

  • দেহত্বকের লোম সংখ্যা কমে যেতে পারে
  • পেশির ঘনত্ব কমে যেতে পারে।
  • অক্ষমতা, ইনফার্টিলিটি কিংবা শুক্রাণু সংখ্যা কমে যাওয়ার মতো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে
  • সবকিছুতেই অমনোযোগী হয়ে ওঠা ও মানসিক অবসাদের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে
  • হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পেয়ে হাড় ভেঙে যাওয়া বা ফ্রাকচার হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। 

সুতরাং, অতিরিক্ত বেশি টেস্টোস্টেরন অথবা খুব কম টেস্টেস্টেরন আমাদের দেহের জন্য উপযোগী নয়। অর্থাৎ, আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় পরিমাণ টেস্টেস্টেরন সংশ্লেষিত হলেই কেবল মাত্র আমরা সুস্থ থাকব। 

সাধারণত বয়স ৩৫ হওয়ার পর থেকে টেস্টোস্টেরন কমতে শুরু করে। তখন মধু, বাঁধাকপি, ডিম, রসুন, আঙুর, কাঠবাদাম, কলা, টক ফল, ডালিম খেলে সে সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে ওঠা যায়। 

লেখক: মো. বিল্লাল হোসেন, শিক্ষার্থী, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।